Tumgik
#তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ
mylordisallah · 9 months
Text
Tumblr media
আল্লাহ, তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ
"তিনিই প্রথম (তাঁর আগে কিছুই নেই) এবং (তাঁর পরে কিছুই নেই), সর্বোত্তম (তাঁর উপরে কিছুই নেই) এবং সবচেয়ে কাছে (কোন কিছুই তাঁর চেয়ে নিকটবর্তী নয়) এবং তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ। পবিত্র কোরআনের সূরা হাদিদ ৩
আল্লাহ তাআলা আদি। অর্থাৎ তার আগে কোন কিছুই ছিল না। তাঁর নিজের কোন শুরু নেই। তিনি সর্বদাই ছিলেন। আর তিনি ‘অন্ত’ এই অর্থে যে, যখন বিশ্ব-জগতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন বাকি থাকবে কেবল তাঁরই সত্তা। তাঁর নিজের কোন শেষ নেই। তিনি সর্বদাই থাকবেন। তিনি ‘ব্যক্ত’। অর্থাৎ তাঁর অস্তিত্ব, তাঁর শক্তি ও তাঁর হেকমতের নিদর্শন বিশ্ব-জগতের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। জগতের প্রতিটি জিনিস সাক্ষ্য দেয়, তিনি আছেন। আর তিনি ‘গুপ্ত’ এই অর্থে যে, তিনি অস্তিমান হওয়া সত্ত্বেও দুনিয়ার এ চোখ দিয়ে তাকে দেখা যায় না। এভাবে তিনি ব্যক্তও এবং গুপ্তও।
তিনিই আদি বা প্রথম; তাঁর পূর্বে কিছু ছিল না। তিনিই অন্ত বা সর্বশেষ; তাঁরপর কিছু থাকবে না। তিনি ব্যক্ত বা প্রকাশমান। অর্থাৎ, তিনি সবার উপর জয়ী, তাঁর উপর কেউ জয়ী নয়। তিনি গুপ্ত বা অপ্রকাশমান। অর্থাৎ, যাবতীয় গোপন খবর একমাত্র তিনিই জানেন। অথবা তিনি মানুষের দৃষ্টি ও জ্ঞানের অন্তরালে। (ফাতহুল ক্বাদীর)।
youtube
আল্লাহ, তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ
Allah, He is the First and He is the Last
0 notes
allahisourrabb · 9 months
Text
Tumblr media
আল্লাহ, তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ
"তিনিই প্রথম (তাঁর আগে কিছুই নেই) এবং (তাঁর পরে কিছুই নেই), সর্বোত্তম (তাঁর উপরে কিছুই নেই) এবং সবচেয়ে কাছে (কোন কিছুই তাঁর চেয়ে নিকটবর্তী নয়) এবং তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ। পবিত্র কোরআনের সূরা হাদিদ ৩
আল্লাহ তাআলা আদি। অর্থাৎ তার আগে কোন কিছুই ছিল না। তাঁর নিজের কোন শুরু নেই। তিনি সর্বদাই ছিলেন। আর তিনি ‘অন্ত’ এই অর্থে যে, যখন বিশ্ব-জগতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন বাকি থাকবে কেবল তাঁরই সত্তা। তাঁর নিজের কোন শেষ নেই। তিনি সর্বদাই থাকবেন। তিনি ‘ব্যক্ত’। অর্থাৎ তাঁর অস্তিত্ব, তাঁর শক্তি ও তাঁর হেকমতের নিদর্শন বিশ্ব-জগতের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। জগতের প্রতিটি জিনিস সাক্ষ্য দেয়, তিনি আছেন। আর তিনি ‘গুপ্ত’ এই অর্থে যে, তিনি অস্তিমান হওয়া সত্ত্বেও দুনিয়ার এ চোখ দিয়ে তাকে দেখা যায় না। এভাবে তিনি ব্যক্তও এবং গুপ্তও।
তিনিই আদি বা প্রথম; তাঁর পূর্বে কিছু ছিল না। তিনিই অন্ত বা সর্বশেষ; তাঁরপর কিছু থাকবে না। তিনি ব্যক্ত বা প্রকাশমান। অর্থাৎ, তিনি সবার উপর জয়ী, তাঁর উপর কেউ জয়ী নয়। তিনি গুপ্ত বা অপ্রকাশমান। অর্থাৎ, যাবতীয় গোপন খবর একমাত্র তিনিই জানেন। অথবা তিনি মানুষের দৃষ্টি ও জ্ঞানের অন্তরালে। (ফাতহুল ক্বাদীর)।
youtube
আল্লাহ, তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ
Allah, He is the First and He is the Last
0 notes
myreligionislam · 9 months
Text
Tumblr media
আল্লাহ, তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ
"তিনিই প্রথম (তাঁর আগে কিছুই নেই) এবং (তাঁর পরে কিছুই নেই), সর্বোত্তম (তাঁর উপরে কিছুই নেই) এবং সবচেয়ে কাছে (কোন কিছুই তাঁর চেয়ে নিকটবর্তী নয়) এবং তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ। পবিত্র কোরআনের সূরা হাদিদ ৩
আল্লাহ তাআলা আদি। অর্থাৎ তার আগে কোন কিছুই ছিল না। তাঁর নিজের কোন শুরু নেই। তিনি সর্বদাই ছিলেন। আর তিনি ‘অন্ত’ এই অর্থে যে, যখন বিশ্ব-জগতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন বাকি থাকবে কেবল তাঁরই সত্তা। তাঁর নিজের কোন শেষ নেই। তিনি সর্বদাই থাকবেন। তিনি ‘ব্যক্ত’। অর্থাৎ তাঁর অস্তিত্ব, তাঁর শক্তি ও তাঁর হেকমতের নিদর্শন বিশ্ব-জগতের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। জগতের প্রতিটি জিনিস সাক্ষ্য দেয়, তিনি আছেন। আর তিনি ‘গুপ্ত’ এই অর্থে যে, তিনি অস্তিমান হওয়া সত্ত্বেও দুনিয়ার এ চোখ দিয়ে তাকে দেখা যায় না। এভাবে তিনি ব্যক্তও এবং গুপ্তও।
তিনিই আদি বা প্রথম; তাঁর পূর্বে কিছু ছিল না। তিনিই অন্ত বা সর্বশেষ; তাঁরপর কিছু থাকবে না। তিনি ব্যক্ত বা প্রকাশমান। অর্থাৎ, তিনি সবার উপর জয়ী, তাঁর উপর কেউ জয়ী নয়। তিনি গুপ্ত বা অপ্রকাশমান। অর্থাৎ, যাবতীয় গোপন খবর একমাত্র তিনিই জানেন। অথবা তিনি মানুষের দৃষ্টি ও জ্ঞানের অন্তরালে। (ফাতহুল ক্বাদীর)।
youtube
আল্লাহ, তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ
Allah, He is the First and He is the Last
0 notes
ilyforallahswt · 9 months
Text
Tumblr media
আল্লাহ, তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ
"তিনিই প্রথম (তাঁর আগে কিছুই নেই) এবং (তাঁর পরে কিছুই নেই), সর্বোত্তম (তাঁর উপরে কিছুই নেই) এবং সবচেয়ে কাছে (কোন কিছুই তাঁর চেয়ে নিকটবর্তী নয়) এবং তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ। পবিত্র কোরআনের সূরা হাদিদ ৩
আল্লাহ তাআলা আদি। অর্থাৎ তার আগে কোন কিছুই ছিল না। তাঁর নিজের কোন শুরু নেই। তিনি সর্বদাই ছিলেন। আর তিনি ‘অন্ত’ এই অর্থে যে, যখন বিশ্ব-জগতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন বাকি থাকবে কেবল তাঁরই সত্তা। তাঁর নিজের কোন শেষ নেই। তিনি সর্বদাই থাকবেন। তিনি ‘ব্যক্ত’। অর্থাৎ তাঁর অস্তিত্ব, তাঁর শক্তি ও তাঁর হেকমতের নিদর্শন বিশ্ব-জগতের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। জগতের প্রতিটি জিনিস সাক্ষ্য দেয়, তিনি আছেন। আর তিনি ‘গুপ্ত’ এই অর্থে যে, তিনি অস্তিমান হওয়া সত্ত্বেও দুনিয়ার এ চোখ দিয়ে তাকে দেখা যায় না। এভাবে তিনি ব্যক্তও এবং গুপ্তও।
তিনিই আদি বা প্রথম; তাঁর পূর্বে কিছু ছিল না। তিনিই অন্ত বা সর্বশেষ; তাঁরপর কিছু থাকবে না। তিনি ব্যক্ত বা প্রকাশমান। অর্থাৎ, তিনি সবার উপর জয়ী, তাঁর উপর কেউ জয়ী নয়। তিনি গুপ্ত বা অপ্রকাশমান। অর্থাৎ, যাবতীয় গোপন খবর একমাত্র তিনিই জানেন। অথবা তিনি মানুষের দৃষ্টি ও জ্ঞানের অন্তরালে। (ফাতহুল ক্বাদীর)।
youtube
আল্লাহ, তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ
Allah, He is the First and He is the Last
0 notes
dasmoyna · 3 months
Text
জেনেনিন কবে পড়েছে শিবরাত্রি
Maha Shivaratri এই দিনটা শিবের ভক্তদের আনন্দের একটা দিন এ দিন পুজো হয় শিবের গোটা দেশ জুড়ে যত তীর্থক্ষেত্র আছে প্রত্যেকটি মন্দিরে আরাধনা করা হয়ে থাকে শিবের কারণ এইদিনটা শিবের জন্মদিন বলে মনে করা হয় এটি শিবপুরাণে প্রোথিত বলে জানা যায় I শিবের সাথে পার্বতীর পুজো করা হয়ে থাকে শিবের পুজোয় অপরাজিতা, ধুতরো, আকন্দ ফুল এবং বেল পাতা ব্যবহার করা হয় উপবাস থাকেন বহু ভক্ত স্নান পর্ব শেষ হলে তবেই প্রসাদ গ্রহণ করা সম্ভব হয় I
Tumblr media
তবে কবে পড়েছে শিবরাত্রি 2024 জেনেনিন ক্লিক করে I
youtube
খিদিরপুরে পূজিত হন রক্তকমলেশ্বর এবং কৃষ্ণচন্দ্রেশ্বর। বৃহৎ অখন্ড কষ্টিপাথরে তৈরি এই দুই শিব লিঙ্গ শুধু ভারতে নয়, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বৃহত্তম। তাঁদের অধিষ্ঠান বিখ্যাত ভূ-কৈলাস মন্দিরে। ১৭৮১ খ্রীঃ কলকাতার ঘোষাল বংশের জমিদার রাজা বাহাদুর জয়নারায়ণ ঘোষাল এই মন্দির স্থাপন করেন। সাধক রামপ্রসাদ সেন একবার এই মন্দির দর্শনে এসেছিলেন। এখানে এসে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনিই প্রথম জায়গাটিকে ‘ভূ-কৈলাস’ বলে অভিহিত করেন। মন্দিরের মাহাত্ম্য জানতে দেখুন জিয়ো বাংলার বিশেষ ভিডিয়ো..
0 notes
24x7newsbengal · 1 year
Link
0 notes
woalidat · 4 years
Text
গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চ বিদ্যালয়ের উৎপত্তি।
“ডক্টর জসীম উদ্দীন আহমেদ রচয়িত”
আজ থেকে ১০০ বছর পূর্বের কথা। আমার তখন জন্ম হয়নি। আমার জন্ম ১৯৩৩ খৃষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। ১৯০৩ থেকে আমার বুঝ-জ্ঞান হওয়ার বয়স পর্যন্ত গৌরীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের স্থাপনার ঘটনাপ্রবাহ আমি স্বচক্ষে দেখিনি। আমার পিতা মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সাহেবের কাছ থেকে শুনেছি। এ সমস্ত ঘটনাবলী কোনদিন লেখা হয়নি, কেবল এলাকার জনসাধারণের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। সে সময়ের যুবক বৃদ্ধ সকলেই পৃথিবী থেকে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছেন। তাদের তিরোধানের সাথে সাথে সে সময়ের কথা ও ঘটনার বিষয়গুলোও বিলীন হয়ে গেছে।
গলিয়ারচর নিবাসী মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদ ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পড়াশুনা শেষ করে ১৯০৩ বা ১৯০৪ সালে গৌরীপুরে ফিরে আসেন। গৌরীপুরে সে সময় উল্লেখযােগ্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। যুবক মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদ সমাজে শিক্ষা বিস্তারের চিন্তা-ভাবনা করেন। প্রথমে তিনি গৌরীপুরের যেখানে বর্তমান উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত, সেখানে কোরআন ও হাদিস শিক্ষার জন্য একটি মক্তব শুরু করেন । তিন বছর তিনি বিনা পারিশ্রমিকে সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পারেন, এলাকার লোকজনের উন্নতির জন্য ইংরেজি শিক্ষা ও সাথে সাথে অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষার প্রয়োজন। তখন তিনি এ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে পরামর্শ ও আলাপ আলোচনা করতে থাকেন। এ সকল বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম ছিলেন গোপচর নিবাসী পাট ব্যবসায়ী ও বিত্তশালী সুবল চন্দ্র সাহা। তিনি মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদকে উৎসাহ দিলেন।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, বর্তমান বিদ্যালয় এলাকায়ই অধর বাবুর একটি ছোট বিদ্যাপীঠ ছিল। এটা অধর বাবুর টোল নামে পরিচিত ছিল । মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদ প্রথমে সেই টোলে ইংরেজি শিক্ষার সূচনা করেন। কিছুদিনের মধ্যে বিত্তশালী সুবল সাহা মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদকে তার একটি পাটের বালি গুদাম ঘর ব্যবহার করতে দেন। এই পাটের গুদামটি পুলের গোড়ায় দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে অবস্থিত ছিল। সে পাটের গুদামটি ১৯৪০ দশক পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। স্কুলের কাজ ক্রমে ক্রমে এলাকার জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাটের গুদাম ঘরটিতে বস্তুত জানালা না থাকার কারণে আলো-বাতাস লাগতো না। এই অসুবিধার কথা মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদ জমিদার সুবল সাহাকে জানান। এবং পৃথকভাবে একটি স্কুল ঘর তৈরি করার জন্য অনুরোধ করেন। এই প্রস্তাবে তিনি রাজি হন এবং একটি লম্বা ছনের ঘর খালের পূর্ব পার্শ্বে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। কম খরচে কাজটি করার জন্য মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদ একটি প্রস্তাব দেন যাতে উদয়পুর (বর্তমানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অধীন) থেকে বাঁশ ও ছনের চালান আনা হয়। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদ পায়ে হেটে ৪০ মাইল দূরে উদয়পুরে যান। তখনকার দিনে নৌকা বা পায়ে হাঁটা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা ছিল না।
বাঁশ ও ছন দিয়ে তৈরি স্কুল ঘরটি রথ ঘর ও কালী মন্দিরের মাঝামাঝি জায়গায় স্থাপিত হয়। ক্রমান্বয়ে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বড় আকারের স্কুল ঘর তৈরি করার চিন্তা-ভাবনা করা হয়। এ সময় জানা গেল ১৯১১ সনে সম্রাট পঞ্চম জর্জ ভারত সফরে আসবেন। সে উপলক্ষে সারা বৃটিশ ভারতে নতুন নতুন প্রকল্পের হিড়িক পড়ে যায় । মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদ জমিদার সুবল সাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কাঠ ও ঢেউ টিন দিয়ে বড় আকারের একটি মাধ্যমিক ইংলিশ স্কুল তৈরির প্রস্তাব দেন, যার নাম হবে গৌরীপুর সুবল মিডল ইংলিশ স্কুল । এতে রাজি হয়ে জমিদার সুবল সাহা মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদকে এই দায়িত্ব অর্পণ করেন।
মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদ স্কুলের কাঠ ক্রয়ের জন্য পায়ে হেঁটে উদয়পুর চলে যান। শুনেছি ৪০ মাইল পথ তিনি একদিনে চলে যেতেন। ফিরে আসার সময় সকালে রওয়ানা দিয়�� রাতের প্রথম প্রহরে বাড়ি এসে পৌছতেন। তখনকার দিন বনজঙ্গলে পরিপূর্ণ উদয়পুরের রাস্তায় চলাফেরা সহজ ছিল না । মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদ প্রায় ছয় ফুট লম্বা, সুস্বাস্থ্যের | অধিকারী, সাহসী ও শক্তিশালী পুরুষ ছিলেন। কাঠ ও ঢেউ টিন দিয়ে স্কুল ঘর তৈরি হলো। স্কুলের | এই স্কুল ঘরটিতে শিক্ষকদের জন্য একটি কমনরুম এবং ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত ছয়টি রুম ছিল। কঠোর পরিশ্রম করে কম খরচে মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদ স্কুল ঘরটি তৈরি করতে সক্ষম হন এবং তখনকার দিনে মোট ১ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। শুনেছি সে সময় এক মণ চালের মূল্য এক টাকার মতো ছিল । ১৯১১ সালে অর্থাৎ যে বছর সম্রাট পঞ্চম জর্জ ভারত সফর করেন সে বছর স্কুলটি “গৌরীপুর সুবল মিডল ইংলিশ স্কুল” নামে খোলা হয়। মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদ এই স্কুলে শিক্ষকতা করতে থাকেন। প্রথম কে হেড মাস্টার ছিলেন আমার জানা নেই, তবে স্কুলের প্রথমাবস্থায় | গৌরীপুর গ্রামের কাদিম আলী মাস্টার সাহেব হেড মাস্টার ছিলেন। পরবর্তীতে বানিয়াপাড়ার রোস্তম আলী মাস্টার সাহেব | হেড মাস্টার ছিলেন অনেক বছর । এই স্কুলটি উচ্চ বিদ্যালয় হওয়ার পরও তিনি অনেক বছর শিক্ষকতা করেন। এই মিডল স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে যাদের কথা সবসময় মনে উদয় হয় তারা হলেন রোস্তম আলী মাস্টার, আমার পিতা মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদ, জিংলাতলীর অশ্বিনী কুমার সাহা, গোপালপুরের কুমুদ চন্দ্র সাহা এবং বিক্রমপুরের হেরম্ব চন্দ্র সাহা। কজনের কথা মনে থাকার আসল কারণ হলো তারা অতও কড়া শিক্ষক ছিলেন । অপরাধের জন্য তারা ছাত্রদের কঠোর শাস্তি দিতেন এবং এ কারণে তাদের ক্লাসে পড়াশুনা বেশ ভাল হতো এবং ছাত্ররা ও খুব মনােযােগী থাকত। এ সকল শিক্ষকের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও নীতির জন্য তাঁরা সকল ছাত্রের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।
মিডল স্কুল চলাকালীন সময় থেকে মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদ ও এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যেমন গৌরীপুর গ্রামের আক্ৰাম আলী সরকার, ভুলিরপাড়ের জমিদার জ্ঞান চন্দ্র সাহা, কাদিম আলী মাস্টার সাহেব এবং স্কুলের অন্য শিক্ষকগণও | স্কুলটিকে উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিণত করার পরিকল্পনা করতে থাকে। এ সময় ১৯৩০ সালের মাঝামাঝি ডা. শামছুল হুদা গৌরীপুরে সরকারি দাতব্য চিকিৎসালয়ে ডাক্তার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ও সমাজ সেবায় উৎসাহী ও উদ্যোগী ছিলেন এবং এক পর্যায়ে স্কুলের কার্যকলাপে জড়িত হন। তাঁকে স্কুল কমিটিতে সেক্রেটারি হিসেবে নেয়া হয় এবং তিনি উৎসাহের সঙ্গে কাজ করতে থাকেন।
তাঁর প্রচেষ্টায় ১৯৪১ সালের প্রথমদিকে স্কুলটিতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত খুলে গৌরীপুর সুবল হাই স্কুল নামে চালু করা হয় । আমার জেঠাত ভাই হাফিজউদ্দিন আহমেদ বি.এসসি. বিটি দেৱীস্থার ফুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তাঁকে ১৯৪১ সালে গৌরীপুর সুবল হাই স্কুলের হেড মাস্টার হিসেবে নিয়ােগ করা হয়। স্কুল ভাল ভাবেই চলতে থাকে। হাফিজউদ্দিন সাহেব কিছুকাল পরে স্কুল থেকে দেবীদ্বার চলে যান এবং পরে তুমি হাই স্কুল পুনঃস্থাপন করেন এবং এর প্রধান শিক্ষক হিসেবে বহুদিন চাকরি করে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি অজিত গুহ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। হাফিজউদ্দিন সাহেব চলে যাওয়ার পরে জিংলাতলীর সিরাজউদ্দিন বি.টি সাহেব হেড মজার পদে নিয়োজিত ছিলেন।
১৯৪৩ সালের বর্ষাকালে আমার পিতা অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু বাড়ি না প্রবাহে মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদের স্মৃতি স্কুলের ইতিহাসে উল্লেখ নেই। যে লোক জীবনের ব্রত হিসেবে গৌরীপুরে শিক্ষার আলো ছড়াতে নিজেকে নিয়োজিত করে ৩৫ বছর | কাল কাজ করেছেন এবং তার আপ্রাণ চেষ্টার ফলস্বরুপ গৌরীপুরে শূণ্য থেকে শুরু করে হয়েছে যার স্মৃতি ক্রমান্বয়ে বিলোপ হয়ে যায়! গৌরীপুর স্কুলে মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদের কোন নাম নেই, কোন স্মৃতি নেই। মহান আল্লাহ মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদের নিয়তের দুয়ার খোলা রাখেন। তাঁর নিজের পরিবারে জ্ঞানের আলোর শিখা উত্তরোত্তর প্রজ্বলিত হতে থাকে। তার ছেলেমেয়ে ও নাতি নাতনীদের মধ্যে বর্তমানে পাঁচজন দেশে ও বিদেশে মাস্টার্স ডিগ্রি করা, ১২ জন গ্র্যাজুয়েট, একজন চার্টার্ড-একাউন্ট্যাট, দু'জন ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে।
গৌরীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কাজ পরবর্তীতে বর্ধিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে সরকাপুরের মোহাম্মদ সিরাজ মিয়ার অর্থায়নে স্কুলটি বেশ বাড়ানো হয় এবং আর্থিক সাহায্যের জন্য সিরাজ মিয়া সাহেবের পিতা আফতাব নামের সাথে উল্লেখ করে স্কুলের নাম গৌরীপুর সুবল-আফতাব হাই স্কুল করা হয়। আর একজনের অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য, তিনি হলেন মাইথারকান্দির কেরামত আলী মোল্লা সাহেব। তিনি স্কুলের খেলার মাঠের জন্য যতটুকু জানি বেশকিছু জমি দান করেন।
নিরঙ্কুশভাবে বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে গৌরীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য মৌলভী ওয়াজউদ্দিন আহমেদের অবদান প্রচুর ও অমূল্য। তাঁর অবদান বিস্তৃত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়, কারণ তিনিই ছিলেন গৌরীপুর হাই স্কুলের সর্বপ্রথম উদ্যোক্তা। এই স্কুলের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে গৌরীপুর কলেজ, টেকনিক্যাল কলেজ, গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে এই অঞ্চলে শিক্ষার আলোকবর্তিকা প্রজ্বলিত হয়।
1 note · View note
khutbahs · 2 years
Photo
Tumblr media
আল্লাহর সাথে দেখা করার প্রস্তুতি!
তোমার রব্ব কে?  আমার রব্ব একমাত্র আল্লাহ্‌।
রব্ব শব্দের অর্থ হল "পালনকারী, লালনকর্তা, প্রভু, প্রতিপালক, প্রভু, মালিক বা প্রভু হওয়া। দ্বিতীয় প্রধান অর্থ হল যত্ন নেওয়া, লালনপালন করা, টিকিয়ে রাখা এবং জোগান দেওয়া এবং তৃতীয়টি হল লালন-পালন করা। ভাষাগতভাবে, রব হল মালিক (মালিক), কর্তা (আস-সায়্যিদ), যিনি যত্ন নেন তার জন্য ব্যবহৃত একটি শব্দ। এক কথায় রব হলেন তিনি, যিনি প্রত্যেককে তার যোগ্যতা ও উপযুক্ততা বিবেচনা করে যখন যা প্রয়োজন তা দিয়ে ধীরে ধীরে লালন-পালন করে পূর্ণতায় পৌঁছান। অর্থাৎ যখন যার যা প্রয়োজন, চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তখন তাকে প্রয়োজন মতো যিনি ঐ চাহিদা মোতাবেক জিনিস দিতে পারেন তিনি হলেন রব। আল্লাহ আমাদের রব ।  কবর আখিরাতের প্রথম মঞ্জিল। দুনিয়ার জীবন শেষ হওয়ার পর মানুষকে কবরে রাখার পরপরই মুনকার-নকিরের তিনটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে সব মৃতব্যক্তিকে। সেখানের প্রথম প্রশ্নই হবে- মান রাব্বুকা? তোমার রব কে? যে ‘রব’ শব্দ দিয়ে মানুষের কাছ থেকে আল্লাহ স্বীকৃতি নিয়েছেন। কবরে সর্বপ্রথম সে ‘রব’ কে? তাঁর পরিচয় দিতে হবে। যিনি উত্তর দিতে পারবেন। তিনিই হবেন নাজাতপ্রাপ্ত। দুনিয়াতে যারা রব শব্দের কথা স্মরণ রেখে আল্লাহর দেখানো পথে-মতে চলেছেন, তাদের জন্য আখিরাত হবে শান্তিময়। তারাই হবে সফলকাম। আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়ার জিন্দেগিতে তাঁর হুকুম-আহকাম মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আখিরাতের জীবনের সম্বল অর্জন করার তাওফিক দান করুন। কবরে ‘মান রাব্বুকা?’র জবাব দেয়ার মতো আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন। 
https://www.youtube.com/watch?v=xcyo2KfJRdU
https://www.youtube.com/watch?v=vWWRfb_zSs0
https://ms-my.facebook.com/SohozDeen/videos/%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B9-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%AC-/1266548677096560/
https://www.youtube.com/watch?v=Co75J1w51iI
https://www.youtube.com/watch?v=r6lP-M07UbI
https://www.youtube.com/watch?v=lJbSXikB10Y
https://www.youtube.com/watch?v=A7eH9pywcgw
https://www.youtube.com/watch?v=qlr59AShA_4
0 notes
swarupgoswamis-blog · 3 years
Text
*৫১ শক্তিপীঠ কথা *:- (৪র্থ পর্ব- ১৬ থেকে ২০ পর্যন্ত)
১৬)- ভ্রামরী শক্তিপীঠ:- জল্পেশ মন্দিরের নিকট, জল্পেশ, জলপাইগুড়ি, অঙ্গ:- বাম পা , দেবী- ভ্রামরী, ভৈরব- অম্বর/ ঈশ্বর/জল্পেশ।।।
কথা- মন্দির নিয়ে অনেক গল্প আছে। আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে এক লাল কাপড় পরা মহারাজ এসেছিলেন মন্দিরে । তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিশাল জটা ছিল। তিনি দীর্ঘদিন মন্দিরে পূজা ও যজ্ঞ করেন। তিনিই তিনটি মোটা গাছের গুড়ির নিচে মায়ের পাথররুপী বাম পার সন্ধান পান । এরপর দেশ বিদেশ থেকে মন্দিরে সাধুসন্তরা আসতে শুরু করে । সে সময় এখানে আসা ভক্তদের কেউ মন্দিরের একটা ম্যাপ এঁকেছিল। যা আজও ফালাকাটা স্টেশনের দেওয়ালে দেখা যায়। একবার জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তাপস সাধ্য ও দিলীপ চৌধুরী নামে দুই অফিসার মন্দিরে এসেছিলেন । তারা শালবাড়ির লোকেদের মার মহিমার কথা বলেন। এই এলাকার এক প্রবীণ নিরেন রায় একটি দুর্ঘটনায় নির্দোষ হওয়া সত্বেও মামলায় জড়িয়ে যান। মা ভ্রামরী দেবীর কৃপায় তিনি সেই মামলা থেকে মুক্তি পান । তিনি মার নতুন প্রতিমা তৈরি করে পূজা করে ও জোড়া পাঠা বলি দেন।
১৭)- মহাপীঠ কামপীঠ কামাখ্যা শক্তিপীঠ:- গুয়াহাটি স্টেশনের ৭ কিমি পশ্চিমে, কামরূপ কামাখ্যা , নীলাচল পর্বত, অসম। অঙ্গ- মহামুদ্রা যোনি, দেবী- মা কামাখ্যা, ভৈরব- উমানন্দ।।।
কথা- প্রাগজ্যোতিষপুরের(বর্তমান গুয়াহাটির) রাজা নরক শিবের কাছে পাচঁটি বর ছলনার দ্বারা চেয়েছিলেন। শিব এই বর পূরণ করেন। বিষ্ণু নরককে কামাখ্যা দেবীর পূজা করতে শেখান। প্রথম অবস্থায় ভাল শাসক ও ধার্মিক নরক শোণিতপুরের বাণাসুরের প্রভাবে পরে অত্যাচারী হয়ে ওঠে। এরফলে তার নামের শেষে অসুর যুক্ত হয়।
প্রথমে দেবী লক্ষ্মীকে হরণ ও নরকাসুর কামাখ্যা দেবীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। দেবীকে একথা বলাতে দেবী শর্ত রাখেন যে, মোরগ বা কুক্কুট রাত পেরোনোর জানান দেওয়ার আগে যদি নরক নীলাচল পাহাড়ের তলা থেকে মন্দির পর্যন্ত এক রাতের মধ্যে সিঁড়ি নির্মাণ করতে পারেন তবে তিনি বিয়ে করতে রাজী হবেন। নরকাসুর সেইমত সিড়ি নির্মাণ করে রাত পেরোনোর আগে শেষ করার উপক্রম করলেন। কামাখ্যা দেবী তখন একটি মোরগকে চেপে ধরাতে সে ডাক দেয়। নরকও রাত পেরোলো বলে ভেবে কাজ অর্ধেক রাখলেন। পরে আসল কথা জানতে পেরে নরক কুক্কুটটিকে ক্রোধবশত ধাওয়া করে হত্যা করেন। এজন্য দরং জেলায় "কুকুরাকটা" নামে একটি স্থান আছে। অন্যদিকে, অসমাপ্ত সিঁড়িটিকে "মেখেলা-উজোয়া পথ" বলে অভিহিত করা হয়। এরপর বশিষ্ঠ মুনিকে কামাখ্যা মন্দিরে উপাসনা করতে অনুমতি না দেওয়ায় মুনি নরক এবং দেবীকে অভিশাপ দেন যে এই মন্দিরে পূজা করা কারো মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে না। শিবের হস্তক্ষেপে এই অভিশাপ সেই বছর পর্যন্ত সীমিত হয়। এতে নরকাসুর বিষ্ণু, শিব এবং কামাখ্যার অপ্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন।
পৃথিবীর সকল রাজ্য জয় করার পর নরকাসুর স্বর্গ আক্রমণ করেন এবং ইন্দ্র পালাতে বাধ্য হন। এরপর নরক অদিতি দেবীর কুণ্ডলজোড়া চুরি করেন এবং ১৬০০০ নারীকে অপহরণ করে নিয়ে যান। ইন্দ্রসহ সকল দেবতা পার্বতীর কাছে গিয়ে নরকাসুরের বিনাশের জন্য কাকুতি-মিনতি করে। পার্বতী কামাখ্যা সেই কাজ সমাপন করবেন বলে কথা দেন। কর্মের মাধ্যমেই তার পাচঁটি বর বিনষ্ট হয়। নরকাসুরের মৃত্যুর পূর্বে তিনি মাতা কামাখ্যাকে অনুরোধ করেন যে, সকলে যেন তার মৃত্যু রঙিন আলোকোজ্জ্বলভাবে উদ্‌যাপন করে। সেইজন্য এই দিনটি 'নরক চতুর্দশী' হিসেবে (দীপান্বিতার আগের দিনটি) পালন করা হয়।দক্ষিণ ভা��তে এই প্রথা জনপ্রিয় এবং পরের দিন লক্ষ্মীর পূজা বা কামাখ্যার আসল মূল দেবী কালীর পূজা হয়।
১৮)- যোগাদ্যা শক্তিপীঠ:- ক্ষীরগ্রাম, বর্ধমান জেলা, পশ্চিমবঙ্গ,অঙ্গ- ডানপায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি, দেবী- যোগাদ্যা , ভৈরব- ক্ষীরখণ্ডক।।।
কথা- কথিত আছে, ক্ষীরগ্রামের দেবী ৫১ পীঠের এক পীঠ। ক্ষীরগ্রামস্থিত দেবী যোগাদ্যার পূজা কাহিনীর ইতিবৃত্ত উদঘাটনে উঠে আসা গল্পটির বর্ণনায় ৷ শোনা যায় একদা হরিদত্ত নামে এক রাজার সন্নিকট দেবীর আগমনে শুরু হয় এই পূজা ৷ সপ্তাহব্যাপী মহাধুমধামের মধ্য দিয়ে চলে ৷ কিন্তু অত্যাশ্চর্য ঘটনাটি হল পূজা হত নরবলি দিয়ে ৷ রাজা সমস্ত পরিবারের জন্য নিয়ম চালু করেন , বলির নর প্রত্যেক পরিবারের একজন সদস্য প্রতি পূজায় ৷ স্বভাবতই শোকচ্ছায়া নেমে আসে প্রজাবর্গের মধ্যে ৷ নিয়মানুসারে একদিন পূজারী ব্রাহ্মণের পালা পড়ে, শোকগ্রস্ত একপুত্রী ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী ভোররাত্রিতে গ্রাম পরিত্যাগ করার চেষ্টা করে ৷ কিন্তু পথিমধ্যে দেবীর দর্শনে ও আশীর্বাদে তারা গ্রামে প্রত্যাবর্তন করে এবং নরবলির পরিবর্তে শুরু হয় মহিষবলি ৷ দেবী হয়ে ওঠেন জগৎযামিনী মহিষমর্দ্দিনী ।কিন্তু প্রাচীন যোগাদ্যা মূর্তিটি কোনও ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল। বর্ধমানের মহারাজা কীর্তি চন্দ এই গ্রামে যোগাদ্যার একটি মন্দির নির্মাণ করান। এবং সম্ভবত তারই আদেশে হারিয়ে যাওয়া মূর্তিটির অনুকরণে একটি দশভুজা মহিষমর্দিনী মূর্তি তৈরি করেন দাঁইহাটের প্রস্তর শিল্পী নবীনচন্দ্র ভাস্কর। নতুন তৈরি হওয়া মূর্তিটি অবশ্য বছরের অন্যান্য সময়ে ডুবিয়ে রাখা হত ক্ষীরদিঘির জলেই। কেবল ৩১ বৈশাখ তা জল থেকে তুলে এনে সর্বসমক্ষে রাখা হত। এর মধ্যে হঠাৎই ঘটে গেল অলৌকিক এক কাণ্ড। অন্তত গ্রামের মানুষ এই ঘটনাকে অলৌকিক বলেই দাবি করেছেন। তিন বছর আগে, ক্ষীরদিঘি সংস্কারের সময় নতুন মূর্তির সঙ্গেই উঠে এল ‘হারিয়ে যাওয়া’ পুরনো যোগাদ্যা মূর্তিটি। মূর্তি ফেরত পাওয়ার আনন্দে আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের সাহায্যে গ্রামের মানুষ গড়ে তুললেন সম্পূর্ণ আলাদা একটি মন্দির। সেই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হল ফিরে পাওয়া দেবী-মূর্তি। ফলে বহিরাগতরা এখন গ্রামে গেলেই দর্শন পান দেবীর। তবে সংক্রান্তিতে দুই মন্দিরেই চলে দেবীর আরাধনা। ক্ষীরগ্রামে পুরনো যোগাদ্যা মন্দিরে তোরণদ্বারের স্থাপত্য দর্শকদের বিশেষ নজর টানে। জানা গিয়েছে, এই ক্ষীরগ্রামে একটা সময় বেশ কিছু চতুষ্পাঠী ছিল। মিলেছে বহু প্রাচীন পুঁথি। স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাদের দাবি, বেশ কয়েক জন পণ্ডিত এই গ্রামে বিদ্যাচর্চা করতেন। গবেষক যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী জানিয়েছেন, এই জনপদে অন্তত ৪০টি যোগাদ্যা বন্দনা পুঁথি মিলেছে। তবে তার মতে, সবথেকে আগে যোগাদ্যা বন্দনা লিখেছিলেন কবি কৃত্তিবাস। কবির মতে, রামায়ণের কালে মহীরাবণ বধের পরে তারই পূজিতা ভদ্রকালী বা যোগাদ্যাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করেন রামচন্দ্র। কবির লিখিত কাহিনিটি ছিল এ রকম, মহীরাবণ রাম-লক্ষ্মণকে বেঁধে পাতালে নিয়ে গিয়েছেন। সেখানে দেবীর সামনে তাদের বলির ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু হনুমান মাছির রূপ ধরে রাম-লক্ষ্মণের পরিচয় জানিয়ে দেন দেবীকে। দেবী তখন হনুমানকে বুদ্ধি দেন, রামকে বলি দেওয়ার আগে মহীরাবণ যখন দেবীকে প্রণাম করতে বলবেন, রাম যেন তখন তাকে বলেন, তিনি প্রণাম করতে জানেন না। মহীরাবণ হেঁট হয়ে দেবীকে প্রণাম করতে গেলেই খাঁড়া দিয়ে তার মাথা কেটে ফেলতে হবে। এমনটাই করেছিলেন রামচন্দ্র। এ তো গেল কৃত্তিবাসের কথা।
১৯)- কালীক্ষেত্র শক্তিপীঠ:- কালীঘাট মন্দির, কালীঘাট, কলকাতা। অঙ্গ- ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলী বাদে চার আঙুল , দেবী- মা কালিকা, ভৈরব- নকুলেশ্বর।।।
কথা- কালীঘাট একটি বহু প্রাচীন কালীক্ষেত্র। কোনো কোনো গবেষক মনে করেন, "কালীক্ষেত্র" বা "কালীঘাট" কথাটি থেকে "কলকাতা" নামটির উদ্ভব। ধারণা করা হয় প্রায় ২০০০ বছর আগের গ্রীক দার্শনিক টলেমির ভারত বর্ণনাতে যে কালীগ্রামের কথা রয়েছে সেটিই আজকের কালীঘাট। এও জানা যায় যে ১১০০ খ্রীষ্টাব্দে রচিত চণ্ডীমঙ্গলে বর্ণিত ধনপতি সওদাগর তার পুত্র শ্রীমন্তকে নিয়ে সপ্ত ডীঙায় চরে আদিগঙ্গা দিয়ে যাবার সময় এখানে পূজা দিয়েছিলেন । মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর রচিত সেই চণ্ডীমঙ্গলে এও বর্ণিত আছে যে ,
"কালীঘাট এরাইল বেণীর নন্দন,
কালীঘাটে গিয়া ডিঙি দিল দর্শন।"
জনশ্রুতি, আত্মারাম ব্রহ্মচারী নামক এক মাতৃসাধক একদা এখানে কালীর ধ্যান করছিলেন। এরপর একরাতে তিনি দেবীর কন্ঠ শুনতে পান। তাকে বলা হয়, সে যে বেদীতে বসে ধ্যান করছিলেন সেটি ব্রহ্মবেদী( অর্থাৎ একদা ব্রহ্মা সেখানে বসে দেবীর ধ্যান করতেন), আর দেবীর সেই অঙ্গ পাশের কালীন্দি হ্রদে রয়েছে। তাকে এও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, নিলগিরী পর্বতে ব্রহ্মানন্দ গিরী নামক একজন সাধক আছেন, তার কাছে যে কষ্টিপাথরের শিলাস্তম্ভ রয়েছে, তা যেন সেই ব্রহ্মবেদীতে স্থাপন করা হয়। এরপর আত্মারাম নীলগিরী গিয়ে ব্রহ্মানন্দের সাথে দেখা করেন। ধারণা করা হয় কোন দৈববলে সেই ১২ হাত লম্বা আর ২ হাত চওড়া সেই শিলাকে কালীঘাটে আনা হয়েছিল। বলা হয় তখন স্বয়ং দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা সেখানে আবির্ভূত হয়ে সেই শিলাকে মাতৃরূপ দেন আর তা ব্রহ্মবেদীতে স্থাপন করেন। এভাবে দেবীর স্থাপনা হলেও তখনও দেবীর সেই খণ্ডিত চরণ নিখোঁজ, এমতাবস্থায় একরাতে কালীন্দি হ্রদের পাশে সাধনাকালে আত্মারাম ও ব্রহ্মানন্দ হ্রদের ভেতরের একটি স্থান থেকে আলো দেখতে পান। পরদিন ভোরে তারা সেখানে মায়ের চরণাংশ পান। এটি ছিল স্নানযাত্রার দিন, অর্থাৎ জৈষ্ঠ পূর্ণিমার দিন। এদিন আজও প্রথা মেনে বিশেষ পূজা হয়। ১৮০৯ সালে বড়িশার সাবর্ণ জমিদার শিবদাস চৌধুরী, তাঁর পুত্র রামলাল ও ভ্রাতুষ্পুত্র লক্ষ্মীকান্তের উদ্যোগে আদিগঙ্গার তীরে বর্তমান মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে। পরবর্তীকালে মন্দিরের কিছু পোড়ামাটির কাজ নষ্ট হয়ে গেলে সন্তোষ রায়চৌধুরী সেগুলি সংস্কার করেন।বর্তমান এই মন্দিরটি নব্বই ফুট উঁচু। মন্দিরের উপরে রয়েছে ৩ টি কলস , ১ টি ত্রিশূল ও ১ টি ত্রিকোণা ধাতব পতাকা যাতে 'ॐ' লিখিত। এটি নির্মাণ করতে আট বছর সময় লেগেছিল এবং খরচ হয়েছিল ৩০,০০০ টাকা। সামনের নাটমন্দির তৈরি করেন আমদুলের জমিদার কালীনাথ রায়।মন্দির সংলগ্ন জমিটির মোট আয়তন ১ বিঘে ১১ কাঠা ৩ ছটাক; বঙ্গীয় আটচালা স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মূল মন্দিরটির আয়তন অবশ্য মাত্র ৮ কাঠা। গর্ভগৃহটি সুউচ্চ। পরবর্তীতে রাজস্থানী শিল্পীদের দ্বারা এর ছাদ নতুন করে সাজানো হয়েছে। মূল মন্দির সংলগ্ন অনেকগুলি ছোটো ছোটো মন্দিরে রাধাকৃষ্ণ, শিব প্রভৃতি দেবতা পূজিত হন।কালীঘাট মন্দিরের নিকটেই পীঠরক্ষক দেবতা নকুলেশ্বর শিবের মন্দির। ১৮৫৪ সালে তারা সিং নামে জনৈক পাঞ্জাবি ব্যবসায়ী বর্তমান নকুলেশ্বর মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। শিবরাত্রি ও নীলষষ্ঠী উপলক্ষে এই মন্দিরে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। কালীমন্দিরের পশ্চিম দিকে রয়েছে শ্যাম রায়ের মন্দির। ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাওয়ালির জমিদার উদয়নারায়ণ মণ্ডল এই মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। এখানে রামনবমী ও দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৬২ সালে শবদাহের জন্য মন্দিরের অদূরে নির্মিত হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশান। বাংলার বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে এই শ্মশানে। এখানকার শ্মশানকালী পূজা বিখ্যাত।
২০)- প্রয়াগ ললিতা শক্তিপীঠ মন্দির:- প্রয়াগ, সঙ্গমের নিকট, এলাহাবাদ, উত্��রপ্রদেশ, অঙ্গ- হাতের আঙুল, দেবী- ললিতা বা মাধবেশ্বরী, ভৈরব- ভব।।।
কথা- এই স্থানকে এমনিতেও তীর্থরাজ বলা হয় কারন এখানে তিনটি প্রধান নদী গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী মিলিত হয়।মন্দিরের স্থাপত্য অতি সুন্দর তবে এই মন্দিরের এক বিশেষত্ব আছে। এখানে কোন মূর্তি নেই। একটা কাঠের দোলনা আছে। তার ওপরেই দেবীকে কল্পনা করে নেওয়া হয়। এখানে দেবীকে ‘ আলোপী মাতা ’ও বলা হয় কারন দেবী এখানে অদৃশ্য। শঙ্করাচার্য্যর অষ্টাদশ পীঠ স্তোত্র তেও এই শক্তি পীঠের উল্লেখ আছে
পুর্ন লাভের আশায় প্রয়াগে আসা অসংখ্য দর্শনার্থী এই শক্তি পীঠ দর্শন করেন। প্রায় সারা বছরই এখানে ভক্ত দের আনাগোনা লেগে থাকে। নবরাত্রি ও শিব রাত্রি উপলক্ষে এখানে বিশেষ পূজা হয় এবং বহু ভক্তের সমাগম হয়।
(চলবে)
0 notes
mylordisallah · 1 month
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
ঈমান
ঈমান (إِيمَان 'ঈমান', শাব্দিক অর্থ প্রচলিতমতে বিশ্বাস, মতান্তরে স্বীকৃতি) শব্দের আভিধানিক অর্থ স্বীকার করা, স্বীকৃতি দেওয়া, অনুগত হওয়া মতান্তরে দৃঢ় বিশ্বাস করা। এটি কুফর বা অস্বীকার করা বা অবাধ্যতার বিপরীত। ইসলাম ধর্মে ঈমানের অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক।
ঈমান কাকে বলে? উত্তরঃ  ঈমানের সাধারণ অর্থ বিশ্বাস। আর পারিভাষিক অর্থ তিন প্রকার বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত-
১। আততাসদিক বিলকাল্ব- অন্তরে বিশ্বাস করা বা অন্তর দ্বারা সত্যায়ন করা।
২। ওয়াল ইকরার বিললিসান- মৌখিক ভাবে স্বিকৃতি দেয়া।
৩। ওয়াল আমল বিল যাওয়ারেহ- আল্লাহর সকল বিধিবিধান যা তিনি তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি ওহী করেছেন তা কমবেশ না করে মান্য করা বা আমল করা, ইত্যাদি।
ঈমানের মৌলিক ৬ স্তম্ভ
The basic 6 pillars of faith
ঈমান ঠিক না করে জীবনভর নেক আমল করলেও আখেরাতে কোনো লাভ হবে না। জিবরাঈল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে ছদ্মবেশে এসে রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, ঈমান কাকে বলে? জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ঈমানের হাকিকত বা স্বরূপ হলো, তুমি বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহ তায়ালার প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, আসমানি কিতাবগুলোর প্রতি, আল্লাহর নবী-রাসুলদের প্রতি, কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং তকদিরের ভালো-মন্দ সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হওয়ার প্রতি।’ (বোখারি : ৫০)। উল্লিখিত হাদিসটি ‘ঈমানে মুফাসসাল’ এর ভিত্তি। ঈমানে মুফাসসালে ঘোষণা করা হয়, আমি ঈমান আনলাম, ১. আল্লাহ তায়ালার প্রতি, ২. তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, ৩. তাঁর কিতাবগুলোর প্রতি, ৪. তাঁর নবী-রাসুলদের প্রতি, ৫. কেয়ামত দিবসের প্রতি, ৬. ভালো-মন্দ তকদিরের প্রতি
ঈমানের ৩টি মূলনীতি ও ৬টি রুকন।
কবরে তিন প্রশ্ন-পরকালের প্রথম ধাপ হলো কবর। কবরে বান্দাকে তিনটি বিশেষ প্রশ্ন করা হবে। বারা বিন আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কবরে মানুষকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। ��ক. তোমার রব কে? দুই. তোমার দ্বিন কী? তিন. এই লোকটি কে ছিলেন, যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল? কবরবাসী যদি মুমিন হয়, তাহলে এসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে পারবে। আর যদি কাফির হয়, তাহলে বলবে, আফসোস! আমি কিছুই জানি না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৫৩; তিরমিজি, হাদিস : ৩১২০)
ঈমানের উসূল কয়টি ও কি কি?
 ঈমানের উসূল ৩ টি। ১। আল্লাহর মা’আরিফাত বা আল্লাহ সম্পর্কে জানা।
২। দ্বীন ইসলামের মা’আরিফাত বা দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জানা।
৩। আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মা’আরিফাত বা নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে জানা।
ঈমান সমগ্র দ্বীনকে অন্তর্ভুক্ত করে। ঈমান শুধু বিশ্বাসের নাম নয় ; বরং মৌখিক স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার বাস্তব প্রতিফলনকে অপরিহার্য করে দেয়। সুতরাং ঈমানের দুটি অংশ। একটি হলো অন্তরে স্বচ্ছ আকিদা পোষণ। আরেকটি হলো বাহ্যিক তৎপরতায় তার প্রকাশ। এ দুটি পরস্পরের সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত যে কোনো একটির অনুপস্থিতি ঈমানকে বিনষ্ট করে দেয়।
ইমান আরবি শব্দ। আরবি ‘আমনুন’ শব্দ থেকে এর উৎপত্ত��। শব্দটির মূল অর্থ বিশ্বাস করা, স্বীকৃতি দেওয়া এবং বিশ্বস্ততা বা হৃদয়ের স্থিতি। এ ছাড়া আনুগত্য করা, শান্তি, নিরাপত্তা, অবনত হওয়া এবং আস্থা অর্থেও ইমান শব্দটি ব্যবহৃত হয়। (মুয়জামুল মাকায়িসিল লুগাহ, ১/১৩৩)
বিশ্বাস বা ধর্মবিশ্বাস বোঝাতে পবিত্র কোরআনে ও হাদিসে ইমান শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর বিশ্বাসী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে মুমিন শব্দটি।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘আর কেউ ইমান প্রত্যাখ্যান করলে তার কর্ম বিনষ্ট বা নিষ্ফল হবে এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৫)। আরও এরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। আর তোমাদের মধ্যে রয়েছে কতক কাফির এবং কতক মুমিন। (সুরা তাগাবুন,
ইমান কী? ইমানের মূল পরিচয় একটি হাদিসে সহজভাবে বিবৃত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে একবার হজরত জিবরাইল (সা.) মানুষের বেশে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইমান কী? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর পুস্তকগুলো (আসমানি কিতাব), তাঁর সাক্ষাতে, তাঁর রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং শেষ দিবসে পুনরুত্থান ও তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন (করার নাম ইমান)। (বুখারি, হাদিস: ৫০)
বিভিন্ন ইমামের কাছ থেকে পরিভাষাগতভাবে ইমানের বিভিন্ন আঙ্গিকের সংজ্ঞা পাওয়া যায়। তবে সেসব সংজ্ঞার মূল বক্তব্য কাছাকাছি। ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন, ‘ইমান হচ্ছে অন্তরের সত্যায়ন ও মুখের স্বীকৃতি।’ ইমাম শাফেয়ি, মালেক ও আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-র মতে, ‘অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আমলে বাস্তবায়ন করার নাম ইমান।’
ইমান কী? ইমানের মূল পরিচয় একটি হাদিসে সহজভাবে বিবৃত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে একবার জিবরাইল (সা.) মানুষের বেশে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইমান কী? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর পুস্তকগুলো (আসমানি কিতাব), তাঁর সাক্ষাতে, তাঁর রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং শেষ দিবসে পুনরুত্থান ও তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন (করার নাম ইমান)। (বুখারি, হাদিস: ৫০)
পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াত (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৩৬, ১৭৭ ও ১৮৫; সুরা কামার, আয়াত: ৪৯; সুরা নিসা: ১৩৬) এবং হাদিসের (বুখারি, হাদিস: ১/৯৬-৯৭; মুসলিম, হাদিস আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস, নবি-রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস, তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস।: ১/১৫৭) ভিত্তিতে ইমানের আরকান বা স্তম্ভ মোট ছয়টি
বিভিন্ন ইমামের কাছ থেকে পরিভাষাগতভাবে ইমানের বিভিন্ন আঙ্গিকের সংজ্ঞা পাওয়া যায়। তবে সেসব সংজ্ঞার মূল বক্তব্য কাছাকাছি। ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন, ‘ইমান হচ্ছে অন্তরের সত্যায়ন ও মুখের স্বীকৃতি।’ ইমাম শাফেয়ি, মালেক ও আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-র মতে, ‘অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আমলে বাস্তবায়ন করার নাম ইমান।’ ছয়টি মৌলিক বিশ্বাসের সমষ্টির নাম ইমান। বিষয় ছয়টি হলো: ১. আল্লাহর প্রতি, ২. ফেরেশতাদের প্রতি, ৩. নবী-রাসুলদের প্রতি, ৪. আল্লাহ প্রেরিত কিতাবগুলোর প্রতি, ৫. পরকাল, পুনরুত্থান বা শেষ দিবসের প্রতি এবং ৬. তাকদিরের (ভাগ্য) প্রতি ইমান (বিশ্বাস স্থাপন করা) আনা।
এই ৬ টি বিষয়ের সব কটির ওপর যদি কেউ সমভাবে ইমান না আনে, তবে তাঁর ইমান পূর্ণাঙ্গ হবে না।
নবী-রাসুলদেরটি ছাড়া ইমানের অন্য সব কয়টি রোকন অদৃশ্য। আর নবী-রাসুলগণকেও এই যুগে এখন আর চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং ইমানের সার্বিক বিষয়াবলি গায়েব বা অদৃশ্য। পবিত্র কোরআনে মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা অদৃশ্য বা গায়েবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩) পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইমান বা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে নির্দেশ করা হয়েছে, যাকে আমরা কালিমায়ে শাহাদত নামে চিনি বা জানি।
এ কালিমার প্রথম বিষয় হচ্ছে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো
'সত্য উপাস্য' বা মাবুদ নেই।’ দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ‘আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।’ পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইমান বা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে নির্দেশ করা হয়েছে, যাকে আমরা কালিমায়ে শাহাদত নামে চিনি বা জানি। এ কালিমার প্রথম বিষয় হচ্ছে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো 'সত্য উপাস্য' বা মাবুদ নেই।’ দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ‘আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।’
একজন মুমিন-মুসলমানের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবাদ সম্পদ ইমান। কারণ, ইমানহীন আমল বা কাজ মূল্যহীন বা নিষ্ফল ইমানের বিপরীত হলো কুফর বা শিরক। ইমানের স্তর ও পরিচয় নিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে। ভালো ও নেক কাজে ইমান বাড়ে এবং পাপ ও খারাপ কাজে ইমান কমে। সে কারণে প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের প্রধান দায়িত্ব হলো ইমানের প্রতি যত্নবান হওয়া।
ঈমান কি?
youtube
ঈমান কাকে বলে? ঈমানের পরিচয় কী?
youtube
ঈমান কি, ঈমান কাকে বলে, ঈমানের সংঙ্গা কি
youtube
 ইমানের পরিচয় ও রুকন |
youtube
ঈমান-নিয়ে তাফসীর কুরআন থেকে
https://www.youtube.com/watch?v=SrPpOCelwtQ
যেভাবে আমরা ঈমান হারাই ।
https://www.youtube.com/watch?v=SXi7B1yABPE
 
ঈমানের ৩টি মূলনীতি ও ৬টি রুকন
3 principles and 6 pillars of faith.
0 notes
allahisourrabb · 1 month
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
ঈমান
ঈমান (إِيمَان 'ঈমান', শাব্দিক অর্থ প্রচলিতমতে বিশ্বাস, মতান্তরে স্বীকৃতি) শব্দের আভিধানিক অর্থ স্বীকার করা, স্বীকৃতি দেওয়া, অনুগত হওয়া মতান্তরে দৃঢ় বিশ্বাস করা। এটি কুফর বা অস্বীকার করা বা অবাধ্যতার বিপরীত। ইসলাম ধর্মে ঈমানের অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক।
ঈমান কাকে বলে? উত্তরঃ  ঈমানের সাধারণ অর্থ বিশ্বাস। আর পারিভাষিক অর্থ তিন প্রকার বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত-
১। আততাসদিক বিলকাল্ব- অন্তরে বিশ্বাস করা বা অন্তর দ্বারা সত্যায়ন করা।
২। ওয়াল ইকরার বিললিসান- মৌখিক ভাবে স্বিকৃতি দেয়া।
৩। ওয়াল আমল বিল যাওয়ারেহ- আল্লাহর সকল বিধিবিধান যা তিনি তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি ওহী করেছেন তা কমবেশ না করে মান্য করা বা আমল করা, ইত্যাদি।
ঈমানের মৌলিক ৬ স্তম্ভ
The basic 6 pillars of faith
ঈমান ঠিক না করে জীবনভর নেক আমল করলেও আখেরাতে কোনো লাভ হবে না। জিবরাঈল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে ছদ্মবেশে এসে রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, ঈমান কাকে বলে? জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ঈমানের হাকিকত বা স্বরূপ হলো, তুমি বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহ তায়ালার প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, আসমানি কিতাবগুলোর প্রতি, আল্লাহর নবী-রাসুলদের প্রতি, কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং তকদিরের ভালো-মন্দ সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হওয়ার প্রতি।’ (বোখারি : ৫০)। উল্লিখিত হাদিসটি ‘ঈমানে মুফাসসাল’ এর ভিত্তি। ঈমানে মুফাসসালে ঘোষণা করা হয়, আমি ঈমান আনলাম, ১. আল্লাহ তায়ালার প্রতি, ২. তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, ৩. তাঁর কিতাবগুলোর প্রতি, ৪. তাঁর নবী-রাসুলদের প্রতি, ৫. কেয়ামত দিবসের প্রতি, ৬. ভালো-মন্দ তকদিরের প্রতি
ঈমানের ৩টি মূলনীতি ও ৬টি রুকন।
কবরে তিন প্রশ্ন-পরকালের প্রথম ধাপ হলো কবর। কবরে বান্দাকে তিনটি বিশেষ প্রশ্ন করা হবে। বারা বিন আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কবরে মানুষকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। এক. তোমার রব কে? দুই. তোমার দ্বিন কী? তিন. এই লোকটি কে ছিলেন, যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল? কবরবাসী যদি মুমিন হয়, তাহলে এসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে পারবে। আর যদি কাফির হয়, তাহলে বলবে, আফসোস! আমি কিছুই জানি না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৫৩; তিরমিজি, হাদিস : ৩১২০)
ঈমানে�� উসূল কয়টি ও কি কি?
 ঈমানের উসূল ৩ টি। ১। আল্লাহর মা’আরিফাত বা আল্লাহ সম্পর্কে জানা।
২। দ্বীন ইসলামের মা’আরিফাত বা দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জানা।
৩। আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মা’আরিফাত বা নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে জানা।
ঈমান সমগ্র দ্বীনকে অন্তর্ভুক্ত করে। ঈমান শুধু বিশ্বাসের নাম নয় ; বরং মৌখিক স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার বাস্তব প্রতিফলনকে অপরিহার্য করে দেয়। সুতরাং ঈমানের দুটি অংশ। একটি হলো অন্তরে স্বচ্ছ আকিদা পোষণ। আরেকটি হলো বাহ্যিক তৎপরতায় তার প্রকাশ। এ দুটি পরস্পরের সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত যে কোনো একটির অনুপস্থিতি ঈমানকে বিনষ্ট করে দেয়।
ইমান আরবি শব্দ। আরবি ‘আমনুন’ শব্দ থেকে এর উৎপত্তি। শব্দটির মূল অর্থ বিশ্বাস করা, স্বীকৃতি দেওয়া এবং বিশ্বস্ততা বা হৃদয়ের স্থিতি। এ ছাড়া আনুগত্য করা, শান্তি, নিরাপত্তা, অবনত হওয়া এবং আস্থা অর্থেও ইমান শব্দটি ব্যবহৃত হয়। (মুয়জামুল মাকায়িসিল লুগাহ, ১/১৩৩)
বিশ্বাস বা ধর্মবিশ্বাস বোঝাতে পবিত্র কোরআনে ও হাদিসে ইমান শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর বিশ্বাসী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে মুমিন শব্দটি।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘আর কেউ ইমান প্রত্যাখ্যান করলে তার কর্ম বিনষ্ট বা নিষ্ফল হবে এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৫)। আরও এরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। আর তোমাদের মধ্যে রয়েছে কতক কাফির এবং কতক মুমিন। (সুরা তাগাবুন,
ইমান কী? ইমানের মূল পরিচয় একটি হাদিসে সহজভাবে বিবৃত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে একবার হজরত জিবরাইল (সা.) মানুষের বেশে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইমান কী? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর পুস্তকগুলো (আসমানি কিতাব), তাঁর সাক্ষাতে, তাঁর রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং শেষ দিবসে পুনরুত্থান ও তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন (করার নাম ইমান)। (বুখারি, হাদিস: ৫০)
বিভিন্ন ইমামের কাছ থেকে পরিভাষাগতভাবে ইমানের বিভিন্ন আঙ্গিকের সংজ্ঞা পাওয়া যায়। তবে সেসব সংজ্ঞার মূল বক্তব্য কাছাকাছি। ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন, ‘ইমান হচ্ছে অন্তরের সত্যায়ন ও মুখের স্বীকৃতি।’ ইমাম শাফেয়ি, মালেক ও আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-র মতে, ‘অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আমলে বাস্তবায়ন করার নাম ইমান।’
ইমান কী? ইমানের মূল পরিচয় একটি হাদিসে সহজভাবে বিবৃত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে একবার জিবরাইল (সা.) মানুষের বেশে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইমান কী? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর পুস্তকগুলো (আসমানি কিতাব), তাঁর সাক্ষাতে, তাঁর রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং শেষ দিবসে পুনরুত্থান ও তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন (করার নাম ইমান)। (বুখারি, হাদিস: ৫০)
পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াত (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৩৬, ১৭৭ ও ১৮৫; সুরা কামার, আয়াত: ৪৯; সুরা নিসা: ১৩৬) এবং হাদিসের (বুখারি, হাদিস: ১/৯৬-৯৭; মুসলিম, হাদিস আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস, নবি-রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস, তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস।: ১/১৫৭) ভিত্তিতে ইমানের আরকান বা স্তম্ভ মোট ছয়টি
বিভিন্ন ইমামের কাছ থেকে পরিভাষাগতভাবে ইমানের বিভিন্ন আঙ্গিকের সংজ্ঞা পাওয়া যায়। তবে সেসব সংজ্ঞার মূল বক্তব্য কাছাকাছি। ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন, ‘ইমান হচ্ছে অন্তরের সত্যায়ন ও মুখের স্বীকৃতি।’ ইমাম শাফেয়ি, মালেক ও আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-র মতে, ‘অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আমলে বাস্তবায়ন করার নাম ইমান।’ ছয়টি মৌলিক বিশ্বাসের সমষ্টির নাম ইমান। বিষয় ছয়টি হলো: ১. আল্লাহর প্রতি, ২. ফেরেশতাদের প্রতি, ৩. নবী-রাসুলদের প্রতি, ৪. আল্লাহ প্রেরিত কিতাবগুলোর প্রতি, ৫. পরকাল, পুনরুত্থান বা শেষ দিবসের প্রতি এবং ৬. তাকদিরের (ভাগ্য) প্রতি ইমান (বিশ্বাস স্থাপন করা) আনা।
এই ৬ টি বিষয়ের সব কটির ওপর যদি কেউ সমভাবে ইমান না আনে, তবে তাঁর ইমান পূর্ণাঙ্গ হবে না।
নবী-রাসুলদেরটি ছাড়া ইমানের অন্য সব কয়টি রোকন অদৃশ্য। আর নবী-রাসুলগণকেও এই যুগে এখন আর চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং ইমানের সার্বিক বিষয়াবলি গায়েব বা অদৃশ্য। পবিত্র কোরআনে মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা অদৃশ্য বা গায়েবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩) পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইমান বা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে নির্দেশ করা হয়েছে, যাকে আমরা কালিমায়ে শাহাদত নামে চিনি বা জানি।
এ কালিমার প্রথম বিষয় হচ্ছে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো
'সত্য উপাস্য' বা মাবুদ নেই।’ দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ‘আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।’ পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইমান বা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে নির্দেশ করা হয়েছে, যাকে আমরা কালিমায়ে শাহাদত নামে চিনি বা জানি। এ কালিমার প্রথম বিষয় হচ্ছে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো 'সত্য উপাস্য' বা মাবুদ নেই।’ দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ‘আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।’
একজন মুমিন-মুসলমানের জীবনের সবচেয়ে মূল���যবাদ সম্পদ ইমান। কারণ, ইমানহীন আমল বা কাজ মূল্যহীন বা নিষ্ফল ইমানের বিপরীত হলো কুফর বা শিরক। ইমানের স্তর ও পরিচয় নিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে। ভালো ও নেক কাজে ইমান বাড়ে এবং পাপ ও খারাপ কাজে ইমান কমে। সে কারণে প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের প্রধান দায়িত্ব হলো ইমানের প্রতি যত্নবান হওয়া।
ঈমান কি?
youtube
ঈমান কাকে বলে? ঈমানের পরিচয় কী?
youtube
ঈমান কি, ঈমান কাকে বলে, ঈমানের সংঙ্গা কি
youtube
 ইমানের পরিচয় ও রুকন |
youtube
ঈমান-নিয়ে তাফসীর কুরআন থেকে
https://www.youtube.com/watch?v=SrPpOCelwtQ
যেভাবে আমরা ঈমান হারাই ।
https://www.youtube.com/watch?v=SXi7B1yABPE
 
ঈমানের ৩টি মূলনীতি ও ৬টি রুকন
3 principles and 6 pillars of faith.
0 notes
myreligionislam · 1 month
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
ঈমান
ঈমান (إِيمَان 'ঈমান', শাব্দিক অর্থ প্রচলিতমতে বিশ্বাস, মতান্তরে স্বীকৃতি) শব্দের আভিধানিক অর্থ স্বীকার করা, স্বীকৃতি দেওয়া, অনুগত হওয়া মতান্তরে দৃঢ় বিশ্বাস করা। এটি কুফর বা অস্বীকার করা বা অবাধ্যতার বিপরীত। ইসলাম ধর্মে ঈমানের অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক।
ঈমান কাকে বলে? উত্তরঃ  ঈমানের সাধারণ অর্থ বিশ্বাস। আর পারিভাষিক অর্থ তিন প্রকার বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত-
১। আততাসদিক বিলকাল্ব- অন্তরে বিশ্বাস করা বা অন্তর দ্বারা সত্যায়ন করা।
২। ওয়াল ইকরার বিললিসান- মৌখিক ভাবে স্বিকৃতি দেয়া।
৩। ওয়াল আমল বিল যাওয়ারেহ- আল্লাহর সকল বিধিবিধান যা তিনি তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি ওহী করেছেন তা কমবেশ না করে মান্য করা বা আমল করা, ইত্যাদি।
ঈমানের মৌলিক ৬ স্তম্ভ
The basic 6 pillars of faith
ঈমান ঠিক না করে জীবনভর নেক আমল করলেও আখেরাতে কোনো লাভ হবে না। জিবরাঈল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে ছদ্মবেশে এসে রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, ঈমান কাকে বলে? জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ঈমানের হাকিকত বা স্বরূপ হলো, তুমি বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহ তায়ালার প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, আসমানি কিতাবগুলোর প্রতি, আল্লাহর নবী-রাসুলদের প্রতি, কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং তকদিরের ভালো-মন্দ সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হওয়ার প্রতি।’ (বোখারি : ৫০)। উল্লিখিত হাদিসটি ‘ঈমানে মুফাসসাল’ এর ভিত্তি। ঈমানে মুফাসসালে ঘোষণা করা হয়, আমি ঈমান আনলাম, ১. আল্লাহ তায়ালার প্রতি, ২. তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, ৩. তাঁর কিতাবগুলোর প্রতি, ৪. তাঁর নবী-রাসুলদের প্রতি, ৫. কেয়ামত দিবসের প্রতি, ৬. ভালো-মন্দ তকদিরের প্রতি
ঈমানের ৩টি মূলনীতি ও ৬টি রুকন।
কবরে তিন প্রশ্ন-পরকালের প্রথম ধাপ হলো কবর। কবরে বান্দাকে তিনটি বিশেষ প্রশ্ন করা হবে। বারা বিন আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কবরে মানুষকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। এক. তোমার রব কে? দুই. তোমার দ্বিন কী? তিন. এই লোকটি কে ছিলেন, যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল? কবরবাসী যদি মুমিন হয়, তাহলে এসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে পারবে। আর যদি কাফির হয়, তাহলে বলবে, আফসোস! আমি কিছুই জানি না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৫৩; তিরমিজি, হাদিস : ৩১২০)
ঈমানের উসূল কয়টি ও কি কি?
 ঈমানের উসূল ৩ টি। ১। আল্লাহর মা’আরিফাত বা আল্লাহ সম্পর্কে জানা।
২। দ্বীন ইসলামের মা’আরিফাত বা দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জানা।
৩। আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মা’আরিফাত বা নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে জানা।
ঈমান সমগ্র দ্বীনকে অন্তর্ভুক্ত করে। ঈমান শুধু বিশ্বাসের নাম নয় ; বরং মৌখিক স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার বাস্তব প্রতিফলনকে অপরিহার্য করে দেয়। সুতরাং ঈমানের দুটি অংশ। একটি হলো অন্তরে স্বচ্ছ আকিদা পোষণ। আরেকটি হলো বাহ্যিক তৎপরতায় তার প্রকাশ। এ দুটি পরস্পরের সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত যে কোনো একটির অনুপস্থিতি ঈমানকে বিনষ্ট করে দেয়।
ইমান আরবি শব্দ। আরবি ‘আমনুন’ শব্দ থেকে এর উৎপত্তি। শব্দটির মূল অর্থ বিশ্বাস করা, স্বীকৃতি দেওয়া এবং বিশ্বস্ততা বা হৃদয়ের স্থিতি। এ ছাড়া আনুগত্য করা, শান্তি, নিরাপত্তা, অবনত হওয়া এবং আস্থা অর্থেও ইমান শব্দটি ব্যবহৃত হয়। (মুয়জামুল মাকায়িসিল লুগাহ, ১/১৩৩)
বিশ্বাস বা ধর্মবিশ্বাস বোঝাতে পবিত্র কোরআনে ও হাদিসে ইমান শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর বিশ্বাসী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে মুমিন শব্দটি।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘আর কেউ ইমান প্রত্যাখ্যান করলে তার কর্ম বিনষ্ট বা নিষ্ফল হবে এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৫)। আরও এরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। আর তোমাদের মধ্যে রয়েছে কতক কাফির এবং কতক মুমিন। (সুরা তাগাবুন,
ইমান কী? ইমানের মূল পরিচয় একটি হাদিসে সহজভাবে বিবৃত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে একবার হজরত জিবরাইল (সা.) মানুষের বেশে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইমান কী? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর পুস্তকগুলো (আসমানি কিতাব), তাঁর সাক্ষাতে, তাঁর রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং শেষ দিবসে পুনরুত্থান ও তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন (করার নাম ইমান)। (বুখারি, হাদিস: ৫০)
বিভিন্ন ইমামের কাছ থেকে পরিভাষাগতভাবে ইমানের বিভিন্ন আঙ্গিকের সংজ্ঞা পাওয়া যায়। তবে সেসব সংজ্ঞার মূল বক্তব্য কাছাকাছি। ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন, ‘ইমান হচ্ছে অন্তরের সত্যায়ন ও মুখের স্বীকৃতি।’ ইমাম শাফেয়ি, মালেক ও আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-র মতে, ‘অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আমলে বাস্তবায়ন করার নাম ইমান।’
ইমান কী? ইমানের মূল পরিচয় একটি হাদিসে সহজভাবে বিবৃত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে একবার জিবরাইল (সা.) মানুষের বেশে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইমান কী? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর পুস্তকগুলো (আসমানি কিতাব), তাঁর সাক্ষাতে, তাঁর রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং শেষ দিবসে পুনরুত্থান ও তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন (করার নাম ইমান)। (বুখারি, হাদিস: ৫০)
পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াত (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৩৬, ১৭৭ ও ১৮৫; সুরা কামার, আয়াত: ৪৯; সুরা নিসা: ১৩৬) এবং হাদিসের (বুখারি, হাদিস: ১/৯৬-৯৭; মুসলিম, হাদিস আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস, নবি-রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস, তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস।: ১/১৫৭) ভিত্তিতে ইমানের আরকান বা স্তম্ভ মোট ছয়টি
বিভিন্ন ইমামের কাছ থেকে পরিভাষাগতভাবে ইমানের বিভিন্ন আঙ্গিকের সংজ্ঞা পাওয়া যায়। তবে সেসব সংজ্ঞার মূল বক্তব্য কাছাকাছি। ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন, ‘ইমান হচ্ছে অন্তরের সত্যায়ন ও মুখের স্বীকৃতি।’ ইমাম শাফেয়ি, মালেক ও আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-র মতে, ‘অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আমলে বাস্তবায়ন করার নাম ইমান।’ ছয়টি মৌলিক বিশ্বাসের সমষ্টির নাম ইমান। বিষয় ছয়টি হলো: ১. আল্লাহর প্রতি, ২. ফেরেশতাদের প্রতি, ৩. নবী-রাসুলদের প্রতি, ৪. আল্লাহ প্রেরিত কিতাবগুলোর প্রতি, ৫. পরকাল, পুনরুত্থান বা শেষ দিবসের প্রতি এবং ৬. তাকদিরের (ভাগ্য) প্রতি ইমান (বিশ্বাস স্থাপন করা) আনা।
এই ৬ টি বিষয়ের সব কটির ওপর যদি কেউ সমভাবে ইমান না আনে, তবে তাঁর ইমান পূর্ণাঙ্গ হবে না।
নবী-রাসুলদেরটি ছাড়া ইমানের অন্য সব কয়টি রোকন অদৃশ্য। আর নবী-রাসুলগণকেও এই যুগে এখন আর চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং ইমানের সার্বিক বিষয়াবলি গায়েব বা অদৃশ্য। পবিত্র কোরআনে মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা অদৃশ্য বা গায়েবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩) পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইমান বা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে নির্দেশ করা হয়েছে, যাকে আমরা কালিমায়ে শাহাদত নামে চিনি বা জানি।
এ কালিমার প্রথম বিষয় হচ্ছে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো
'সত্য উপাস্য' বা মাবুদ নেই।’ দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ‘আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।’ পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইমান বা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে নির্দেশ করা হয়েছে, যাকে আমরা কালিমায়ে শাহাদত নামে চিনি বা জানি। এ কালিমার প্রথম বিষয় হচ্ছে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো 'সত্য উপাস্য' বা মাবুদ নেই।’ দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ‘আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।’
একজন মুমিন-মুসলমানের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবাদ সম্পদ ইমান। কারণ, ইমানহীন আমল বা কাজ মূল্যহীন বা নিষ্ফল ইমানের বিপরীত হলো কুফর বা শিরক। ইমানের স্তর ও পরিচয় নিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে। ভালো ও নেক কাজে ইমান বাড়ে এবং পাপ ও খারাপ কাজে ইমান কমে। সে কারণে প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের প্রধান দায়িত্ব হলো ইমানের প্রতি যত্নবান হওয়া।
ঈমান কি?
youtube
ঈমান কাকে বলে? ঈমানের পরিচয় কী?
youtube
ঈমান কি, ঈমান কাকে বলে, ঈমানের সংঙ্গা কি
youtube
 ইমানের পরিচয় ও রুকন |
youtube
ঈমান-নিয়ে তাফসীর কুরআন থেকে
https://www.youtube.com/watch?v=SrPpOCelwtQ
যেভাবে আমরা ঈমান হারাই ।
https://www.youtube.com/watch?v=SXi7B1yABPE
 
ঈমানের ৩টি মূলনীতি ও ৬টি রুকন
3 principles and 6 pillars of faith.
0 notes
ilyforallahswt · 1 month
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
ঈমান
ঈমান (إِيمَان 'ঈমান', শাব্দিক অর্থ প্রচলিতমতে বিশ্বাস, মতান্তরে স্বীকৃতি) শব্দের আভিধানিক অর্থ স্বীকার করা, স্বীকৃতি দেওয়া, অনুগত হওয়া মতান্তরে দৃঢ় বিশ্বাস করা। এটি কুফর বা অস্বীকার করা বা অবাধ্যতার বিপরীত। ইসলাম ধর্মে ঈমানের অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক।
ঈমান কাকে বলে? উত্তরঃ  ঈমানের সাধারণ অর্থ বিশ্বাস। আর পারিভাষিক অর্থ তিন প্রকার বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত-
১। আততাসদিক বিলকাল্ব- অন্তরে বিশ্বাস করা বা অন্তর দ্বারা সত্যায়ন করা।
২। ওয়াল ইকরার বিললিসান- মৌখিক ভাবে স্বিকৃতি দেয়া।
৩। ওয়াল আমল বিল যাওয়ারেহ- আল্লাহর সকল বিধিবিধান যা তিনি তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি ওহী করেছেন তা কমবেশ না করে মান্য করা বা আমল করা, ইত্যাদি।
ঈমানের মৌলিক ৬ স্তম্ভ
The basic 6 pillars of faith
ঈমান ঠিক না করে জীবনভর নেক আমল করলেও আখেরাতে কোনো লাভ হবে না। জিবরাঈল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে ছদ্মবেশে এসে রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, ঈমান কাকে বলে? জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ঈমানের হাকিকত বা স্বরূপ হলো, তুমি বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহ তায়ালার প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, আসমানি কিতাবগুলোর প্রতি, আল্লাহর নবী-রাসুলদের প্রতি, কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং তকদিরের ভালো-মন্দ সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হওয়ার প্রতি।’ (বোখারি : ৫০)। উল্লিখিত হাদিসটি ‘ঈমানে মুফাসসাল’ এর ভিত্তি। ঈমানে মুফাসসালে ঘোষণা করা হয়, আমি ঈমান আনলাম, ১. আল্লাহ তায়ালার প্রতি, ২. তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, ৩. তাঁর কিতাবগুলোর প্রতি, ৪. তাঁর নবী-রাসুলদের প্রতি, ৫. কেয়ামত দিবসের প্রতি, ৬. ভালো-মন্দ তকদিরের প্রতি
ঈমানের ৩টি মূলনীতি ও ৬টি রুকন।
কবরে তিন প্রশ্ন-পরকালের প্রথম ধাপ হলো কবর। কবরে বান্দাকে তিনটি বিশেষ প্রশ্ন করা হবে। বারা বিন আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কবরে মানুষকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। এক. তোমার রব কে? দুই. তোমার দ্বিন কী? তিন. এই লোকটি কে ছিলেন, যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল? কবরবাসী যদি মুমিন হয়, তাহলে এসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে পারবে। আর যদি কাফির হয়, তাহলে বলবে, আফসোস! আমি কিছুই জানি না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৫৩; তিরমিজি, হাদিস : ৩১২০)
ঈমানের উসূল কয়টি ও কি কি?
 ঈমানের উসূল ৩ টি। ১। আল্লাহর মা’আরিফাত বা আল্লাহ সম্পর্কে জানা।
২। দ্বীন ইসলামের মা’আরিফাত বা দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জানা।
৩। আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মা’আরিফাত বা নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে জানা।
ঈমান সমগ্র দ্বীনকে অন্তর্ভুক্ত করে। ঈমান শুধু বিশ্বাসের নাম নয় ; বরং মৌখিক স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার বাস্তব প্রতিফলনকে অপরিহার্য করে দেয়। সুতরাং ঈমানের দুটি অংশ। একটি হলো অন্তরে স্বচ্ছ আকিদা পোষণ। আরেকটি হলো বাহ্যিক তৎপরতায় তার প্রকাশ। এ দুটি পরস্পরের সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত যে কোনো একটির অনুপস্থিতি ঈমানকে বিনষ্ট করে দেয়।
ইমান আরবি শব্দ। আরবি ‘আমনুন’ শব্দ থেকে এর উৎপত্তি। শব্দটির মূল অর্থ বিশ্বাস করা, স্বীকৃতি দেওয়া এবং বিশ্বস্ততা বা হৃদয়ের স্থিতি। এ ছাড়া আনুগত্য করা, শান্তি, নিরাপত্তা, অবনত হওয়া এবং আস্থা অর্থেও ইমান শব্দটি ব্যবহৃত হয়। (মুয়জামুল মাকায়িসিল লুগাহ, ১/১৩৩)
বিশ্বাস বা ধর্মবিশ্বাস বোঝাতে পবিত্র কোরআনে ও হাদিসে ইমান শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর বিশ্বাসী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে মুমিন শব্দটি।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘আর কেউ ইমান প্রত্যাখ্যান করলে তার কর্ম বিনষ্ট বা নিষ্ফল হবে এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৫)। আরও এরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। আর তোমাদের মধ্যে রয়েছে কতক কাফির এবং কতক মুমিন। (সুরা তাগাবুন,
ইমান কী? ইমানের মূল পরিচয় একটি হাদিসে সহজভাবে বিবৃত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে একবার হজরত জিবরাইল (সা.) মানুষের বেশে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইমান কী? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর পুস্তকগুলো (আসমানি কিতাব), তাঁর সাক্ষাতে, তাঁর রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং শেষ দিবসে পুনরুত্থান ও তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন (করার নাম ইমান)। (বুখারি, হাদিস: ৫০)
বিভিন্ন ইমামের কাছ থেকে পরিভাষাগতভাবে ইমানের বিভিন্ন আঙ্গিকের সংজ্ঞা পাওয়া যায়। তবে সেসব সংজ্ঞার মূল বক্তব্য কাছাকাছি। ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন, ‘ইমান হচ্ছে অন্তরের সত্যায়ন ও মুখের স্বীকৃতি।’ ইমাম শাফেয়ি, মালেক ও আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-র মতে, ‘অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আমলে বাস্তবায়ন করার নাম ইমান।’
ইমান কী? ইমানের মূল পরিচয় একটি হাদিসে সহজভাবে বিবৃত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে একবার জিবরাইল (সা.) মানুষের বেশে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইমান কী? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর পুস্তকগুলো (আসমানি কিতাব), তাঁর সাক্ষাতে, তাঁর রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং শেষ দিবসে পুনরুত্থান ও তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন (করার নাম ইমান)। (বুখারি, হাদিস: ৫০)
পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াত (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৩৬, ১৭৭ ও ১৮৫; সুরা কামার, আয়াত: ৪৯; সুরা নিসা: ১৩৬) এবং হাদিসের (বুখারি, হাদিস: ১/৯৬-৯৭; মুসলিম, হাদিস আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস, নবি-রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস, তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস।: ১/১৫৭) ভিত্তিতে ইমানের আরকান বা স্তম্ভ মোট ছয়টি
বিভিন্ন ইমামের কাছ থেকে পরিভাষাগতভাবে ইমানের বিভিন্ন আঙ্গিকের সংজ্ঞা পাওয়া যায়। তবে সেসব সংজ্ঞার মূল বক্তব্য কাছাকাছি। ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন, ‘ইমান হচ্ছে অন্তরের সত্যায়ন ও মুখের স্বীকৃতি।’ ইমাম শাফেয়ি, মালেক ও আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-র মতে, ‘অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আমলে বাস্তবায়ন করার নাম ইমান।’ ছয়টি মৌলিক বিশ্বাসের সমষ্টির নাম ইমান। বিষয় ছয়টি হলো: ১. আল্লাহর প্রতি, ২. ফেরেশতাদের প্রতি, ৩. নবী-রাসুলদের প্রতি, ৪. আল্লাহ প্রেরিত কিতাবগুলোর প্রতি, ৫. পরকাল, পুনরুত্থান বা শেষ দিবসের প্রতি এবং ৬. তাকদিরের (ভাগ্য) প্রতি ইমান (বিশ্বাস স্থাপন করা) আনা।
এই ৬ টি বিষয়ের সব কটির ওপর যদি কেউ সমভাবে ইমান না আনে, তবে তাঁর ইমান পূর্ণাঙ্গ হবে না।
নবী-রাসুলদেরটি ছাড়া ইমানের অন্য সব কয়টি রোকন অদৃশ্য। আর নবী-রাসুলগণকেও এই যুগে এখন আর চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং ইমানের সার্বিক বিষয়াবলি গায়েব বা অদৃশ্য। পবিত্র কোরআনে মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা অদৃশ্য বা গায়েবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩) পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইমান বা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে নির্দেশ করা হয়েছে, যাকে আমরা কালিমায়ে শাহাদত নামে চিনি বা জানি।
এ কালিমার প্রথম বিষয় হচ্ছে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো
'সত্য উপাস্য' বা মাবুদ নেই।’ দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ‘আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।’ পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইমান বা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে নির্দেশ করা হয়েছে, যাকে আমরা কালিমায়ে শাহাদত নামে চিনি বা জানি। এ কালিমার প্রথম বিষয় হচ্ছে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো 'সত্য উপাস্য' বা মাবুদ নেই।’ দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ‘আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।’
একজন মুমিন-মুসলমানের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবাদ সম্পদ ইমান। কারণ, ইমানহীন আমল বা কাজ মূল্যহীন বা নিষ্ফল ইমানের বিপরীত হলো কুফর বা শিরক। ইমানের স্তর ও পরিচয় নিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে। ভালো ও নেক কাজে ইমান বাড়ে এবং পাপ ও খারাপ কাজে ইমান কমে। সে কারণে প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের প্রধান দায়িত্ব হলো ইমানের প্রতি যত্নবান হওয়া।
ঈমান কি?
youtube
ঈমান কাকে বলে? ঈমানের পরিচয় কী?
youtube
ঈমান কি, ঈমান কাকে বলে, ঈমানের সংঙ্গা কি
youtube
 ইমানের পরিচয় ও রুকন |
youtube
ঈমান-নিয়ে তাফসীর কুরআন থেকে
https://www.youtube.com/watch?v=SrPpOCelwtQ
যেভাবে আমরা ঈমান হারাই ।
https://www.youtube.com/watch?v=SXi7B1yABPE
 
ঈমানের ৩টি মূলনীতি ও ৬টি রুকন
3 principles and 6 pillars of faith.
0 notes
Text
অবতার তত্ত্ব ও ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণুর ২৪ অবতার
সংস্কৃত শব্দ "অবতার" শব্দের অর্থ ''অবতীর্ণ হওয়া ''।সনাতন ধর্মে এর অর্থ পার্থিব প্রতিমূর্তিতে অবতরণ / প্রকাশ / প্রভুর উপস্থিতি / পরম সত্তা / দেবতার উপস্থিতি।সনাতন ধর্মে অবতার ধারণাটি বেশিরভাগই তিনটি প্রভুর অন্যতম ভগবান বিষ্ণুর সাথে সম্পর্কিত।
ভাগবত পুরাণে এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে যখনই অশুভ শুভকে জয় করে ,অন্ধকার আলোর জায়গা নেয় এবং ন্যায়বিচারের উপরে অত্যাচারী শাসন করে তখন ভগবান বিষ্ণু ধর্ম পুনরুদ্ধার করতে এবং মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করবেন।
ভগবদ গীতা অবতারের সাথে সম্পর্কিত বিষয়টিকে চতুর্থ অধ্যায় ,৭-৮ শ্লোকে আলোচনা করেছে যেখানে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ স্বয়ং অবতার নেওয়ার ভূমিকা ঘোষণা করেছিলেন।
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মনং সৃজামহ্যম্।।৭।।
অনুবাদঃ
হে ভারত! যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই।
পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।৮।।
অনুবাদঃ
সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।
অবতারগুলির শ্রেণিবিন্যাস:
অবতারকে বিস্তৃতভাবে দুই ধরণের শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।ভগবান বিষ্ণু নিজেই যখন পৃথিবীতে অবতরণ করেন তখন তাঁকে সাক্ষাত্ অবতার বলা হয় এবং যখন তিনি পরোক্ষভাবে কিছু জীবিত সত্তাকে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা দেন,তখন সেই জীবন্ত সত্তাকে অবেশ অবতার বলা হয়।
উদাহরণ
সাক্ষাত্ অবতার- শ্রীকৃষ্ণ, ভগবান রাম, ভগবান নরসিংহ, ইত্যাদি।
অবেশ অবতার- নারদ মুনি, পরশুরাম, ব্যাসদেব,ইত্যাদি।
সাক্ষাত্ অবতার ও অবেশ অবতারকে আরও দুটি বিভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় :
পূর্ণ অবতার - ভগবান বিষ্ণু সরাসরি রূপ গ্রহণ করেন এবং ঈশ্বরের সমস্ত গুণাবলী এবং শক্তি প্রকাশিত হয় তার মধ্যে (ভগবান রাম, ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ, ভগবান নরসিংহ)।
অংশ অবতার - ভগবান বিষ্ণু সরাসরি রূপ গ্রহণ করেন তবে তিনি কেবলমাত্র আংশিকভাবে ব্যক্তির মধ্যে প্রকাশিত হন(মৎস্য, কূর্ম ,বরাহ)।
ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দ বিগ্রহঃ অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্ব কারণ কারণং
----শ্রী ব্রহ্ম সংহিতা
অর্থাৎ- শ্রীকৃষ্ণ যিনি গোবিন্দ নামে পরিচিত তিনি হলেন সর্বোচ্চ দেবতা।তাঁর একটি চির সুখী আধ্যাত্মিক দেহ রয়েছে।তিনিই সকলের আদি,তাঁর কোনও উৎস নেই,তিনি সর্ব কারণের কারণ।
এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ভগবান কৃষ্ণ সর্বোচ্চ পূর্ণ অবতার।
যদিও ভগবান বিষ্ণুর অগণিত অবতার রয়েছে, তবুও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবতার শ্রীমদ্ভাগবতমে উল্লেখ রয়েছে। শ্রীবিষ্ণু মোট ২৩ বার অবতার
নিয়েছেন এবং প্রতিবারই তিনি আলাদা রূপ নিয়েছেন।
ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে তিনি কলিযুগের শেষে শেষবারের মতো উপস্থিত হবেন,কল্কি অবতারে,যেটি তার ২৪ তম অবতার হবে ।
ভাগবত পুরান বর্ণিত ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণুর ২৪ অবতার -
১. সনৎ কুমার
মণ্ডলীটি বিভিন্ন নামে পরিচিত:
কুমারগণ(ছেলোগুলো,পুরুষ শিশু,সর্বদা তরুণ),চতুরসন (সন নাম দিয়ে শুরু চারটি নাম)এবং সনকাদি (সনক এবং অন্যান্য)।স্বতন্ত্র নামগুলির মধ্যে সাধারণত সনক(প্রাচীন), সনাতন(শাশ্বত),সনন্দ(আনন্দময়),সনৎ কুমার(সর্বদা তরুণ)(এই ৪টি নামে ৪জনকে ডাকা হয়)।সনৎ কুমার ব্রহ্মার মানস(একটি ইচ্ছা দ্বারা জন্মগ্রহণ)পুত্র হিসাবে জন্ম নেন।সারা জীবন তারা ব্রহ্মচর্য রক্ষা করেছিল; এবং নিজেকে অসাধারণ তপস্যা সম্পাদনে নিযুক্ত করেছেন।তাঁদেরই কাছ থেকে ব্রাহ্মণরা তপস্যা ও ব্রহ্মচরণের মূল্যবোধ ও গুরুত্ব সম্পর্কে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
চার কুমার বিশ্বজুড়ে তাদের মহাজাগতিক শক্তি নিয়ে তাদের স্বাধীন ইচ্ছায় ঘোরাফেরা করেছিল।তাদের এক ভ্রমণকালে, তারা ভগবান বিষ্ণুর আবাস, বৈকুণ্ঠে পৌঁছেছিলেন।সাতটি বৃত্তাকার প্রাচীরের কেন্দ্রে অবস্থিত বিষ্ণুর বাসস্থান সহ এই শহরটি পরমানন্দ এবং পবিত্রতার স্থান হিসাবে বিবেচিত। এটিতে প্রবেশের সাতটি দরজা রয়েছে। চার কুমার কোনও বাধা ছাড়াই প্রথম ছয়টি দ্বার পেরিয়ে গেলেও সপ্তম দরজা জয় এবং বিজয় দ্বারা রক্ষিত ছিল,যারা ভগবান বিষ্ণুর প্রাসাদের দুটি দ্বারপাল (দ্বাররক্ষী)।ক্রুদ্ধ দ্বারপাল দ্বয় চার কুমারকে থামিয়ে তাদের দেখে হেসেছিলেন, যেহেতু তারা বাচ্চাদের মতো দেখতে এবং উলঙ্গও ছিলেন তারা ও তাদের সপ্তম দ্বার দিয়ে ঢুকতে দেননি।চার কুমার দারোয়ানদের আচরণে হতবাক হয়ে পড়েছিল কারণ তারা এ জাতীয় পরিস্থিতি ও উপহাসের মুখোমুখি হননি অন্য কোথাও ।তারা আশা করেছিল যে জয় এবং বিজয় তাদের অধিপতি ভগবান বিষ্ণুর মতো হবেন, যিনি জীবের মধ্যে পার্থক্য করেন না।ক্ষুব্ধ হয়ে কুমাররা তাদের তিনটি দুর্জন হিসাবে "লালসা, ক্রোধ এবং লোভ" এর বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয়ে তিনবার পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার অভিশাপ দিয়েছিলেন।দ্বাররক্ষীরা অভিশাপ গ্রহণ করে কুমারদের কাছে মাথা নত করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।ভগবান বিষ্ণু সেই ঘটনাটি জানতে পেরে, কুমারদের সামনে তাঁর সমস্ত গৌরব নিয়ে ও তাঁর অনুচরবৃন্দ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।বৈকুণ্ঠের প্রথম সফরে আসা চার কুমার বিষ্ণুর দর্শন করেন। গভীর নিষ্ঠার সাথে, তারা তাঁকে তাঁর ভক্ত হিসাবে গ্রহণ করার এবং সর্বদা তাদের যখন ইচ্ছা আসতে ও তাঁর পাদপদ্ম উপাসনা করার অনুমতি এবং তাঁর পাদপদ্মে তাদের চূড়ান্ত মুক্তির দাবী করেন ।বিষ্ণু তাদের অনুরোধ মেনে নিলেন এবং জয় ও বিজয়কে আশ্বাস দেন যে তারা পৃথিবীতে অসুর হিসাবে জন্মগ্রহণ করবে তবে বিষ্ণুর অবতারের দ্বারা সমস্ত জন্ম থেকে (নিহত) মুক্তি পাবে।দু'জন রক্ষীকে পৃথিবীতে কুমারদের অভিশাপ ভোগ করতে গিয়ে বিষ্ণু কর্তৃক বরখাস্ত হয়েছিল এবং তারপরে অভিশাপের ফলভোগের পরে তাঁরা বৈকুণ্ঠে ফিরে আসেন। সত্যযুগে ,সেই দুই প্রহরী এক অশুভ সময়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৠষি কাশ্যপ এবং তাঁর স্ত্রী দিতির সন্তান হিসাবে অসুর হয়ে ,যাদের নাম হিরণ্যকশিপু এবং হিরণ্যাক্ষ রাখা হয় । দ্বিতীয় জীবনে ,ত্রেতা যুগের সময় তারা রাবণ এবং কুম্ভকর্ণ হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।অবশেষে , দ্বাপর যুগে তৃতীয় ও শেষ জীবনে তারা শিশুপাল ও দান্তবক্র হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
২ .বরাহ
সত্যযুগে ,বৈকুণ্ঠের দ্বারপাল জয় সনকাদি মুনি কর্তৃক অভিশপ্ত হয়ে হিরণ্যাক্ষ রাক্ষস হিসেবে জন্ম নেয়।হিরণ্যাক্ষ রাক্ষস যখন পৃথিবীটি(যাকে ভূদেবী হিসাবে চিহ্নিত করা হয় )চুরি করেছিলেন এবং তাকে আদিম জলে লুকিয়ে রেখেছিলেন, তখন ভগবান বিষ্ণু একটি শুয়ার হিসাবে অবতার গ্রহণ করেছিলেন ও তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন । বারাহ সেই অসুরকে মেরে ফেলেছিলেন এবং পৃথিবীকে সমুদ্র থেকে পুনরুদ্ধার করে দন্তের উপর তুলে নেন এবং ভূদেবীকে পুনরায় মহাবিশ্বে ফিরিয়ে আনেন।এই সময় ভূদেবীর সাথে তার বিবাহ হয়েছিল।তিনি ব্রহ্মার নাসারন্ধ্র থেকে জন্মগ্রহণ করেন তাই বারাহ অবতারকে সুকারা বলে উল্লেখ করা হয়।
বরাহকে অবতারকে একটি শুয়োর হিসাবে বা একটি নৃতাত্ত্বিক আকারে সম্পূর্ণরূপে চিত্রিত করা যেতে পারে, একটি শুয়োরের মাথা এবং মানবদেহের সাথে।
৩ . দেবর্ষি নারদ
নারদ এক বৈদিক ঋষি, যিনি ভ্রমণ সংগীতজ্ঞ এবং গল্পকার হিসাবে বিখ্যাত, তিনি সংবাদ বহন করে এবং জ্ঞানচর্চা করেন।তাঁকে সমস্ত ঋষির রাজা হিসাবেও বোঝানো হয়, যার অর্থ ঋষিরাজ। তিনি জ্ঞান, অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত দেখার উপহার পেয়েছিলেন।তিনি কর্তাল (বাদ্যযন্ত্র) এবং তানপুরা (যার নাম মহথী) বহন করেন এবং তিনি সাধারণত প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রের অন্যতম দুর্দান্ত বিশারদ ব্যক্তি হিসাবে বিবেচিত হন।হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণব ধর্মে তাঁকে ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত ঋষি রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিছু কাহিনীতে নারদকে জ্ঞানী এবং দুষ্টু উভয় হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।বৈষ্ণব উত্সাহীরা তাঁকে শুদ্ধ, উন্নত আত্মা হিসাবে বর্ণনা করেছেন যিনি তাঁর ভক্তিগীতির মাধ্যমে বিষ্ণুর মহিমা বর্ণন করেন ,হরি ও নারায়ণ নাম গেয়ে এবং তাতে ভক্তি যোগের প্রদর্শন করেছেন।
নারদ ভক্তি সূত্র তাঁরই ভাবনা কে তুলে ধরে।কোন স্থানে উপস্থিত হওয়ার আগে তিনি সাধারণত সমস্বরে নারায়ণ, নারায়ণ উচ্চারণ করেন।মহাভারতে, নারদকে বেদ এবং উপনিষদের জ্ঞাতা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ইতিহাস ও পুরাণগুলির অভিজ্ঞ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি ছয়টি অঙ্গের উপর দক্ষতা অর্জন করেছেন: উচ্চারণ, ব্যাকরণ, ছন্দ, পদ, ধর্মীয় আচার এবং জ্যোতির্বিদ্যা।সমস্ত মহাজাগতিক প্রাণী তাঁদের জ্ঞানের জন্য তাঁর উপাসনা করেন - প্রাচীন কল্প গুলিতে (কালচক্র) যা ঘটেছিল তার সমস্ত ক্ষেত্রেই তিনি বেশ পারদর্শী বলে মনে করা হয় এবং তাকে যুক্তি এবং নৈতিক বিজ্ঞান সত্যের জ্ঞাতা বলে অভিহিত করা হয়।তিনি সুগঠিত, সংকল্পবদ্ধ, বুদ্ধিমান এবং শক্তিশালী স্মৃতির অধিকারী। তিনি নৈতিকতা, রাজনীতি বিজ্ঞান জানেন; তিনি প্রমাণ থেকে অনুমান আঁকতে দক্ষ এবং উচ্চতর বিষয়গুলির থেকে নিকৃষ্ট বিষয়গুলি পৃথক করতে খুব দক্ষ।তিনি পাঁচটি সমর্থক নিয়ে গঠিত জটিল শব্দতন্ত্রের বক্তব্যের যথার্থতা এবং ভুলের বিচার করতে সক্ষম।তিনি ধর্ম, সম্পদ, আনন্দ ও মুক্তি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সক্ষম। তিনি এই পুরো মহাবিশ্ব এবং এর চারপাশের সমস্ত কিছু সম্পর্কে জ্ঞানের অধিকারী।তর্ক করার সময় তিনি স্বয়ং দেব্গুরু বৃহস্পতিকে সাফল্যের সাথে উত্তর দিতে সক্ষম।তিনি সাংখ্য ও যোগ দর্শনবিদ্যার একজন দক্ষ,যুদ্ধ ও চুক্তি বিজ্ঞানের বিষয়ে জ্ঞাত
এবং প্রত্যক্ষ জ্ঞানের মধ্যে সম্ভব নয় এমন জিনিসগুলি বিচার করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে দক্ষ। তিনি সন্ধি, যুদ্ধ, সামরিক অভিযান, শত্রুর বিরুদ্ধে রক্ষণাবেক্ষণ এবং আক্রমণ ও সংরক্ষণের কৌশল সম্পর্কিত ছয়টি বিজ্ঞান সম্পর্কে জানেন।তিনি যুদ্ধ এবং সংগীতের প্রতি অনুরাগী, এবং কোনও বিজ্ঞান বা কোনও ক্রিয়াকলাপ দ্বারা প্রত্যাখ্যান করতে অক্ষম।তিনি বিদ্যার প্রতিটি শাখার একটি সম্পূর্ণ দক্ষ ।
৪ . নর নারায়ণ ঋষি
নর-নারায়ণ হলেন পৃথিবীতে ভগবান বিষ্ণুর যুগল-ভাই অবতার,ধর্ম বা ধার্মিকতা সংরক্ষণের জন্য তারা কাজ করেন।নর-নারায়ণ ধারণায় মানবাত্মা নর ভগবান নারায়ণের চিরন্তন সহচর।হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতে কৃষ্ণকে (বিষ্ণুর অবতার) নারায়ণ এবং অর্জুন - মহাকাব্যের প্রধান নায়ক - নর বলা হয়েছে ।পূর্ববর্তী জীবনে, এই দুজনই নর এবং নারায়ণ ঋষি হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তারা বদ্রীনাথের পবিত্র স্থানে মহান তপস্যা করেছিলেন।নর এবং নারায়ণ ছিলেন বিষ্ণুর চতুর্থ অবতার।তারা হলেন ধর্ম যিনি ব্রহ্মার পুত্র , এবং তাঁর স্ত্রী মুর্তির(দক্ষের কন্যা) যমজ পুত্র ।
হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে এই জুটি বদ্রীনাথে বাস করে, যেখানে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরটি রয়েছে ।ভাগবত পুরাণ অনুসারে, "বদ্রীকশ্রম (বদ্রীনাথ) - ভগবান বিষ্ণু এ ঋষি নর ও নারায়ণ হিসাবে সকল জীবের সত্তার কল্যাণে অনাদিকাল থেকেই প্রচণ্ড তপস্যা করে চলেছেন।
নর-নারায়ণ চিত্রগুলিতে যৌথভাবে বা পৃথকভাবে চিত্রিত হয়েছে। পৃথকভাবে চিত্রিত করা হলে, নরকে দুটি হাত দিয়ে চিত্রিত করা হয় এবং হরিণের ত্বক পরিহিত হয় এবং নারায়ণকে বিষ্ণুর স্বাভাবিক রূপে ডানদিকে প্রদর্শিত হয়।কখনও কখনও, উভয়ই একে অপরের সাথে অভিন্ন চিত্রিত হয়।তখন তাদের চতুর্ভুজ চিত্রিত হয় চারি হস্তে শাঁখ চক্র গদা পদ্ম থাকে,বিষ্ণুর সাদৃশ্য।এই দুটি অবিচ্ছেদ্য ঋষি মানবজাতির কল্যাণে পৃথিবীতে অবতার নিয়েছিলেন।জনশ্রুতি আছে যে একবার শিব পুরো পৃথিবীর সামনে নর এবং নারায়ণের খ্যাতি আনার চেষ্টা করেছিলেন।এটি করার জন্য, তিনি তাঁর নিজের শক্তিশালী অস্ত্র পাশুপাথাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিলেন, এই দুই ধ্যানমগ্ন ঋষি ওপর।
তাদের ধ্যানের শক্তি এত তীব্র ছিল যে তাদের সামনে এই অস্ত্র শক্তি হারিয়েছিল।শিব জানিয়েছিলেন যে এই ঘটনা ঘটেছিল যেহেতু, দুজনই প্রথমসারির জ্ঞানী ছিলেন যারা প্রতিনিয়ত নিরবিকল্প সমাধিতে ছিলেন ।
ভাগবত পুরাণে ঋষি নর-নারায়ণ থেকে অপ্সরী উর্বশীর জন্মের কাহিনী শোনা যায়।একবার, ঋষি নর-নারায়ণ হিমালয় পর্বত অবস্থিত বদ্রীনাথের পবিত্র মন্দিরে ধ্যান করছিলেন।তাদের তপস্যা এবং কঠোরতা দেবতাদের ভীতি প্রদর্শন করেছিল, তাই দেবতাদের রাজা ইন্দ্র কামদেব, বসন্ত এবং অপ্সরাদের প্রেরণায় ও অনুপ্রেরণায় তাদের ভক্তি বিঘ্নিত করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন।তাদের ক্রিয়াকলাপ দেখে ঋষি নারায়ণ একটি ফুল নিয়ে তাঁর উরুতে রাখলেন।তৎক্ষণাৎ তা থেকে একটি
রূপলাবণ্যময়ী,সুন্দরী ও অনন্তযৌবনা অপ্সরী উত্থিত হয়েছিল যার রুপেরছটা স্বর্গের অপ্সরার চেয়ে অনেক বেশি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল এবং লজ্জা ও হতাশায় ভরা কামদেবাদিকে সেই অপ্সরীকে স্বর্গে নিয়ে যেতে বাধ্য করেন ঋষি
।তাদের ফিরিত পাঠিয়ে ভক্তিপরায়ণ ঋষিরা পুনরায় ধ্যানমগ্ন হন ।যেহেতু ,সেই অপ্সরীর উরু থেকে উৎপত্তি হয়ে সে উরুর উপর বসেছিল তাই তার নাম উর্বশী ।
৫ .কপিলদেব
কপিল ছিলেন একজন বৈদিক ঋষি। তাঁকে সাংখ্য দর্শনের অন্যতম প্রবর্তক মনে করা হয়।ভগবদ্গীতায় কপিলকে সিদ্ধযোগী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।ভাগবত পুরাণের তৃতীয় স্কন্দে কপিলের জীবনের বর্ণনা পাওয়া যায়। এখানে তাঁকে কর্দম মুনি ও দেবাহুতির পুত্র বলা হয়েছে। তিনি সতী অনুসূয়ার ভ্রাতা ও গুরু। কপিলকে সর্বোচ্চ দেবতা বিষ্ণুর একটি অবতার বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ভাগবত পুরাণে অবতারদের তালিকায় তাঁর নামও পাওয়া যায়। পিতা গৃহত্যাগ করলে কপিল নিজের মা দেবাহুতিকে যোগ ও বিষ্ণু-ভক্তি শিক্ষা দেন। এর ফলে দেবাহুতি মোক্ষ লাভ করেন। ভাগবত পুরাণের একাদশ অধ্যায়ে কপিলের সাংখ্য দর্শন কৃষ্ণ উদ্ধবকে শিখিয়েছিলেন। এই অংশটি উদ্ধব গীতা নামে পরিচিত।
কৃষ্ণ ভগবদ্গীতায় কপিলের উল্লেখ করেছেন:
বৃক্ষের মধ্যে আমি বট, ঋষিগণের মধ্যে আমি দেবর্ষি নারদ, গন্ধর্বগণের মধ্যে আমি চিত্ররথ ও সিদ্ধগণের মধ্যে আমি কপিল। (১০। ২৬)
৬ .ত্রিনাথ বা দত্তাত্রেয়
দত্তাত্রেয় বা দত্ত হলেন একজন হিন্দু দেবতা। তিনি ত্রিমূর্তি নামে পরিচিত হিন্দু দেবতাত্রয়ী ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের সম্মিলিত রূপ। "দত্তাত্রেয়" নামটি দু'টি অংশে বিভক্ত: "দত্ত" অর্থাৎ যা দেওয়া হয়েছে এবং "আত্রেয়" অর্থাৎ ঋষি অত্রির পুত্র।
পুরাণে, তিনি উত্তর ভারতীয় আবাসস্থলে সতী অনুসুয়া এবং তাঁর স্বামী বৈদিক ঋষি অত্রির আশ্রমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
তাঁর স্বরূপ আঞ্চলিকভাবে পরিবর্তিত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিম মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্র প্রদেশে, তাকে সাধারণত তিনটি মাথা এবং ছয় হাত, ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবের জন্য এক একটি করে মাথা এবং এক জোড়া হাত এই দেবতার প্রত্যেকটির সাথে সম্পর্কিত প্রতীকী জিনিসগুলি ধারণ করে দেখানো হয়: ব্রহ্মার জপমালা এবং কমন্দুলু ,বিষ্ণুর শঙ্খ এবং সুদর্শন চক্র , শিবের ত্রিশূল এবং ডমরু বা ডুগডুগি ।তিনি সাধারণত একটি সাধু বা সন্ন্যাসী হিসাবে পরিহিত হন, তিনি কোনও জঙ্গলে বা প্রান্তরে অবস্থিত তাঁর পার্থিব বস্তু ত্যাগ এবং তিনি একটি ধ্যান যোগী জীবনধারা অনুসরণ করেন।চিত্রকর্ম এবং কিছু বড় খোদাইয়ে তাঁর চারপাশে চারটি কুকুর এবং একটি গাভী রয়েছে যা চারটি বেদ এবং মাতৃ পৃথিবীর প্রতীক যা সমস্ত জীবকে পুষ্ট করে।
তাঁর উৎস অস্পষ্ট কিন্তু তাঁর জীবনের গল্পগুলি আরও পরিষ্কার। তিনি মহাভারতে অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টি এবং জ্ঞানের ব্যতিক্রমী ঋষি হিসাবে বর্ণনিত হয়েছেন,যিনি পুরাণে একজন গুরু এবং বিষ্ণুর অবতার হিসেবে আদরিত ও উত্থিত হয়েছেন ।দত্তাত্রেয় এই গ্রন্থগুলিতে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি সংসার ত্যাগ করেছিলেন এবং সন্ন্যাসী জীবন যাপনের জন্য খুব অল্প বয়সেই তাঁর গৃহ ত্যাগ করেছিলেন ।
বিভিন্ন হিন্দু সম্প্রদায়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে তাঁকে পূজা করা হয়। নাথ সম্প��রদায় তাঁকে শিবের অবতার মনে করে। নাথেদের আদিনাথ সম্প্রদায় তাঁকে আদিগুরু মনে করে। তন্ত্র তাঁকে "যোগের ঈশ্বর" মনে করে। তিনি বৈষ্ণব ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত। তাঁকে একজন গুরু হিসেবে পূজা করা হয়। মনে করা হয়, দত্তাত্রেয় অদ্বৈত বেদান্তের ভাষ্য ত্রিপুর রহস্য রচনা করে পরশুরামকে দান করেছিলেন।ত্রিপুর-রহস্যতে শিষ্য পরশুরাম গন্ধমদন পর্বতে ধ্যানরত দত্তাত্রেয়কে অবলোকন করেন।
ঐতিহাসিক ভারতীয় সাহিত্যে দত্তাত্রেয়ের প্রতিনিধিত্বকে প্রতীকীভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।তাঁর তিনটি মাথা গুনের প্রতীক(হিন্দু ধর্মের সাংখ্য বিদ্যালয়ের গুণাবলী),তিনটি গুণ হল সত্ত্ব, রজ এবং তম।ছয়টি হাতের মধ্যে নৈতিক প্রতীক রয়েছে যথা যম, নিয়ম, সাম, দাম, দয়া এবং শান্তি
( যোগব্যায়ামে মূল্যবোধ সংক্রান্ত দর্শনবিদ্যা
এবং হিন্দুধর্মের বেদন্ত বিদ্যা )।কামধেনু গরুটি প্রতীকী পঞ্চভূত, চারটি কুকুর মানুষের অভ্যন্তরীণ শক্তি:ইচ্ছা,বাসনা,আশা ও তৃষ্ণা।এই ব্যাখ্যাগুলিতে দত্তাত্রেয় হলেন যোগী গুরু (শিক্ষক) যাঁরা এই সমস্তকে নিখুঁত করেছেন, তাদের দ্বারা শাসিত হওয়ার পরিবর্তে তাদের শাসন করেন এবং এইভাবে গুরু দত্তাত্রেয় তাদের উর্ধে অবস্থান করছেন ।
দত্তাত্রেয়উপনিষদ্‌ বা দত্তাত্রেয়োপনিষদ্‌ হল একটি হিন্দুশাস্ত্র। এটি দেবতা দত্তাত্রেয়ের প্রতি উৎসর্গিত। দত্তাত্রেয় উপনিষদ্‌ সংস্কৃত ভাষায় রচিত ১০৮টি উপনিষদের অন্যতম। এটি একটি বৈষ্ণব উপনিষদ্‌। বিষ্ণুকে এই উপনিষদের রচয়িতা মনে করা হয়। এটি অথর্ববেদের সঙ্গে যুক্ত। এখানে ঋষি দত্তাত্রেয়কে বিষ্ণুর একটি অবতার হিসেবে বন্দনা করা হয়েছে এবং দত্তাত্রেয়ের পূজায় ব্যবহৃত মন্ত্রগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।দত্তাত্রেয় সম্প্রদায়ের কাছে এই উপনিষদ্‌টি একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ।
দত্তাত্রেয় উপনিষদ্‌ তিনটি খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা বিষ্ণুকে (নারায়ণ) জিজ্ঞাসা করেন, কিভাবে ‘সংসার সমুদ্র’ অর্থাৎ জন্ম ও মৃত্যুর চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিষ্ণু বলেন যে, তিনি স্বয়ং ভগবান দত্তাত্রেয় (দত্ত) এবং দত্তাত্রেয়ের মূর্তিতে তাকে ধ্যান করলে সংসার সমুদ্রের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিষ্ণুর পরামর্শক্রমে ব্রহ্মা দত্তাত্রেয়ের ধ্যান করে বুঝতে পারেন অনন্ত ও অদ্বিতীয় ব্রহ্ম ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংসের পর অবশিষ্টাংশ রূপে পড়ে থাকেন।দ্বিতীয় খণ্ডে দত্তাত্রেয়ের মালামন্ত্র ও শেষ খণ্ডে ঔপনিষদ্‌ সাহিত্যের প্রথানুসারে এই গ্রন্থ পাঠের ফল বর্ণিত হয়েছে। যিনি বিদ্যা ও এই গ্রন্থের সব কটি পবিত্র মন্ত্র শিক্ষা করেন, তিনি অসংখ্যবার গায়ত্রী মন্ত্র, শ্রীরুদ্রচমকম্‌ স্তোত্র ও ওঁ জপের ফল ভোগ করেন এবং সকল পাপ মুক্ত হন।
৭ .যজ্ঞপুরুষ
যজ্ঞ পুরুষ বা যজ্ঞেশ্বর ("যজ্ঞের প্রভু") ভাগবত পুরাণে হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর অবতার হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যজ্ঞ পুরুষ হিসাবে, বিষ্ণু হলেন হিন্দুদের ত্যাগের অনুষ্ঠান বা যজ্ঞের মূর্ত প্রতীক।তিনি স্বায়ম্ভু মনু যুগে স্বায়ম্ভু মনবন্তার ইন্দ্রও (দেবতাদের রাজা ) ��িলেন।
যজ্ঞকে বৈভব-অবতার বলে অভিহিত করা হয়েছে ১৪ টি মূল মনবন্তর-অবতারের (একজন মনবন্তরের অনুরূপ অবতার এবং তিনি ধর্মের নীতি বজায় রাখতে ইন্দ্র এবং অন্যান্য দেবতাদের সমর্থন করেন) হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
যজ্ঞকে ভগবান বিষ্ণুর কল্প-অবতার(কল্প নামে অভিজাতদের সাথে সম্পর্কিত একটি অবতার)
হিসাবেও শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।
যজ্ঞ হলেন প্রজাপতি রুকির এবং স্বয়ম্ভু মনুর(প্রথম মনু যিনি মানবজাতির পূর্বসূরি) কন্যা আকুতি পুত্র । স্বায়ম্ভূ মনুর (স্বয়ম্ভূ মনন্তর) সময়কালে কোনও যোগ্য ইন্দ্র(রাজা) ছিলেন না, যিনি স্বর্গের রাজার এবং দেবতাদের রাজা পদটির যোগ্য। সুতরাং, বিষ্ণু যজ্ঞ হিসাবে অবতারিত হয়ে ইন্দ্রের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
ভাগবত পুরাণে যজ্ঞকে বিষ্ণুর সাথে এবং দেবী দক্ষিণাকে, দেবী লক্ষ্মী (ভাগ্যের দেবী ও যিনি বিষ্ণুর সঙ্গীনী) হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যজ্ঞের জন্মের পরে তিনি তাঁর পিতামহ স্বয়ম্ভু মনুর গৃহে থাকতেন।যজ্ঞ ও দক্ষিণার পুত্রদের নাম রাখা হয়েছে তোশা, প্রতাশা, সন্তোষ, ভদ্র, শান্তি, ইদস্পতি, ইধমা, কাভি, বিভূ, স্বহনা, সুদেব এবং রোকনা।এনাদেরকে সম্মিলিতভাবে তুষিতা দেবতা বলা হয়।পরবর্তীতে যজ্ঞকে ইন্দ্র হিসাবে বর্ণনা করা হয়।
বেদ অনুসারে ভগবান বিষ্ণুকে যজ্ঞের ("ত্যাগ") সমকক্ষ করা হয়েছে।বেদ মন্তব্যকারী - সায়ন বিষ্ণুকে যজ্ঞের প্রভু বা আত্মত্যাগী হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
এমনকি ভগবদ গীতা ভগবান বিষ্ণুকে যজ্ঞের (ত্যাগের) সাথে সংযুক্ত করে।ত্যাগ সম্পাদন করা বিষ্ণুকে সন্তুষ্ট করার সমতুল্য বিবেচিত হয়।বিষ্ণু সহস্রনামে যজ্ঞকে বিষ্ণুর নাম হিসাবেও বর্ণনা করেছেন।
পুরুষসূক্তে বলা হয়েছে, পুরুষের কৃত যজ্ঞের মাধ্যমে এবং যজ্ঞ থেকে জগৎ সৃষ্টি হয়েছে। এই আদি যজ্ঞ থেকেই যাবতীয় সৃষ্টি রূপ ধারণ করেছে। সপ্তদশ শ্লোকে বলা হয়েছে যে, এই আদি যজ্ঞ থেকেই যজ্ঞের ধারণার উৎপত্তি হয়েছে। শেষ শ্লোকগুলিতে সকল সৃষ্টির আদিশক্তি রূপে যজ্ঞের গৌরব ঘোষিত হয়েছে।
৮ .ঋষভ
হিন্দুধর্মে ঋষভ হলেন ভাগবত পুরাণ গ্রন্থে উল্লিখিত বিষ্ণুর ২৪ অবতারের মধ্যে অষ্টম।বেদে ঋষভ নামটি উল্লেখ করা হয়েছে।তবে, ঋগ্বেদ, অথর্ববেদ এবং উপনিষদে প্রসঙ্গটি বোঝায় যে এর অর্থ ষাঁড়।
ভগবান বিষ্ণু ঋষভ অবতারে রাজা নাভি এবং মারুদেবীর গৃহে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।তাঁর মা মারুদেবী ছিলেন ইন্দ্রের কন্যা।তিনি পরমহংসত্ব অর্জন করেছিলেন (সর্বোচ্চ ক্রমের এক তপস্বী যিনি তাঁর ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন) , যেটি একটি চূড়ান্ত কঠিন কাজ।তাঁকে 'জ্বিন' উপাধি দেওয়া হয়েছিল যার অর্থ 'জ্ঞানী'।তাঁর অনুসারীরা জৈনদের নামে পরিচিত।
৯ .রাজা পৃথু
মহাতেজা মহাযশা অঙ্গ মহামতী পুত্র সন্তান কামনায় যজ্ঞানুষ্ঠান করলে সেই যজ্ঞের চরু সুনীথা ঈশ্বরকে স্মরণ করে ভক্ষণ করলে তার গর্ভে বেণ নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।সেই পুত্র একজন কুলাঙ্গার।ধর্মকর্ম মানে না।প্রজাগণকে কষ্ট দেয়।ভগবান বিষ্ণুর নিন্দা শুনে ঋষিগণ হুংকার ছাড়লে বেণ ভস্মরাশি হয়ে পড়ে।তারপর যোগবলে ঋষিগণ তার মৃতদেহ তৈলাক্ত করে ভিজিয়ে রাখেন।তখন ঋষিগণ মিলে বেণের উরুযুগল মথিলে তাম্রবর্ণ কেশ, শোণিত বরণ,বামন আকৃতির এক কিম্বাকৃতির জন্ম হয়।ঋষিগণ “নিষীদ” “নিষীদ” বাক্য উচ্চারণ করেন।সেথেকে ধরায় নিষাদবংশের জন্ম হল।পুনরায় ঋষিগণ বেণের বাহুযুগল মথিলে নারায়ণ অংশে জন্ম নিল পৃথু নামে এক রতন পুরুষ। অপরদিকে লক্ষ্ণী অংশে জন্ম নিল অর্চ্চি নামে এক কণ্যা। রুপবতী গুনবতী সেই বিনোদনীর সাথে পৃথুর পরিণয় হয়।পৃথুরাজকে দেখে মুনিগনের অন্তর আনন্দে পুলকিত হল। গন্ধর্বরা মনের সুখে গান করতে লাগল। সিদ্ধ নামক দেবতারা পূষ্প বর্ষণ করতে লাগল। দেবতারা সেখানে আগমন করে এবং আনন্দে অপ্সরা নৃত্য করে। অমন-নগরে দুন্দুভি (দমামাজাতীয় প্রাচীন রণবাদ্যবিশেষ) বাজে। যক্ষ (ভূগর্ভে প্রোথিত ও সঞ্চিত ধনরাশির রক্ষক) রক্ষ (রাক্ষক) সহ অসংখ্যা ঋষিগণ আসে রাজপুরে।আসেন ব্রহ্মা তার সাতে আসেন অমরের দেবতা।পৃথুর শরীরে পদ্মচক্র চিহ্ন ছিল। তা দেখে পদ্মপলাশলোচন অত্যন্ত হরষিত হলেন।ব্রহ্মা তখন উপস্থিত সকলে পৃথুর অভিষেক আ��ম্ভ করার জন্য অনুমতি দিলেন। ব্রহ্মার অনুমতি পেয়ে যে যত অভিষেক দ্রব্য এনেছিল তা দিয়ে যথাবিধি পৃথুরাজকে অভিষেক করিল।পৃথুরাজ সিংহাসনে বসলেন এবং বামদিকে অর্চ্চা দেবী এমনভাবে বসলেন যেন জলের মধ্যে দামিনী(বিদ্যৎ) লুকায়।তারপর মনের আনন্দে দেবগণ একে একে পৃথু নৃপতিকে তাদের বিবিধ দ্রব্য উপহার দেন।কূবের দেন কাঞ্চন-আসন ,দেব জলপতি দেন শ্বেতচ্ছত্র ,পবন দিলেন ব্যজনী(বাতাস করার পাখা),ধর্মদেব দিলেন কীর্ত্তিমালা , দেবেন্দ্র দিলেন কিরীট, যমরাজ দিলেন অনুপম দন্ড,ব্রহ্মা দিলেন বেদময় বর্ম,বীণাপানি স্বরস্বতী দিলেন মনিময় হার,দেব নারায়ন দিলেন সুদর্শন-চক্র, লক্ষ্ণীদেবী দিলেন ধনাগার, রুদ্র মহামতি দিলেন চক্রাকার অসি, দূর্গাদেবী দিলেন চর্ম্ম,চন্দ্রদেব দিলেন অতি মনোরম অশ্ব,ত্বষ্টা (দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা)দিলেন মনোরম দিব্য রথ,অগ্নি দিলেন অজগব ধনু, সূর্য্যদেব দিলেন দিব্যবাণ,পৃথিবী দিলেন পাদুকা।রাজা হয়ে পৃথু সিংহাসনে আরোহণ করলেন।চারিদিকে মাগধেরা(স্তুতিপাঠক, বন্দনাগায়ক),স্তব আরম্ভ করিল।তখন পৃথুরাজা তাদেরকে নিবারণ করে বললেন,”আমাকে স্তব করার কোন প্রয়োজন নেই।আমি স্তবের যোগ্য নই।যার ইচ্ছায় এ জগৎ সংসার সৃষ্টি হয়েছে,সেই হরি গুণাধার হচ্ছেন এ স্তবযোগ্য।একাগ্র চিত্তে তার স্তব করলেই কেবল ভব-পারাবার হওয়া যায়। বৃথা স্তবে যে বিমোহিত হয় সে অতি মূর্খ।সংসারে যে মূর্খ হয় স্তবেতে তার মনে স্তুষ্ঠি জন্মে।প্রশংসা শুনে যে মত্ত হয় তার মত মূঢ় আম কখনও দেখেনি।তোমাদের সুকন্ঠ নয়নকাড়ে।আমার স্তব ছেড়ে নারায়ণকে ভজ। একাগ্র চিত্তে তাঁর স্তব কর, তা হলেই ইহলোক পরলোকে মংগল হবে।“ পৃথু তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন,তথাপি তারা তার কথা শুনল না।আনন্দে চিত্তে তারা তার স্তব করতে লাগল।
সূতগণ কর্তৃক পৃথুরাজার স্তুতিবাদঃ
পৃথুর অমৃত বাণী শ্রবণ করে সুতবন্দীগণ মধুর স্বরে তার গুনগান করতে আরম্ভ করল।তারা বলতে লাগল তোমার মহিমা কী বর্ণনা করব।স্বয়ং নারায়ণ অংশে তোমার জন্ম।সুরগণ তোমার কার্য দেখে সুবিম্মিত।অগ্নির মত তেজ তোমার।তুমি গুণের আধার।ইন্দ্রের মত দর্প তোমার।দাতা কর্ণের সম তুমি।যমরাজকেও তুমি জয় করেছ।সূর্য সম তেজ তুমি আকর্ষণ কর আবার সহস্র গুণেতে বর্ষণ কর।সুধারক(চন্দ্র)তোমার রুপ দেখে লজ্জা পায়।সাগরের মত তোমার গাম্ভীর্য।পৃথিবীকে তুমি দোহন করিবে।ধনুর দ্ধারা তুমি সসাগরা(পৃথিবী)কে শাসন করিবে।শত শত অশ্বমেধ যজ্ঞ তুমি করিবে এবং তুষ্ট করবে শ্রহরিকে।এভাবে বন্ধীগণ তার জয়গাণ করতে লাগল।
সকলের আগে যাহাকে লোকে রাজা বলিয়াছিল, তাহার নাম ছিল পৃথু। তিনি সূর্যবংশের লোক ছিলেন, তাঁহার পিতার নাম ছিল বেণ। ‘রাজা’ কিনা, যে ‘রঞ্জন’ করে অর্থাৎ খুশি রাখে। পৃথু নানারকমে প্রজাদিগকে খুশি করিয়াছিলেন, তাই সকলে মিলিয়া তাঁহাকে ‘রাজা’ নাম দিয়াছিল। পৃথুর পূর্বে লোকের দিন বড়ই কষ্টে যাইত। সেকালে গ্রাম নগর পথঘাট কিছুই ছিল না, ঝোপে জঙ্গলে, পর্বতের গুহায় সকলে বাস করিত। পৃথু তাহাদিগকে বাড়ি-ঘর বাঁধিয়া এক জায়গায় থাকিতে শিখান। আর পথ বানাইয়া চলাফেরার সুবিধা করিয়া দেন। সেই হইতে শহর বস্তির সৃষ্টি হইল। সে কালের লোকে চাষবাস করিতে জনিত না। ফলমূল খাইয়া অতি কষ্টে দিন কাটাইত।
জমিতে কাঁকর, আকাশে মেঘ নাই; খট্‌খটে শুকনো মাটি ফাটিয়া চৌচির হইয়া আছে, তাহাতে শস্য জন্মাইতে গেলেও তাহা হয় না। প্রজারা পৃথুকে বলিল, “হে রাজা, পৃথিবী সকল শস্য খাইয়া বসিয়াছে, আমরা কেমন করিয়া বঁচিব? ক্ষুধায় বড়ই কষ্ট পাইতেছি আমাদিগকে শস্য আনিয়া দাও।”
পৃথু বলিলেন, “বটে, পৃথিবীর এমন কাজ? শস্য সব খাইয়া বসিয়াছে? আচ্ছা এখনি ইহার সাজা দিতেছি। আন তো রে ধনুক, নিয়ে আয় তো তীর।”
পৃথিবী ভাবিল, “মাগো, মারিয়াই ফেলে বুঝি।”
সে প্রাণের ভয়ে গাই সাজিয়া লেজ উঁচু করিয়া ছুটিয়া পালাইতে লাগিল। কিন্তু পৃথুর বড়ই রাগ হইয়াছিল, তিনি তাহাকে কিছুতেই ছড়িলেন না। আকাশ পাতাল ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল, ব্রহ্মলোক অবধি ছুটয়া গেল; কিছুতেই সে তাঁহাকে এড়াইতে পারিল না। তখন পৃথিবী কাঁপিতে কাঁপিতে বলিল, “দোহাই মহারাজ! আমি স্ত্রীলোক, আমাকে মারিলে আপনার পাপ হইবে।”
পৃথু বলিলেন, “তুমি ভারি দুষ্ট। তোমাকে মারিলে অনেক উপকার হইবে। কাজেই ইহাতে পাপ নাই বরং পুণ্য আছে।”
পৃথিবী বলিল, “প্রজাদের যে উপকার হইবে বলিতেছেন, আমি মরিলে তাহারা থাকিবে কোথায়?”
পৃথু বলিলেন, “কেন? আমি তপস্যা করিয়া তাহদের থাকিবার জায়গা করিব।”
পৃথিবী বলিল, “আমাকে মারিলে শস্য পাওয়া যাইবে না; শস্য পাইবার উপায় আমি বলিতেছি। সে আর এখন শস্য নাই, আমার পেটে হজম হইয়া দুধ হইয়া গিয়াছে। আমাকে দোহাইলে সেই দুধ পাইতে পারেন। কিন্তু একটি বাছুর চাই, নহিলে দুধ বাহির হইবে না। আর জমির উঁচু নিচু দূর করিয়া দিন, যেন দুধ দাঁড়াইতে পারে, গড়াইয়া না চলিয়া যায়।”
রাজা তখনই ধনুকের আগা দিয়া জমির উপরকার টিপি সরাইয়া দিলেন। তাহাতে জমি সমান হইল, আর ঢিপি সকল এক এক জায়গায় জড় হইয়া পর্বতের সৃষ্টি হইল। সমান জমির উপরে দুধ ছড়ান যাইতে পারে। সেই বাছুর হইলেন স্বয়ম্ভূব মনু। এমন বাছুর তো আর সহজে পাওয়া যায় না, তাঁহাকে দেখিয়াই গাইয়ের বাঁট দিয়া দুধ ঝরিতে লাগিল। তখন পৃথু নিজ হাতে গাই দোহাইতে লাগিলেন। সে আশ্চর্য গাই না জানি কতই দুধ দিয়াছিল। সংসারে যত শস্য, সকলই তাহাকে দোহাইয়া পাওয়া গেল, সেই শস্য খাইয়া এখনো আমরা বাঁচিয়া আছি। শুধু তাহাই নহে, পৃথুর পরে দেব, দানো, যক্ষ, রাক্ষস প্রভৃতি সকলে আসিয়া সেই গাই দোহাইতে লাগিল। সকলেই নিজের নিজের বাসন আনিল। নিজেদের এক একটি বাছুর ঠিক করিয়া আনিল, দোহাইবার লোক অবধি আনিতে ভুলিল না। কেহ সোনার বাসনে, কেহ রূপার বাসনে, কেহ লোহার হাঁড়িতে, কেহ পাথরের বাটিতে, কেহ লাউয়ের খোলায়, কেহ পদ্মপাতায় এমনি করিয়া তাহারা কতরকমের জিনিসে যে দোহাইয়া নিল, তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না। তথাপি দুধে কম পড়ে নাই।
পৃথিবীও বঁচিয়া গেল। এত জিনিস যাহার কাছে পাওয়া যায়, তাহাকে কি বুদ্ধিমান লোকে মারে? কাজেই পৃথু তাহাকে ছাড়িয়া দিলেন।
পৃথু তাহাকে প্রাণদান করিয়াছিলেন, তাই আজও পৃথিবী বাঁচিয়া আছে— আর, প্রাণ দিয়াছিলেন বলিয়াই পৃথু পৃথিবীর পিতার তুল্য হইলেন। সেইজন্যই পৃথিবীকে পৃথুর কন্যা বলা হয়, আর তাহার নাম হইয়াছে ‘পৃথিবী’ বা ‘পৃথ্বী’।
যাহা হউক, পৃথিবীর নামের অন্যরূপ অর্থও দেখা যায়। পৃথ্বী বলিতে খুব বড়ও বুঝায়। পৃথিবী যে খুবই বড় তাহাও তো আমরা দেখিতেই পাইতেছি। সুতরাং পৃথিবী নাম যথার্থই হইয়াছে।
১০ .মৎস
মৎস্য শব্দটি 'মতসায়া' অর্থ 'মাছ',যা ,'মত' থেকে উদ্ভূত যার অর্থ 'ধর্ম', 'পরামর্শ', 'জ্ঞান' বা 'ধর্মীয় মতবাদ'।
মৎস্য হল হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর মাছরূপী অবতার। সাধারণত এই অবতারটিকে বিষ্ণুর প্রথম অবতার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে,১০ অবতারের মধ্যে। পুরাণে বর্ণিত হয়েছে, মৎস্য পৃথিবীর প্রথম মানুষ মনুকে এক বিরাট বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। মৎস্য একটি বৃহদায়তন মাছ, অথবা তাঁর শরীরের উর্ধাংশ পুরুষ মানুষের ও নিম্নাংশ মাছের।
প্রাচীন কালে, মৎস্যকে ব্রহ্মার অবতার হিসেবে গণ্য করা হলেও, পরবর্তী কালে একে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে মানা হয়। মৎস্য মনুকে বিধ্বংসী বন্যা সম্পর্কে পূর্বসতর্ক করে এবং তাকে পৃথিবীর সমস্ত শস্য ও জীবসমূহকে একটি নৌকায় জড়ো করতে বলে। বন্যার ক্ষণ উপস্থিত হলে মৎস্য মনু, সপ্তর্ষি ও জিনিসপত্র সমেত নৌকাটিকে টেনে নিয়ে রক্ষা করে। কিন্তু কাহিনীর পরবর্তী সংস্করণে দেখানো হয়েছে, পবিত্র বেদগুলি একটি অসুর চুরি করে এবং মৎস্য ঐ অসুরকে বধ করে বেদগুলি উদ্ধার করেন।
মৎস্য পুরাণ অনুসারে, প্রাগৈতিহাসিক দ্রাবিড় রাজ্যের বিষ্ণুভক্ত রাজা সত্যব্রত (যিনি পরে মনু নামে পরিচিত হন) একদিন নদীর জলে হাত ধুচ্ছিলেন। এমন সময় একটি ছোটো মাছ তাঁর হাতে চলে আসে এবং তাঁর কাছে প্রাণভিক্ষা চায়। তিনি মাছটিকে একটি পাত্রে রাখেন। কিন্তু মাছটি ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে। তিনি সেটিকে প্রথমে একটি পুষ্করিণীতে, পরে নদীতে এবং শেষে সমুদ্রে ছেড়ে দেন। কিন্তু কোনো ফল হয় না। সেটি এতটাই বৃদ্ধি পায় যে সকল আধারই পূর্ণ হয়ে যায়। শেষে মাছটি বিষ্ণুর রূপে আত্মপ্রকাশ করে সত্যব্রতকে জানান যে সাত দিনের মধ্যে প্রলয় সংঘটিত হবে এবং সকল জীবের বিনাশ ঘটবে। তাই সত্যব্রতকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে সকল প্রকার ঔষধি, সকল প্রকার বীজ, সপ্তর্ষি,বাসুকি নাগ ও অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে নিতে।
প্রলয় সংঘটিত হলে মৎস্যরূপী বিষ্ণু পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুসারে পুনরায় আবির্ভূত হন। তিনি সত্যব্রতকে একটি নৌকায় আরোহণ করতে বলেন এবং তাঁর শিঙে বাসুকি নাগকে নৌকার কাছি হিসেবে বাঁধতে বলেন।
মৎস্য জলজ জীবনের প্রতীক হিসাবে পৃথিবীর প্রথম প্রাণী হিসাবে বিশ্বাস করা হয়।মৎস্য আর একটি প্রতীকী ব্যাখ্যা হ'ল মনুর নৌকাটিকে মোক্ষ (মুক্তির) প্রতিনিধিত্ব করতে বিবেচনা করা, যা একজনকে পার হতে সাহায্য করে।
১১ .কুর্ম
হিন্দুধর্মে কূর্ম হল বিষ্ণুর অবতার । এর পূর্বের অবতার মৎস । মৎস অবতারের মত এটিও সত্যযুগের অবতার ।
একদা ঋষি দুর্বাসা দেবরাজ ইন্দ্রকে দিব্য পুষ্পমালা উপহার দিয়েছিলেন । ইন্দ্র সেই মালা সাদরে গ্রহণ করে তার বাহন ঐরাবতের মাথায় রাখেন। কিন্তু ঐরাবত সেই মালা তার শুঁড়ে জড়িয়ে মাটিতে ফেলে নষ্ট করে দেয়। এতে ঋষি ক্রুদ্ধ হয়ে ইন্দ্রকে শ্রীহীন হবার অভিশাপ দেন। ব্রহ্মা তখন পুনরায় অমৃতপ্রাপ্তির জন্য অসুরদের সাহায্যে সমুদ্রমন্থনের পরামর্শ দেন । মন্থন কালে মন্দর পর্বত সমুদ্রে ঢুকে যাচ্ছিল তাই তখন ভগবান বিষ্ণু কূর্ম রূপ ধারণ করে মন্দর পর্বতকে তার পৃষ্ঠে ধারণ করেন। এভাবে পুনরায় অমৃত প্রাপ্তি হয়।
১২ .ধন্বন্তরি
মন্থনরত ক্ষীরসাগর থেকে অন্তিমে দৈব বৈদ্য তথা ধন্বন্তরি অমরত্বের পীযূষ স্বরূপ একটি অমৃৃতের পাত্র নিয়ে উত্থিত হন৷ অমৃৃত প্রাপ্তির জন্য দেবতা ও অসুরদের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হলো৷
ভগবান, ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিদিগের রোগ-নাশ করিয়াছিলেন ; এই অবতারেই ভগবান আয়ুৰ্ব্বেদ অনুশাসন করিয়া যান।
১৩ .মোহিনী
মোহিনী হচ্ছে হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর একমাত্র নারী অবতার। মোহিনীকে প্রলভনসঙ্কুল ও মনোমুগ্ধকর নারী হিসেবে পুরাণে চিত্রায়িত করা হয়েছে যে তার প্রেমিকদেরকে পাগল করে দেয়, এবং কখনও কখনও এর মাধ্যমে তাদেরকে মৃত্যুমুখে নিয়ে যায়। মোহিনীকে হিন্দু পুরাণে মহাভারত নামক মহাকাব্যের মাধ্যমে পরিচয় করানো হয়। মহাভারত অনুসারে বিষ্ণুর একটি রূপ হিসেবে আবির্ভূত হন, এবং অমৃতের (অমর করে এমন একটি রস) পাত্র চুরি করা অসুরদের থেকে অমৃত নিয়ে এসে তিনি দেবতাদের দান করেন, যার ফলে দেবতারা অমরত্ব লাভ করেন।
অসুরগণ অমৃত তাদের কাছে রাখার মতলব আঁটেন। বিষ্ণু তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং তিনি একজন আকর্ষণীয় কুমারীর আকার ধারণ করেন, এবং অসুরদের সাথে ছলনা করেন যার ফলে অসুরগণ তাকে অমৃত দান করে দেয়। এরপর তিনি দেবতাদেরকে অমৃত বণ্টন করে দেন। এরপর রাহু নামের একজন অসুর একজন দেবতার ছদ্মবেশে কিছু অমৃত পান করতে গেলে, সূর্যদেব এবং চন্দ্রদেব দ্রুত বিষ্ণুকে সেসম্পর্কে অবহিত করেন। অবগত হবার পর বিষ্ণু সুদর্শন চক্র ব্যবহার করে রাহুর শিরশ্ছেদ করেন। কিন্তু গলা পর্যন্ত অমৃত যাবার ফলে রাহুর মস্তক অমর হয়ে যায়।
মোহিনীর কার্য নিয়ে বিভিন্ন কিংবদন্তী প্রচলিত রয়েছে, যার মধ্যে শিবের সাথে মিলন একটি। এই গল্পগুলো দেবতা শাস্তার জন্ম, ভষ্মাসুরের বধের মত বিভিন্ন ঘটনার সাথে সম্পর্কিত। মোহিনীর প্রধান কার্যপ্রণালী হচ্ছে যাদের সাথে তিনি লড়াই করবেন তাদেরকে ছলনার মাধ্যমে হারানো।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোতে মোহিনীর দানবদের ধ্বংস করার কথা লেখা আছে। বিষ্ণু পুরাণে মোহিনী ভষ্মাসুরকে ("ভষ্ম" এর অর্থ "ছাই") পরাজিত করে।ভষ্মাসুর শিবের কঠোর তপস্যা করেন, যার কারণে শিব তাকে একটি বর দান করেন। বরটি ছিল, ভষ্মাসুর যার মাথাই স্পর্শ করবে সেই ছাই হয়ে যাবে। ভষ্মাসুর শিবের উপরেই তার এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে উদ্যত হয়।শিব একই স্থানে বসে থাকেন কিন্তু ব্রহ্মা দ্বারা সময়চক্র দাড় করানোর ফলে অনেক চেষ্টা করেও শিবের নাগাল পাননি ভষ্মাসুর। বিষ্ণু এই অহংকারী ভক্তের অসৌজন্যমূলক ঘটনাটির সাক্ষী হন। তিনি মোহিনী রূপ ধারণ করেন এবং ভষ্মাসুরকে তার নিজের প্রতি আকৃষ্ট করেন। ভষ্মাসুর মোহিনীর প্রতি এতটাই আকৃষ্ট হন যে তিনি মোহিনীকে বিবাহ করবার জন্য অনুরোধ করেন। মোহিনী রাজি হন, কিন্তু মোহিনী তার জন্য ভষ্মাসুরকে একটি শর্ত দান করেন। তিনি বলেন ভষ্মাসুরকে তার নাচের মুদ্রা অনুসরণ করে নাচতে হবে। ভষ্মাসুর রাজি হন, এবং নৃত্যের একটি পর্যায়ে মোহিনী তার হাত নিজের মাথায় রাখলে ভষ্মাসুরও মোহিনীর নকল করে নিজের মাথায় তার হাত রাখেন। এর ফলে ভষ্মাসুর নিজেই ছাইয়ে পরিণত হন এবং ধ্বংস হন।
মোহিনী নামটি ক্রিয়া প্রকৃতি মোহ্‌ থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে ছলনা করা বা মোনমুগ্ধ করা।আক্ষরিক অর্থে একে বিভ্রমের মানবরূপকে বোঝায়। মধ্য ভারতের বৈগা সংস্কৃতিতে মোহিনী শব্দের অর্থ হচ্ছে "কামলালসাপূর্ণ যাদু"। এই নামটি "নারীর সৌন্দর্য ও আকর্ষণ এর ভাব" এরও অর্থ প্রকাশ করে।
১৪ .নৃসিংহ
সত্যযুগে ,বৈকুণ্ঠের দ্বারপাল বিজয় সনকাদি মুনি কর্তৃক অভিশপ্ত হয়ে হিরণ্যকশিপু রাক্ষস হিসেবে জন্ম নেয়।মহর্ষি কশ্যপের ঔরসে তৎপত্নী দিতির গর্ভে এই দৈত্যের জন্ম হয়। তার ভাইয়ের নাম হিরণ্যাক্ষ। হিরণ্যাক্ষ বিষ্ণুর হাতে নিহত হলে হিরণ্যকশিপু ব্রহ্মার কঠোর তপস্যায় নিযুক্ত হয় এবং তার নিকট এরূপ বর প্রাপ্ত হয় যে, সে জীব-জন্তু ও যে-কোন অস্ত্রের অবধ্য হবে এবং ভূতলে, জলে বা শূণ্যে ও দিনের বেলা কিংবা রাতের বেলা তার মৃত্যু হবে না। এরূপ বরে প্রচণ্ডভাবে দৃপ্ত ও উজ্জীবিত হয়ে হিরণ্যকশিপু যথেচ্ছাচার নিয়ম-কানুন করে রাজ্যশাসন করতে লাগল।
হিরণ্যকশিপুর পত্নীর নাম কয়াধু। তার গর্ভে চারটি পুত্র জন্মে। তন্মধ্যে প্রহ্লাদ সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন। এছাড়াও, প্রহ্লাদ পরম বিষ্ণুভক্ত ছিলেন, কিন্তু হিরণ্যকশিপু ঘোর বিষ্ণুদ্বেষী ছিলেন।
পিতার তাড়নায় এবং শিক্ষকের উপদেশে প্রহ্লাদ হরিনাম ত্যাগ না করায় হিরণ্যকশিপু তার প্রাণনাশের আদেশ দিলেন। বিষাক্ত সাপের বিষ প্রয়োগ, প্রজ্জ্বলিত আগুন, গভীর জলে ডুবানো, হাতির পদতলে পৃষ্ট হওয়াসহ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের মৃত্যু হয়নি দেখে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে নিজ পুত্রকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "তুমি এ সমস্ত বিপদ, সংকট হতে কিভাবে পরিত্রাণ পেলে?" প্রহ্লাদ হিরণ্যকশি���ুর প্রশ্নের উত্তরে বললেন, "সর্ববিপদভঞ্জন হরিই আমাকে এ সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেছেন।" এরপর হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করলেন, "তোমার হরি কোথায় থাকে?" প্রত্যুত্তরে শিশু প্রহ্লাদ বললেন, "তিনি সবসময়, সব জায়গায় অবস্থান করেন।" দৈত্যরাজ পুনরায় তাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "তোমার হরি এক্ষণে এ স্ফটিকস্তম্ভে আছে কি?" প্রহ্লাদ উত্তর দিলেন, "আছেন বৈ-কি!" এ কথা শুনে প্রচণ্ড গর্জন করে দৈত্য হিরণ্যকশিপু ঐ স্ফটিকস্তম্ভ পা দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলেন। ঐ মূহুর্তেই তা হতে এক নরসিংহ মূর্তি নির্গত হয়ে হিরণ্যকশিপুকে স্বীয় দুই উরুর উপর রেখে দিন ও রাতের সন্ধিকালে নখ দিয়ে রক্তাক্ত করে সংহার করে।
১৫ .বামন
ত্রেতাযুগে আবির্ভুত বিষ্ণুর প্রথম অবতার। দৈত্যরাজ বলিকে দমন করার জন্য বিষ্ণু বামনরূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। পুরাণে বামনাবতার নামেও পরিচিত।
মৎস্য পুরাণের মতে− অসুরদের দ্বারা দেবতারা পরাজিত হয়ে আশ্রয়হীন হলে, দেবমাতা অদিতি পুনরায় শক্তিশালী পুত্রের জন্য বিষ্ণুর আরাধনা করেন। আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে, বিষ্ণু তাঁকে জানান যে, তিনি (বিষ্ণু) কশ্যপের ঔরসে অদিতির গর্ভে জন্মগ্রহণের অঙ্গীকার করেন। এরপর যথাসময়ে অদিতির গর্ভে বিষ্ণুর আবির্ভাব হলে, অসুরেরা ক্রমে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। যথাসময়ে বিষ্ণু বামন রূপে জন্মগ্রহণ করেন।
সেই সময়ের অসুর অধিপতি বলি একটি যজ্ঞের আয়োজন করলে, বামনরূপী বিষ্ণু উক্ত যজ্ঞানুষ্ঠানে গিয়ে ত্রিপাদ-ভূমি (তিন পা রাখার মতো ভূমি) প্রার্থনা করেন। বলি সম্মত হয়ে ভূমি দান করলে, বিষ্ণু তাঁর দেহবর্ধিত করে বিশাল আকার ধারণ করেন। বিষ্ণু স্বর্গে-মর্তে দুই পা রেখে নাভি থেকে তৃতীয় পা বের করেন। এই তৃতীয় পা কোথায় রাখবেন তা বলিকে জিজ্ঞাসা করলে, বলি তাঁর মাথা নত করে তৃতীয় পা রাখার অনুরোধ করেন। বিষ্ণু তৃতীয় পদ বলির মাথায় রাখার সাথে সাথে বলি বিষ্ণুর স্তব করতে থাকেন। এমন সময় প্রহ্লাদ এসে বলির বন্ধন মুক্তির জন্য অনুরোধ করলে, বিষ্ণু বলিকে মুক্তি দেন এবং বলি সত্য রক্ষার জন্য বহুকষ্ট স্বীকার করেছেন বলে, বিষ্ণু দেবতাদের দুষ্প্রাপ্য রসাতলকে তাঁর বাসের জন্য দান করেন।
১৬ .পরশুরাম
তিনি ত্রেতা যুগে এবং দ্বাপর যুগে বর্তমান ছিলেন। পরশুরামের পিতা জমদগ্নি ব্রাহ্মণ হলেও, মা রেণুকা ছিলেন ক্ষত্রিয়। কঠোর তপস্যা করে তিনি শিবের নিকট হতে পরশু লাভ করেন এবং যুদ্ধবিদ্যা শেখেন। কথিত আছে, তিনি সমুদ্রের আগ্রাসন থেকে কোঙ্কণ ও মালাবার অঞ্চলকে রক্ষা করেছিলেন। এই কারণে কেরল ও কোঙ্কণ উপকূলীয় অঞ্চলকে পরশুরাম ক্ষেত্র বলা হয়। পরশুরাম ছিলেন ব্রহ্মক্ষত্রিয়। তিনিই ছিলেন প্রথম যোদ্ধা সন্ত। তার মা অযোধ্যার সূর্যবংশের সন্তান ছিলেন। উল্লেখ্য, এই বংশেই রামচন্দ্রের জন্ম হয়। পরশুরাম ছিলেন শিবের উপাসক ।
মহর্ষি জমদগ্নির আশ্রমে তার সকল সন্তানরা যখন বেদ-বেদান্ত চর্চায় নিয়োজিত থাকতেন, পরশুরামের তাতে কোনো উৎসাহই ছিল না, বরং তীর-ধনুক চালনার কৌশল শিখতেই তিনি বেশি মনোযোগী ছিলেন। জন্মের পর থেকেই পরশুরাম জেনে এসেছেন ক্ষত্রিয়দের শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যেই তার জন্ম হয়েছে। তাতেই যা সর্বনাশ হওয়ার, তা-ই হলো। অল্প বয়স থেকেই তিনি হয়ে উঠলেন দাম্ভিক, রাগী ও প্রতিহিংসাপরায়ণ। দেবতাদের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহের লক্ষ্যে কঠোর তপস্যা শুরু করলেন। তার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে তিনি ব্রহ্মার কাছ বেশ কয়েকটি মারণাস্ত্র আদায় করে নেন।
একদিন ঋষি জমদগ্নি যজ্ঞের আয়োজনে ব্যস্ত। স্ত্রী রেণুকা জল আনতে নদীতে গেছেন। ওই সময় সে নদীতে চিত্ররথ নামে এক রাজা তার স্ত্রীদের সাথে জলবিহার করছিলেন। তা দেখে রেণুকা কামার্ত হয়ে পড়েন। এদিকে রেণুকা তখনও কুটিরে ফিরে না আসায় চিন্তিত ঋষি ধ্যানযোগে স্ত্রীর ওই অবস্থা দেখে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। তৎক্ষণাৎ পুত্রদেরকে মাতৃহত্যার আদেশ দেন। মাতৃহত্যা মহাপাপ। এ জন্য ঋষির প্রথম চার সন্তানই পিতার এ আদেশ পালন করতে রাজি হননি। তখন ঋষি তার চার সন্তানকে জড়ত্বের অভিশাপ দেন। শেষে ঋষি তার কনিষ্ঠ সন্তান পরশুরামকে একই আদেশ দিলে পরশুরাম তার কুঠার দিয়ে মায়ের শিরশ্ছেদ করেন।
পিতৃ আজ্ঞা পালন করায় জমদগ্নি পুত্রের উপর বেশ সন্তুষ্ট হলেন। ঋষি পরশুরামকে যেকোনো বর চাইতে বললেন। পরশুরাম একসাথে মায়ের পুনর্জন্ম, ভাইদের জড়ত্বমুক্তি, নিজের দীর্ঘায়ু ও অজেয়ত্বের বর প্রার্থনা করেন। এর মধ্যে স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি ঋষির ক্রোধও কিছুটা প্রশমিত হওয়ায় জমদগ্নি পরশুরামের সবগুলো প্রার্থনাই পূর্ণ করলেন। কিন্তু মাতৃহত্যাজনিত পাপে পরশুরামের হাতে কুঠারটি লেগেই রইলো। কিছুতেই তিনি হাত থেকে কুঠারটি ছাড়াতে পারলেন না। পিতার কাছে এর কারণ জানতে চাইলেন পরশুরাম। পিতা তাকে জানান, মাতৃহত্যার পাপ থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ কুঠারটি তার হাত থেকে বিযুক্ত হবে না। পিতার আদেশে ব্রহ্মকুণ্ডে স্নান করার পর মাতৃহত্যার পাপ থেকে তিনি মুক্ত হন এবং তার হাত থেকে কুঠারটি বিচ্ছিন্ন হয়।
পুরাকালে কার্তবীর্য নামে এক রাজা ছিলেন। তার আসল নাম ছিল কার্তবীর্যার্জুন। একবার তিনি পুত্রদের নিয়ে মহর্ষি জমদগ্নির আশ্রম দর্শনে আসেন। সেখানে আশ্রমে থাকা কামধেনু গাভীকে দেখে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়ে যান যে, রাতের আঁধারে সেই কামধেনু চুরি করে রাজা তার রাজ্যে নিয়ে আসেন। বিষয়টি জানতে পেরে পরশুরাম রাজাকে হত্যা করে সেই কামধেনুটি আশ্রমে ফিরিয়ে আনেন। এদিকে কার্তবীর্যের পুত্ররা প্রতিশোধ নিতে রাতের আঁধারে জমদগ্নির আশ্রমে হানা দেয়। ধ্যানরত জমদগ্নিকে তারা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন। আশ্রম কুটিরে পিতার বীভৎস মরদেহ দেখে ক্ষুব্ধ পরশুরাম একাই কার্তবীর্যের সব পুত্রকে বধ করেন।পরবর্তীকালে তিনি ক্ষত্রিয়দের উপর এতটাই প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পড়েন যে একুশবার তিনি পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয়শূন্যকরেন। প্রথমবার পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয়শূন্য হওয়ার পর কীভাবে পরশুরাম আরও বিশবার ক্ষত্রিয়শূন্য করেছিলেন, তা জানতে হলে সে সময়ের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে একটু ধারণা নিতে হবে। তৎকালীন সমাজে ব্যক্তির কর্মের ভিত্তিতে তার বর্ণ নির্ধারিত হতো। যারা রাজ্য পরিচালনা ও যুদ্ধের কাজে নিয়োজিত থাকতেন, তারাই ক্ষত্রিয় বলে বিবেচিত হতেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরও ব্যতিক্রম ছিল।ক্ষত্রিয়দের হত্যা করে তাদের রক্ত দিয়ে পরশুরাম পাঁচটি হ্রদ তৈরি করেন। কিন্তু তারপরই তার ভীষণ অনুশোচনা হয়। তিনি পিতৃপুরুষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং অনুরোধ করেন, যাতে পাঁচটি হ্রদ পবিত্র বলে বিবেচিত হয়। পরশুরামের পিতৃপুরুষ তাকে পাপমুক্ত করেন এবং পাঁচটি রক্ত হ্রদ একসাথে সমন্তপঞ্চক বা কুরুক্ষেত্র বলে পরিচিতি লাভ করে।
১৭ .মহর্ষি ব্যাস
বেদব্যাস হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে একজন ঋষি ছিলেন। ইনি বশিষ্ঠের প্রপৌত্র, শক্তির পৌত্র, পরাশরের পুত্র শুকদেবের পিতা। ইনি হিন্দুধর্মের প্রাথমিক প্রত্যাদিষ্ট হিন্দুশাস্ত্র হিসেবে স্বীকৃত বেদের ব্যবহারিক-বিন্যাসকারী , পৌরাণিক মহাকাব্য মহাভারত, বেদান্তদর্শন, প্রভৃতির সংকলক, সম্পাদক ও অবশেষে সমন্বায়ক এক জ্ঞানান্বেষী ঋষি। যমুনানদীতে খেয়া নৌকার ভিতর পরাশর মুনি সত্যবতীর সাথে মিলিত হলে, সত্যবতী গর্ভবতী হন। পরে যমুনার একটি দ্বীপে তার জন্ম হয়। যমুনার দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন বলে এর নাম হয় দ্বৈপায়ন। এঁর গায়ের রং কালো ছিল বলে, পুরো নাম দাঁড়ায় কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন। তার মাথায় কপিল বর্ণের জটা ছিল। তার চোখ ছিল উজ্জ্বল ও মুখে পিঙ্গল বর্ণের দাড়ি ছিল। তিনি তপস্যাবলে মহর্ষিত্ব প্রাপ্ত হয়ে বেদকে চার ভাগে ভাগ করেছিলেন। এই কারণে ইনি বেদব্যাস বা 'ব্যাস' নামে পরিচিত হন। জন্মের পরপরই ইনি তার মায়ের অনুমতি নিয়ে তপস্যার জন্য যাত্রা করে।। তার তপস্যার স্থান ছিল বদরিকাশ্রম। এই কারণে ইনি বাদরায়ণনামেও পরিচিত ছিলেন।
তিনি বেদকে শতশাখাযুক্ত চার ভাগে বিভক্ত করে বেদব্যাস নামে অভিহিত হয়েছেন। মহর্ষি বেদব্যাস বেদ রচনা করেননি বরং বেদকে শুধুমাত্র লিপিবদ্ধ করেছেন এবং চার ভাগে বিভক্ত করেছেন।
"যথাতে সংযোগ হয় বিয়োগ অবশ্য । শরীর অনিত্য জান মরণ অবশ্য।।" মহাভারতের এরকম হাজারও শ্লোকের রচরিতা ব্যাসদেব। মহাভারত হতে জানা যায় যে তিনি মহাভারত লিপিবদ্ধ করার জন্য ব্রহ্মার কাছে একজন লিপিকার নিয়োগের পরামর্শ গ্রহণ করতে গেলে ব্রহ্মা গণেশকে নিয়োগ করতে বলেন। গণেশ এই শর্তে লিপিকার হতে সম্মত হলেন যে, লিপিবদ্ধ করার সময় তিনি ক্ষণমাত্রও থামবেন না। ব্যাস তাতে রাজি হয়ে অপর একটি শর্ত জুড়ে দিয়ে বললেন যে , গণেশ কোনো বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ না বুঝে লিপিবদ্ধ করতে পারবেন না। এরপর গণেশ এই শর্তে রাজি হলে মহাভারত লিখা শুরু হয়। ব্যাসদেব তার শ্লোক রচনার মাঝে মাঝে কিছু জটিল শ্লোক রচনা করতেন। গণেশ এই শ্লোকগুলির অর্থ বুঝে লিখতে যে সময় ব্যয় করতেন, সেই সময়ের মধ্যে ব্যাসদেব আরও অনেক শ্লোক বানিয়ে ফেলতেন।
১৮ .রাম
রাম হলেন হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর সপ্তম অবতার।হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতে তাকে অযোধ্যার রাজা বলা হয়েছে। বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রাম হিন্দুধর্মে তিনি একজন জনপ্রিয় দেবতা। রাম বিষ্ণুর অবতার হলেও তিনি মূলত শিব-এর আরাধনা করতেন। ভারত এবং নেপাল ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে রাম এর পূজা প্রচলিত আছে। রাম সূর্যবংশে (ইক্ষ্বাকু বংশ বা পরবর্তীকালে উক্ত বংশের রাজা রঘুর নামানুসারে রঘুবংশ নামে পরিচিত) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রামের একটি বিশেষ মূর্তিতে তার পাশে তার ভাই লক্ষ্মণ, স্ত্রী সীতা ও ভক্ত হনুমানকেদেখা যায়। এই মূর্তিকে বলা হয় "রাম পরিবার"। হিন্দু মন্দিরে এই "রাম পরিবার" মূর্তির পূজাই বেশি হতে দেখা যায়। রামনবমী তিথিতে ভগবান রামচন্দ্রের জন্ম-উৎসব পালন করা হয়।হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায় ও বৈষ্ণব ধর্মগ্রন্থগুলিতে যেসব জনপ্রিয় দেবতার কথা পাওয়া যায়, তার অন্যতম হলেন রাম। অযোধ্যার রাজা দশরথ ও তার প্রধান স্ত্রী কৌশল্যার জ্যেষ্ঠপুত্র হলেন রাম। হিন্দুরা রামকে বলেন "মর্যাদা পুরুষোত্তম" (অর্থাৎ, "শ্রেষ্ঠ পুরুষ" বা "আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিপতি" বা "গুণাধীশ")।তিনি সীতার স্বামী। সীতাকে হিন্দুরা লক্ষ্মীর অবতার মনে করেন। হিন্দুদের দৃষ্টিতে তিনি নারীর আদর্শ।
ত্রেতাযুগে,বৈকুণ্ঠের দ্বারপাল জয় ও বিজয় সনকাদি মুনি কর্তৃক অভিশপ্ত হয়ে রাবণ ও কুম্ভকর্ন রাক্ষস হিসেবে দ্বিতীয়বার জন্ম নেয়।তারা রঘুনাথের সথে যুদ্ধে পরাজিত হন ও মৃত্যু প্রাপ্ত হন ।
বিষ্ণু সহস্রনাম স্তোত্রে বিষ্ণুর ৩৯৪তম নামটি হল রাম। আদি শঙ্করের টীকা অনুসারে (রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী তপস্যানন্দেরঅনুবাদ) "রাম" শব্দের দুটি অর্থ আছে: যোগীরা যাঁর সঙ্গে রমণ (ধ্যান) করে আনন্দ পান, সেই পরব্রহ্ম বা সেই বিষ্ণু যিনি দশরথের পুত্ররূপে অবতার গ্রহণ করেছিলেন।
১৯ .বলরাম
বলরাম হলেন হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের জ্যেষ্ঠভ্রাতা। তিনি বলদেব, বলভদ্র ও হলায়ুধ নামেও পরিচিত। বৈষ্ণবরা বলরামকে বিষ্ণুর অবতার জ্ঞানে পূজা করেন। ভাগবত পুরাণেরতালিকাতেও তার নাম আছে। বৈষ্ণব ও অন্যান্য হিন্দুরা সবাই তাকে বিষ্ণুর শয্যারূপী শেষনাগের একটি রূপ বলে মনে করেন। দ্বাপর যুগের শেষে বলরামের জন্ম হয় রোহিণীর গর্ভে। রোহিণী হলেন শ্রীকৃষ্ণের পিতা বসুদেবের আর এক পত্নী ও নন্দের ভগিনী। শ্রীহরি বিষ্ণুর আদিশেষ নাগের অবতার হলেন বলরাম। অত্যাচারী কংসের কারাগারে বন্দী বসুদেব ও দেবকীর সপ্তম গর্ভে বলরাম আসেন, কিন্তু কংসের হাত থেকে সেই শিশুকে বাঁচানোর জন্য শ্রীহরির আদেশে দেবী যোগমায়া দেবকীর সপ্তম গর্ভের ভ্রূণ সেখান থেকে নন্দগৃহে রোহিণীর গর্ভে স্থাপিত করেন । ফলে দেবকীর সপ্তম গর্ভ মৃত সন্তান জন্ম দেয় এবং রোহিণীর গর্ভে বলরামের জন্ম হয় । বল মানে শক্তি । শক্তি ও আধ্যাত্মিকতার মিলন হয়েছে বলে তার নাম বলরাম রাখা হয় । তিনি ভ্রাতা শ্রীকৃষ্ণের সহিত অনেক অসুর বধ করেন ও ভাইয়ের সাথে এক মধুর সম্পর্কের আদর্শ স্থাপন করেন।
২০ .কৃষ্ণ
তিনি ভগবান বিষ্ণুর অবতার রূপে খ্যাত। কখনো কখনো তাকে সর্বোচ্চ ঈশ্বর('পরম সত্ত্বা') অভিধায় ভূষিত করা হয় এবং হিন্দুদের অন্যতম ধর্মগ্রন্থ ভগবদ্গীতার প্রবর্তক হিসাবে মান্য করা হয়। হিন্দু বর্ষপঞ্জী অনুসারে প্রতিবছর ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী (জন্মাষ্টমী) তিথিতে তার জন্মোৎসব পালন করা হয়।
সমগ্র মহাভারত কাব্যে, তিনি একজন কূটনীতিজ্ঞ হিসাবে পাণ্ডবপক্ষে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেঅর্জুনের রথের সারথিরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন।হিন্দু দর্শন ও ধর্মতাত্ত্বিক ঐতিহ্যে কৃষ্ণ-সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলি বহুধা পরিব্যাপ্ত। তিনি একাধারে: শিশুদেবতা, রঙ্গকৌতুকপ্রিয়,আদর্শ প্রেমিক, দিব্য নায়ক ও সর্বোচ্চ ঈশ্বর।
কংস দুষ্ট প্রকৃতির প্রজা পীড়নকারী ভোজবংশীয় রাজা ছিলেন। তিনি মথুরারাজ উগ্রসেনের স্ত্রী পদ্মাবতী আর রাক্ষস দ্রুমিলের অবৈধ সহবাসের ফলে জন্মগ্রহণ করেন। মহারাজ উগ্রসেনের অজ্ঞাতে তার পরমাসুন্দরী স্ত্রী মহারাণী পদ্মাবতী সাথে রাক্ষসরাজ দ্রুমিল উগ্রসেনের ছদ্মবেশে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। রাণী পদ্মাবতী তাকে নিজের স্বামী ভেবে আপত্তি করলেন না। দ্রুমিল তার শয়নকক্ষে প্রবেশ করলেন। পুলক সুখে মত্ত হয়ে রাক্ষসরাজ দ্রুমিল আত্মপ্রকাশ করলে তাকে চিনেও রাণী পদ্মাবতী কিছু বললেন না। রাক্ষসের বীর্যে অন্তঃসত্ত্বা হলেন রাণী। গর্ভাবস্থার শেষে জন্ম দিলেন এক পুত্রসন্তানের। নাম দেন কংস। রাক্ষসের ঔরস্যে জন্ম বলেই তিনি রাক্ষস স্বভাব প্রাপ্ত হলেন। তিনি মগধের রাজা জরাসন্ধের দুই কন্যা অস্তি ও প্রাপ্তিকে বিবাহ করেন। তিনি জরাসন্ধের সহায়তায় বৃদ্ধ পিতা রাজা উগ্রসেনকে বন্দি করে মথুরার রাজা হন। এসময় কংসের বোন দেবকীর সঙ্গে বসুদেবের বিবাহ হয়। বিবাহে উপস্থিত থাকা কালে কংস দৈববাণী শুনতে পান যে দেবকীর অষ্টম সন্তান তাকে বধ করবে। তাই তিনি দেবকী ও বাসুদেবকে কারারুদ্ধ করেন। কারাগারে এঁদের পর পর ছয়টি সন্তান হয়, তাদের সকলকে কংস হত্যা করেন। সপ্তম সন্তান শ্রীবলরাম দেবকীর গর্ভ থেকে প্রতিস্থাপিত হন গোকুলবাসী বসুদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী রোহিণীদেবীর গর্ভে। সেখানেই ভাদ্রমাসের পূর্ণিমায় তার জন্ম হয়। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা অষ্টমী তিথিতে মধ্যরাতে কৃষ্ণ নামে অষ্টম পুত্রের জন্ম হয়। বংশ রক্ষার জন্য বসুদেব তক্ষুনি কৃষ্ণকে গোকুলে গোপরাজ নন্দের ঘরে গোপনে রেখে দেন। সেই রাতেই নন্দের স্ত্রী যশোদার কন্যা যোগমায়ারূপে জন্মগ্রহণ করেন দেবী মহাশক্তি। বসুদেব কৃষ্ণকে যশোদার ঘরে রেখে সদ্যোজাত কন্যা যোগমায়াকে নিয়ে মথুরায় প্রত্যাবর্তন করেন। কংস তখন যোগমায়াকে পাথরে নিক্ষেপ করে হত্যা করতে আদেশ দেন, কিন্তু যোগমায়া নিক্ষিপ্ত অবস্থায় আকাশে উঠে গিয়ে বলেন, তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে।
কংস কৃষ্ণকে অনুসন্ধান করে হত্যা করার অনেক চেষ্টা করেন, কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। এরপর কংস যজ্ঞ করে কৌশলে কৃষ্ণকে মথুরায় আনয়ন করেন। এই অনুষ্ঠানে কংসের মল্লযোদ্ধারা কৃষ্ণের হাতে নিহত হয়। এতে কংস অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে দুই ভাই কৃষ্ণ ও বলরামকে নির্বাসনে পাঠাবার আদেশ দেন। এছাড়া তিনি নন্দকে বন্দি এবং উগ্রসেন ও বসুদেবকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। এই আদেশ শোনার সঙ্গে সঙ্গে কৃষ্ণ কংসকে আক্রমণ করেন এবং সিংহাসন থেকে ছূঁড়ে মেরে হত্যা করেন। কংসের আট ভাই বাধা দিলে বলরাম তাদের হত্যা করেন। পরে কৃষ্ণ মাতামহ উগ্রসেনকে সিংহাসনে বসিয়ে মথুরায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
দ্বাপরযুগে, বৈকুণ্ঠের দ্বারপাল জয় ও বিজয় সনকাদি মুনি কর্তৃক অভিশপ্ত হয়ে শিশুপাল ও দন্তবক্র রাক্ষস হিসেবে তৃতীয়বার জন্ম নেয়।তারা শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা নিহত হয়ে মুক্তি লাভ করে।
২১ .বুদ্ধ
সংস্কৃত 'বুদ্ধ' শব্দের অর্থ 'যিনি পরম শাশ্বত বোধ বা জ্ঞান লাভ করেছেন'।
২২ .কল্কি (এখনো হয়নি )
0 notes
meherpurtribune · 3 years
Text
আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে’ এই প্রশ্নের উৎস
Tumblr media
আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে’ এই প্রশ্নের উৎস শয়তান থেকে ‘আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে’ আসলে এটা কোন প্রশ্নই নয়! বিষয়টি ঈমানের সাথে সংশ্লিষ্ট তাই শয়তানের কুমন্ত্রণায় মনে এমন প্রশ্নের উদয় হয়। একটু চিন্তা করলে বুঝা যাবে, ‘আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে’ প্রশ্নটা এখানেই শেষ হয়ে যায় না। এরপর আল্লাহর সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছে, এরপর তাকে কে, তারপর তাকে কে? তারপর তাকে কে? এভাবে প্রশ্ন চলতে থাকবে; কোনদিন শেষ হবে না। আসলে সকল কিছুর অস্তিত্বের জন্য এমন একজন থাকা চাই যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি, যিনি চিরঞ্জীব। স্রষ্টা আর সৃষ্টির মৌলিক পার্থক্য এটিই। স্রষ্টা তাকেই বলে যাকে কেউ সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তিনিই সৃষ্টি করেন। এক ব্যক্তির ঠিক এই প্রশ্নের জবাবে প্রখ্যাত দাঈ ডাক্তার জাকির নায়েক চমৎকার উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এ প্রশ্নের উত্তর আমি আরেকটি প্রশ্নের মাধ্যমে দিই। ধরুণ জন নামের এক ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য। তিনি একটি সন্তান জন্ম দিলেন। আপনি কি বলতে পারবেন, ওই সন্তানটি ছেলে না মেয়ে? ডা. জাকির নায়েক কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পরও উত্তর পেলেন না। তখন তিনি বললেন, এখানে বাস্তবতা হলো, জন একজন পুরুষ, সে কিভাবে সন্তান জন্ম দেবে? তাই এমন প্রশ্ন করাও বোকামি যে, তার বাচ্চাটি ছেলে না মেয়ে! তদ্রুপ কেউ যদি প্রশ্ন করে, ‘আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছেন’ তাহলে বলবো, এটা অযৌক্তিক প্রশ্ন। কেউ ঈশ্বরকে সৃষ্টি করতে পারে না, যদি ঈশ্বর সৃষ্টি হয়ে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে তিনি ঈশ্বর নন। আল্লাহ তায়ালার সংজ্ঞা আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন এভাবে ‘বলুন, আল্লাহ এক, তিনি অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই”। -সূরা ইখলাছ (সূত্র: পিস টিভি) হাদীসে এসেছে, “হে আল্লাহ্ আপনিই প্রথম; আপনার আগে কিছু নেই। আপনিই শেষ; আপনার পরে কিছু নেই।” -সহিহ মুসলিম (২৭১৩) শয়তান এমন কুমন্ত্রণা দিলে হাদীস অনুযায়ী তাকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করতে হবে। পড়তে হবে, ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম’ অথবা সূরা ইখলাস। এ প্রসঙ্গে হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেন, “মানুষ প্রশ্ন করতেই থাকবে, করতেই থাকবে। এক পর্যায়ে বলবে, এ সৃষ্টিগুলোকেতো আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন, তাহলে আল্লাহ্কে কে সৃষ্টি করেছে? যে ব্যক্তি এমন কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হবে সে যেন বলে, আমি আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনলাম।” রাসূল (সঃ) আরও বলেন, “তোমাদের কারো কাছে শয়তান এসে বলে, কে আসমান সৃষ্টি করেছে? কে জমিন সৃষ্টি করেছে? সে যেন বলে: আল্লাহ্। এরপর পূর্বের হাদিসের ন্যায় (আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনলাম) উল্লেখ করেছেন। সে বর্ণনাতে, رسله (রাসূলগণ) কথাটি অতিরিক্ত আছে। (অর্থাৎ আমানতু বিল্লাহি ওয়া রাসূলিহি। অর্থ- আমি আল্লাহ্র প্রতি ও রসূলগণের প্রতি ঈমান আনলাম) রাসূল (সঃ) আরও বলেন: “তোমাদের কারো কাছে শয়তান এসে বলে, এটা এটা কে সৃষ্টি করেছে? এক পর্যায়ে বলে, তোমার প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যদি কারো প্রশ্ন এ পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন সে যেন আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং এ প্রসঙ্গ বাদ দেয়।” -উল্লেখিত সবগুলো হাদিস সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে মো: মারুফুল আলম মানব সভ্যতার ইতিহাসে ২০০ বছর আগেও আপনি নাস্তিকতার সন্ধান পাবেন না : ড. ইয়াসির কাদি জীবন যুদ্ধে একজন মু'মিনের কোন পরাজয় নেই। কিয়ামতে বিশ্বাস আমাদেরকে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়, জীবনে কিছু অর্জন করার প্রেরণা যোগায়। এটা আমাদেরকে জীবনে একটি লক্ষ্য থাকার প্রেরণা যোগায়, জীবনের একটি অর্থ থাকার প্রেরণা যোগায়। আপনি যখন কিয়ামতে বিশ্বাস না করেন তখন জীবন হয়ে পড়ে অর্থহীন। সত্যিই। বেঁচে থাকার অর্থ কী? এই সমস্ত কিছুর উদ্দেশ্য কী? এই দ্বন্দ্বটি নীটশে নামক একজন দার্শনিক সর্বপ্রথম তুলে ধরেন। বলা হয়, সে নিজেও একজন নাস্তিক ছিল। বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক, সে জীবনের শেষ দিকে পাগল হয়ে যায়। প্রকাশ্যে নিজেকে নাস্তিক দাবি করা দার্শনিকদের মাঝে সে ছিল প্রথম দিকের একজন। প্রসঙ্গতঃ নাস্তিকতা খুবই আধুনিক একটি ব্যাপার। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ২০০ বছর আগেও আপনি নাস্তিকতার সন্ধান পাবেন না। এটি খুবই সাম্প্রতিক একটি ধারণা। বর্তমানে আমরা যেভাবে বুঝি। এমনকি দুইশ বছর আগেও সামান্য কিছু মানুষ নাস্তিকতায় বিশ্বাস করতো। শুধু গত শতকে, বিশেষ করে গত ৫০ বছরে নাস্তিকতা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এটি আরেকটি ইন্টারেস্টিং বিষয়। আক্ষরিক অর্থেই, সর্বপ্রথম যে দার্শনিক সরাসরি সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করে সে হল, নীটশে। তার একটি কুখ্যাত প্যাসেজ রয়েছে যার নাম হল, "ডেথ অফ গড", আউজুবিল্লাহ। এমনকি সেই প্যাসেজেও, যদি প্যাসেজটি পড়েন, সে ঐ প্যাসেজে একটি উপমা দিয়েছে। সেখানে একদল লোক বিশ্বাস করে যে তারা গডকে হত্যা করে ফেলেছে। নীটশে তখন তাদেরকে বলল, "তোমরা কি উপলব্ধি করতে পারছ না যে গডকে হত্যা করার মাধ্যমে তোমরা আসলে নিজেদের হত্যা করে ফেলেছ?" নীটশে নিজেই এটা লিখল। মানে, তোমরা গডের ধারণাকে হত্যা করে ফেলেছ, গডের কোন ধারণা আর তোমাদের মাঝে অবশিষ্ট নেই। নীটশে তাদেরকে বলছে, তোমরা গডের ধারণাকে বিলুপ্ত করার মাধ্যমে তোমাদের নিজেদের অস্তিত্বকেই বিলুপ্ত করে ফেলেছ। এখন, জীবন হয়ে পড়েছে অর্থহীন। তারপর সে তার নিজস্ব দার্শনিক ভঙ্গিতে লিখল - "এখন উপর হয়ে গেল নিচ, নিচ হয়ে গেল উপর। অন্ধকার হয়ে গেল আলো আর আলো হয়ে গেল অন্ধকার।" অর্থাৎ, সবকিছুই এখন বিলুপ্ত হয়ে পড়ল। এখন, তোমাদের আর কোন শিকড় অবশিষ্ট রইল না। নৈতিকতা হারিয়ে গেল, যা বর্তমানে আমরা প্রত্যক্ষ করছি। গতকাল যা খবিস ছিল আজ তাকেই খাঁটি হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে। আপনি যখন গডের ধারণাকে দৃশ্যপট থেকে দূর করে দেন, তখন শুধু নৈতিকতা নয়, আপনার অস্তিত্বই দূর হয়ে যায়। আমাকে আরেকটি কথা বলতে হচ্ছে - বিষয়টা কিছুটা স্পর্শকাতর। আমি ভদ্রভাবে বিষয়টা উপস্থাপনের চেষ্টা করবো। বর্তমানে আমরা মানসিক অশান্তি এবং ডিপ্রেশনের এমন এক প্রবল জোয়ার প্রত্যক্ষ করছি, মানব সভ্যতার ইতিহাসে যার আর কোন নজির পাওয়া যায় না। এমনকি আমার বেড়ে উঠার কালেও কিশোর কিশোরীদের এভাবে ডিপ্রেশনে ভুগতে দেখা যায়নি। তরুণ ছেলে মেয়েরা যাদের সামনে সমস্ত জীবন পড়ে আছে তারাই ডিপ্রেশনে ভুগছে! একটু খোঁজ নিলে জানবেন সাইক্রিয়াটিস্ট এবং সাংবাদিকরা 'জীবনে অর্থহীনতার উত্থান' নিয়ে কথা বলছেন। তরুণ তরুণীদের মানসিক বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হচ্ছে, ঔষধ খেতে হচ্ছে। আমি বলছি না যে, ডাক্তারের কাছে যাওয়া খারাপ। কিন্তু আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত - কেন? কেন আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে? খুবই স্পর্শকাতর একটি সাবজেক্ট। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন। এই প্রজন্মের তরুণ তরুণীরা যে হারে আত্মহত্যা করছে মানব ইতিহাসের কোনো কালে এমনটি দেখা যায়নি। আর সবকিছু যেভাবে এগোচ্ছে এর মাত্রা আরো খারাপ হবে। আমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এখন প্রশ্ন হলো কেন? কেন এই হারে মানুষের মাঝে হতাশা দেখা যাচ্ছে? আমাদের কাছে ব্যাপারটা সুস্পষ্ট। যখন আপনি জীবন থেকে সৃষ্টিকর্তাকে দূর করে দেন, ধর্মকে দূর করে দেন, আখিরাতকে দূর করে দেন - তখন জীবন হয়ে পড়ে অর্থহীন। জীবনে এভাবে বেঁচে থাকার অর্থ কী? যখন আপনাকে শুধু একটার পর একটা লড়াই অতিক্রম করতে হয়, কষ্ট পেতে হয়, প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হতে হয় - এইসব কিছুর মানে কী? সবশেষে তো আপনি এমনিতেই চিরতরে হারিয়ে যাবেন। তাই জীবনের সকল ধকল ভোগ করার চাইতে তারা এখনই নিজেকে শেষ করে দেয়। কিন্তু, আপনি যদি কিয়ামত দিবসে বিশ্বাস করেন এটা আপনার ভেতরটা আবার জীবিত করে তোলে। আপনার জীবনকে বাঁচার যোগ্য এবং অর্থপূর্ণ করে তোলে। এটা ছিল দ্বিতীয় পয়েন্ট। তৃতীয় পয়েন্ট হল - এই পয়েন্টটি দ্বিতীয় পয়েন্টের সাথে সম্বন্ধযুক্ত - এটা যে শুধু আপনার জীবনকে বাঁচার যোগ্য করে তোলে তাই নয়, এটা আপনাকে ভবিষ্যতের ব্যাপারে প্রবলভাবে আশান্বিত করে তোলে এই অর্থে যে, ভবিষ্যৎ অতীতের চেয়ে উত্তম হবে। আর এই কথাটি একেবারে পরিষ্কারকরে দ্বিতীয় মতান্তরে তৃতীয় ওহীতে বলা হয়েছে - "ওয়া লাল আখিরাতু খাইরুল লাকা মিনাল উলা।" এটা একেবারে স্পষ্ট ভাষায় কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই দুনিয়াতে যাই ঘটুক না কেন, পরকালে আপনার জন্য উত্তম কিছু অপেক্ষা করছে। এটা আমাদের প্রকৃতিতেই আছে, আমরা ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশাবাদী হতে চাই। কর্পোরেট সেন্সে বলতে গেলে - চাকরিতে যদি কঠিন কোন সময় পার করতে হয়, মাস শেষে মোটা অঙ্কের চেকের কথা ভেবে আপনি আশাবাদী হয়ে উঠেন। যত কষ্টই হউক না কেন আমি চাকরি করে যাবো। কারণ, মাস শেষে আমি বোনাস পাবো। এটা আপনার মাঝে আশা জাগিয়ে তোলে, উৎসাহ জাগিয়ে তোলে। আল্লাহ আমাদেরকে বলছেন এই দুনিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হইও না, "ওয়া লাল আখিরাতু খাইরুল লাকা মিনাল উলা" - “আপনার জন্যে পরকাল ইহকাল অপেক্ষা শ্রেয়।” সত্যি বলতে, জীবন আসলেই কঠিন। কখনো কখনো খুবই হতাশাজনক হতে পারে। জীবনে এমন অনেক কিছুই ঘটে যা আমাদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। কিন্তু একজন বিশ্বাসীর জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। একজন বিশ্বাসী যখন কিয়ামতে বিশ্বাস করে তখন তা এক ধরণের প্রশান্তি নিয়ে আসে, এখন যাই হউক না কেন, আখিরাত আমার জন্য উত্তম হবে। এটা একজন মানুষকে আশাবাদী করে তোলে। আর তাইতো আমাদের রাসূল (স) বলেছেন - "আজাবাল লি আম্রিল মুমিন ফা ইন্না আম্রাহু কুল্লাহু খাইর।" "মুমিনের বিষয়টি কতইনা আশ্চর্য জনক! তার প্রত্যেকটি বিষয় কল্যাণকর।" তার কোন পরাজয় নেই। কীভাবে একজন মু'মিনের কোন পরাজয় নেই? কারণ, সে আখিরাতে বিশ্বাস করে। যদি কোন আখিরাত না থাকত তাহলে সত্যি সত্যিই পার্থিব এই জীবন যুদ্ধকে সবসময়ের পরাজিত যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করা যেত। -- ডঃ ইয়াসির কাদি Read the full article
0 notes
debajitb · 3 years
Text
আপনার গোত্র আপনি ঠিক করুন
আপনার গোত্র আপনি ঠিক করুন - সমরেশ মজুমদার
কাল রাত্রে খুব Up হয়ে টেলিফোন করেছিল মউলি, ‘খুব জরুরি, কাল আসতে পারবে ?’
‘কী হয়েছে রে?’
‘এসে শুনবে। আমি কোন যুগে বাস করছি, বুঝতে পারছি না, তুমি বুঝিয়ে দেবে।’
মউলি আমার বন্ধু পরমব্রতর মেয়ে। ওর মা আরতি স্কুলে পড়ায়। পরমব্রত এক জন উঁচু পদের সরকারি চাকুরে। ওদের একমাত্র মেয়ে মউলি কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রি নিয়ে এ বছরে চাকরি শুরু করেছে। খুব ভাল মাইনে। অতএব পর দিন গেলাম ওদের বাড়িতে।
আমাকে দেখে আরতি গম্ভীর হল, ‘আসুন। নিশ্চয়ই মেয়ে টেলিফোন করেছিল। প্লিজ, ওকে বোঝান। শোনার পর আমার ঘুম চলে গিয়েছে।’
সোফায় বসে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সমস্যাটা কী?’
এই সময় পরমব্রত ঘরে এল, ‘এসেছিস। শোন, আমাদের ভরদ্বাজ গোত্র। এ দিকে মউলি ��ে ছেলেটিকে পছন্দ করেছে, তারাও একই গোত্র।’
আরতি বলল, ‘হ্যাঁ, মানছি অর্ণব ভাল ছেলে, ভাল চাকরি করে। কিন্তু, একই গোত্রে কখনও বিয়ে হতে পারে না। ঠিক কি না, বলুন?’
পরমব্রত বলল, ‘এই নিয়ে প্রবল অশান্তি হচ্ছে বাড়িতে। যুগযুগান্ত ধরে আমাদের পূর্বপুরুষরা যা মেনে এলেন, তার পিছনে কোনও লজিক নেই?’
মউলি এসে দাঁড়াল দরজায়, ‘এ রকম বোকা কথা কখনও শুনেছ, সমরেশকাকু?’
পরমব্রত রেগে গেল, ‘কাকে বোকামি বলছ? আমরা হিন্দু, আমাদের—’
হাত তুলে বাবাকে থামিয়ে দিল মেয়ে। ‘দাঁড়াও, দাঁড়াও। তুমি হঠাৎ হিন্দু হয়ে গেলে কী করে? অদ্ভুত তো!’
আরতি ঘাবড়ে গেল, ‘তার মানে?’
‘মা, তোমাদের টাইটেল চ্যাটার্জি বলেই তোমরা হিন্দু হতে পার না। জ্ঞান হওয়ার পর আমি একটি দিনের জন্যে তোমাদের হিন্দু ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে দেখিনি। বাবার নাকি পৈতে হয়েছিল। আমি কখনও দেখিনি। এই ফ্ল্যাটে ঠাকুরঘর দূরের কথা, কোনও দেবতার ছবি নেই। শাঁখটাক বাজে না। পুজোর সময় তোমরা আগেই প্ল্যান করে রাখো বেড়াতে যাওয়ার। কালীপুজোর সময় জানলা বন্ধ রাখো, শব্দে কান ঝাঁ ঝাঁ করে বলে। কলকাতায় থাকলে পুজোর ছুটি মানে অবধারিত পার্টি হবে। তা হলে নিজেকে হিন্দু বলতে অসুবিধে হচ্ছে না?’ মউলি মাথা নাড়ল, ‘প্লিজ বাবা, হিপোক্রিট হয়ো না। হিন্দু না হয়েও আমরা ভাল আছি।’
‘যা মুখে আসছে, তা-ই বলছ! হ্যাঁ, পুজো-আচ্চায় আমরা নেই বটে, পৈতে, বিয়ে অথবা শ্রাদ্ধের সময় আমরা হিন্দু মতেই কাজ করি। তখন গোত্রের প্রয়োজন হয়। পুরোহিতমশাই জানতে চান গোত্র কী।’ বলল পরমব্রত।
এ বার মউলি আমার দিকে তাকাল, ‘সমরেশকাকু, এই গোত্র ব্যাপারটার গল্পটা কী?’
বললাম, ‘প্রথমে হিন্দুদের শ্রেণীবিন্যাস হয়েছিল আট জন ঋষির নাম ধরে। ঋষির সন্তান বা শিষ্যরা তাঁর গোত্রের মানুষ বলে চিহ্নিত হয়েছেন।’
‘কত জন ঋষি?’ মউলি জিজ্ঞাসা করল।
‘আট জন। এঁরা ছিলেন প্রবর্তক ঋষি। এঁদের নাম ভরদ্বাজ, জমদগ্নি, কশ্যপ, বশিষ্ঠ, অগস্ত্য, অত্রি, বিশ্বামিত্র এবং গৌতম। পরে আরও কিছু নাম সংযোজিত হয়েছে।’
‘বাবা বলেছে আমাদের গোত্র ভরদ্বাজ, তার মানে তাঁর থেকেই আমাদের শুরু।’ ‘প্রচলিত ধারণা তাই। ধর্মশাস্ত্রে ব্রাহ্মণদের গোত্র নিয়েই বেশি বলা হয়েছে। ক্ষত্রিয়, কায়স্থদের গোত্র নির্ধারিত হয়েছে তাঁদের কুলগুরুর গোত্র থেকে।’ বললাম।
‘ঠিক এই মুহূর্তে পশ্চিমবাংলায় ভরদ্বাজ গোত্রের মানুষ ক’জন আছেন?’
বললাম, ‘বলতে পারব না রে। গোত্র নিয়ে কাউকে কথা বলতে শুনি না।’
‘কোথাও কি লেখা আছে যে, এক গোত্রের মধ্যে বিয়ে হবে না?’ প্রশ্ন করল মউলি।
‘প্রচলিত মত তাই।’
‘কেন? হবে না কেন?’
উত্তরটা দিল আরতি, ‘কারণ শরীরে একই রক্ত বইছে। ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে হয় না।’
‘আচ্ছা। সমরেশকাকু, এই ভরদ্বাজ ঋষি কবে জন্মেছিলেন?’
বললাম, ‘উনি বৃহস্পতির ছেলে। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে সত্যযুগে।’
‘ওঁর মায়ের নাম?’
‘ওঁর ঠিক মা নেই। মানে, উনি মাতৃগর্ভে জন্মগ্রহণ করেননি।’
‘মাই গড!’ চোখ কপালে উঠল মউলির, তা হলে?’
‘পুরাকালে ওসব হত। যজ্ঞের পায়েস খেয়ে দশরথের রানিরা মা হয়েছিলেন।’
‘ভরদ্বাজের তো মা ছিলেন না, তা হলে তিনি কী করে জন্মেছিলেন?’
মউলির দিকে তাকালাম, ‘উতথ্য ঋষির ভাই বৃহস্পতি এক দিন তাঁর বউদি মমতাকে একা পেয়ে কামনা করলেন। মমতা রাজি না হওয়ায় তিনি বলপ্রয়োগ করতে চাইলে মমতার গর্ভের শিশু বাধা দেয়। তাতে বৃহস্পতি শিশুকে অন্ধ হওয়ার অভিশাপ দেন। কামনার কারণে বৃহস্পতির শরীর থেকে একটি শিশুর জন্ম হয়, যার দায়িত্ব মমতা নিতে চাননি, বৃহস্পতিও না। তখন দিতির সন্তান মরুদ্‌রা এসে শিশুটিকে পালন করে। মরুদ্‌দের দ্বারা ভৃত হয়েছিলেন বলে ‘ভর’ আর সংকর বলে ‘দ্বাজ’ বলা হল। দুইয়ে মিলে ভরদ্বাজ।
‘সর্বনাশ। তা হলে তো ভরদ্বাজ একটি বাস্টার্ড।’
আরতি চিৎকার করল, ‘মউলি?’
মউলি বলল, ‘ঠাণ্ডা মাথায় ভাবো। যার মা নেই, বাবার লাম্পট্যের কারণে যার জন্ম, সে কি স্বাভাবিক? সমরেশকাকু, ভদ্রলোক কত বছর আগে পৃথিবীতে ছিলেন?’
‘এই তো মুশকিলে ফেললে! সত্য, দ্বাপর, ত্রেতা এবং কলি— এই হল চার যুগ। কলিযুগ শুরু হয়েছে খ্রিস্ট পূর্বাব্দ তিন হাজার একশো এক-এ। তার মানে কলির বয়স এখন পাঁচ হাজার। ত্রেতার কাল যা লেখা আছে, তা হল বারো লক্ষ পঁচানব্বই হাজার বছর, দ্বাপরের বয়স আট লক্ষ পঁচাশি হাজার বছর। বৃহস্পতি যদি সত্যযুগের হন, তা হলে ভরদ্বাজও তাই হলে মিনিমাম একুশ লক্ষ পঁচাশি হাজার বছর আগে ধরে নিতে পারো।’ বলতে বলতে নিজেই ধন্দে পড়লাম।
মউলি হাসল, ‘এই এত লক্ষ বছর ধরে প্রতিটি বাবা তাঁর ছেলেদের বলে গেছেন যে, তাঁর গোত্র কী এবং সেটা ছেলেরা তাঁদের সন্তানদের বলেছে? এই ভাবে রিলে হয়ে বাবার কাছে পৌঁছে গেছে? তুমি বিশ্বাস কর?’
‘না। করি না।’ মাথা নাড়লাম আমি।
পরমব্রত এবং আরতি আমার দিকে তাকাল।
বললাম, ‘যিশুখ্রিস্টের মৃত্যুর সময় বাঙালি বলে কোনও জাতি ছিল না। ভাষা তো দূরের কথা, এই এলাকার মানুষ, মুনি ঋষিদের নাম দূরের কথা সব ভগবানের অস্তিত্ব জানত কি না সন্দেহের।’
মউলি খুব খুশি হল, ‘বাবা, তোমার বক্তব্য কী?’
পরমব্রত বলল, ‘আমি এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ নই। হয়তো আমরা পরে আবিষ্কার করেছি। কিন্তু, গোত্রের প্রয়োজন হয়েছিল মানুষের পরিচয়ের জন্যে, তা তো ভুল নয়।’
মউলি আমার দিকে তাকাল, ‘তা হলে ঋষি কেন? তখন তো দেবতারা প্রায়ই পৃথিবীতে আসতেন। অপ্সরা এসে মুনিদের ধ্যান ভাঙাত। তা হলে হিন্দুদের গোত্রের জনক দেবতারা হলেন না কেন? ওঁরা তো সুপার পাওয়ার।’
‘কারণ, প্রজাপতি ব্রহ্মা, যিনি ত্রিলোক সৃষ্টি করেছেন, তিনিই মানুষের স্রষ্টা। ব্রহ্মা আট জন প্রবর্তক ঋষির ওপর মানবজীবন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেন।’
‘আচ্ছা, সমরেশকাকু, যে লোকটা তখন নরওয়ে বা চিলিতে জন্মেছিল, তার সম্পর্কে ব্রহ্মার কোনও দায়িত্ব ছিল না?’ মউলি হাসল।
পরমব্রত বিরক্ত হল, ‘ঠাট্টা করছ? পৃথিবীর সব ধর্মেরই নিজস্ব ইতিহাস আছে।’
‘আগে তো মানুষ সৃষ্টি হয়েছিল, তার অনেক পরে ধর্ম।’ মউলি জোর গলায় বলল। ‘আচ্ছা, সমরেশকাকু, ভরদ্বাজ ঋষির কথা তো শুনলাম। অন্য সাত জনের সম্পর্কে কি কিছু বলবে?’
‘দ্যাখো, এঁরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত জ্ঞানী এবং অসম্ভব ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। কশ্যপকে বলা হয় ব্রহ্মার মানসপুত্র। ওঁর স্ত্রীরা সবাই জগৎপ্রসবিনী। যেমন, অদিতি হলেন দেবতাদের মা, দিতি দৈত্যদের, ইলা হলেন বৃক্ষ বা উদ্ভিদের জননী। জমদগ্নি ঋষিকে বলা হয়েছে চার বেদের ওপর অসাধারণ জ্ঞানী। ঋষি গৌতম ছিলেন মানুষের আচার এবং রীতিনীতি বিষয়ক সংহিতাকার। ঋষি অত্রি ঋগ্বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা, অথর্ব বেদে এঁর ভূমিকা প্রবল। ব্রহ্মা প্রথমে যে সপ্তর্ষিকে সৃষ্টি করেন, অত্রি তাঁদের অন্যতম।’
‘বাব্বা! ঠিক আছে আর শুনতে চাই না। বাবা, তুমি তোমার ক’জন পূর্ব পুরুষের নাম জানো? মা, তুমিও বল?’ মউলি বিষয় ঘোরাল।
পরমব্রত বলল, ���আমি বাবার ঠাকুরদার নাম জানি।’
‘অর্থাৎ, তোমার আগের তিন পুরুষ। ম্যাক্সিমাম একশো বছর। অথচ, দাবি করছ, একুশ লক্ষ বছর আগে যিনি তোমাদের প্রথম পুরুষ, তাঁর নাম জানো। নিজেকেই প্রশ্ন কর না? বিশ্বাস করছ?’ মউলি বলল।
আরতি উঠে দাঁড়াল, ‘এ সব প্রশ্ন আমি কখনও করিনি।’
‘ভাবোনি, তাই করোনি। তোমার মায়ের দিদিমার নাম তুমি জানো, মা?’
‘না।’
‘তা হলে বোসো।’
বললাম, ‘মউলি অত লক্ষ বছর ধরে আমরা কেউ গোত্র-পিতার নাম মনে করে রাখিনি। বড় জোর চার-পাঁচশো বছর আগে প্রতিটি পরিবারের কুলগুরুর নির্দেশে আমরা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। অর্থাৎ, সেই কুলগুরু যে ঋষিকে গুরু বলে মেনেছেন, তাঁর নামে আমাদের গোত্র হয়েছে।’
মউলি হাসল, ‘সব কুলগুরু যদি এক জনকেই গুরু বলে স্বীকার করতেন, তা হলে সমস্ত বাঙালির গোত্র এক হয়ে যেত? বিয়ে হত না?’
আরতি বলল, ‘তা কেন হবে? আট জনের আট রকম ধারা।’
‘শেষ কথা বলছি। বাবা, পৃথিবীর প্রথম পুরুষ আদম, প্রথম নারী ইভ। আমরা সবাই তাদের বংশধর। তা হলে তো মায়ের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক ভাইবোনের। তাই না?’ মউলি বলল।
আরতি উঠে গেল। পরমব্রত মাথা নাড়ল, ‘কত কাল আগে কী হয়েছিল—’
‘একুশ লক্ষ বছর কি এই সেদিনের কথা?’ মউলি জিজ্ঞাসা করল, ‘কিন্তু একটা ইন্টারেস্টিং মিল দেখতে পাচ্ছি, সমরেশকাকু। তুমি আট জন ঋষির নাম বললে, যাঁরা গোত্রের জনক। মানুষের শরীরে যে রক্ত বইছে, তাও কিন্তু আট ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ, বি, এবি, এবং ও। প্লাস এবং মাইনাস। বাবার যে গোত্র, তা ছেলেদের মানতে হচ্ছে, কিন্তু বাবার যা ব্লাড গ্রুপ, তা সব ছেলের নাও হতে পারে। আর, একই ব্লাড গ্রুপ হলেও দুজন মানুষের বিয়েতে কোনও সমস্যা নেই।’ মউলি সোজা হল, ‘বাবা, কোনও কিছু মানছ না, হঠাৎ নিজেকে হিন্দু মনে করে গোত্র টেনে আনছ, এটা কিন্তু সমর্থনযোগ্য নয়। বরং আমি আর অর্ণব রক্ত পরীক্ষা করাব। দেখব, সব ঠিকঠাক আছে কি না।’ মউলি চলে যেতে দাঁড়াল, ‘যদি গোত্রের নাম বলতে হয়, তা হলে বলব আমার গোত্র হল পরমব্রত-আরতি।’ সে চলে গেল।
পরমব্রত অসহায় চোখে তাকাল, ‘তুই ভরদ্বাজ মুনি সম্পর্কে যা বললি, তা সত্যি?’
বললাম, ‘রেখেঢেকে বলেছি। মমতা ছিলেন বৃহস্পতির বউদি। বউদি গর্ভিনী জেনেও তাঁকে একা পেয়ে বৃহস্পতি সঙ্গম করতে চান। মমতা আপত্তি করলে বলপ্রয়োগ করেন। তখন মমতার গর্ভের শিশু দুই পায়ে কাকার অপচেষ্টাকে বাধা দেয়। ফলে, বৃহস্পতির অভিশাপে সে অন্ধ হয়ে যায়। মমতার শরীরে না পৌঁছে বৃহস্পতির বীর্য মাটিতে পড়ে এবং একটি শিশু জন্ম নেয়। বৃহস্পতি মমতাকে সেই দ্বিতীয় শিশুর মা হতে বললে তিনি রাজি হন না। পরে সেই সন্তানই ভরদ্বাজ মুনি হিসেবে পরিচিত হন।’
‘তার পর?’
‘মানুষের রোগ দূর করার জন্যে ইনি ইন্দ্রের কাছে গিয়ে আয়ুর্বেদ শাস্ত্র পাঠ করেন। ফিরে এসে মর্তের ঋষিদের আয়ুর্বেদ শিক্ষা দেন। মহাভারতে দেখা গেছে এঁর আবাস হরিদ্বারে। রামায়ণেও এঁকে পাওয়া গিয়েছে। ভরতের জন্যে ইনি মরুৎস্তোম যজ্ঞ করে তাঁকে পুত্র দান করেন। তবে, তখনকার দিনে যেমন হত, তার বাইরে তিনি যাননি। গঙ্গায় ঘৃতাচী নামে এক অপ্সরাকে স্নান করতে দেখে ভরদ্বাজের শুক্রপাত হয়। তা থেকে জন্ম হয় দ্রোণের। ভরদ্বাজের ছেলে যবক্রীত রৈভ্যের পুত্রবধূকে ধর্ষণ করায় রৈভ্য তাঁকে হত্যা করেন। কিছু না জেনে ভরদ্বাজ তাঁকে অভিশাপ দেন যে, তিনি বিনা অপরাধে ছেলের হাতে মারা যাবেন। পরে ভুল বুঝতে পেরে আগুনে আত্মাহুতি দেন। দ্যাখো, এ সব কাহিনির সত্যতা কে বিচার করবে? পৌরাণিক প্রায় সব চরিত্রই আজকের নিরিখে চরিত্রহীন।’
মুখ নিচু করে বসেছিল পরমব্রত। তার পর বলল, ‘এই সব বন্ধ করা উচিত।’
‘তা হলে মউলি ঠিক?’
‘জানি না। আমরা ওকে যে ভাবে বড় করেছি, আজ নতুন করে তার বিপরীত ভাবনা চাপিয়ে দিলে মানবে কেন? আসলে আমার বাবা, ঠাকুরদা যা বলতেন তা মেনে নিয়েছি, প্রশ্ন মনে এলেও মুখে কখনও বলিনি।’ পরমব্রতকে অন্য রকম দেখাল।
বললাম, ‘অনেক ধন্যবাদ। পুরীর মন্দিরে গিয়েছিস? মন্দিরের বাইরে অনেক মিথুন মূর্তি, ভেতরে জগন্নাথ। আমাদের পৌরাণিক কাহিনিগুলো যদি উপদেশে ভরা থাকত, তা হলে লোকে শুনত না, পরে পড়ত না। এগুলো থেকেই বোঝা যায়, সে সময়ের মানুষের রুচি কী রকম ছিল। তাদের পড়াবার জন্যে কথায় কথায় যৌন-মিলনের গল্প তৈরি করতে হয়েছে। হয়তো আসল ভরদ্বাজ মুনির সঙ্গে এই কাহিনির কোনও মিল নেই।’
‘তা হোক। কী হবে সেই অতীতকে টেনে, যার সঙ্গে আমাদের জীবনযাপনের কোনও সম্পর্ক নেই। মেয়ে আমার চোখ খুলে দিল, সমরেশ। ওর গোত্র যদি পরমব্রত-আরতি হয়, তা হলে আমার গোত্র দেবব্রত-কমলা।’ পরমব্রত হাসল।
‘বাঃ।’ উঠে দাঁড়ালাম, ‘পরমব্রত, এত কাল মেয়েদের দিয়ে বলানো হয়েছে তোমার গোত্রান্তর হয়ে গেল। যে মা-বাবার জন্যে পৃথিবীতে এসেছ, তুমি তাদের গোত্রের নও। যাকে কোনও দিন চিনতে না, তার সঙ্গে বিয়ে মানে তুমি তার গোত্র পাবে। অনেকটা ক্রীতদাসের মতো ব্যবহার পেয়েছে মেয়েরা। কিন্তু, তোর মেয়ে যখন বলল, ওর গোত্র পরমব্রত-আরতি, তখন আমার মন ভরে গেল। এই প্রজন্মের একটি মেয়ে তার মাকে প্রতিষ্ঠা দিল। এ সব বন্ধ করার কথা বলছিলি না? বন্ধ নয়, নতুন চেহারায় শুরু হোক না!’
মউলি এবং অর্ণবের বিয়েতে পুরোহিত বাধ্য হয়েছিলেন দুজনের মা-বাবার নাম ওদের গোত্র হিসেবে উচ্চারণ করতে। না হলে আইনি বিয়ের পর হিন্দুমতে বিয়ে ওরা করত না। অতীত আঁকড়ে থেকে পুরোহিত নিজেকে দক্ষিণা থেকে বঞ্চিত করতে রাজি হননি। মউলিরা চাইছে সবাই তাদের অনুসরণ করুক।
Source: Whatsapp
0 notes