Tumgik
sumitchowdhury · 11 years
Text
মওদুদী কথন -২
গত পর্বে আমরা দেখেছিলাম কিভাবে জামায়াতের জনক মওলানা আবুল আ'লা মওদূদী সময়ের বিবর্তনে পাল্টেছিলো সংজ্ঞা, পাল্টেছিলো মতবাদ। শুধুমাত্র তোষামুদী করতেই একসময়ে যে নেজামের চাটুকার ছিলো সেই আবার হয়েছিলো ব্রিটিশ সরকারের দালাল। আবার এই মওদূদী ব্রিটিশ সরকারের দালালী করতে গিয়ে বিরোধিতা করেছিল কংগ্রেসের একই সাথে বিরোধিতা করেছিল মুসলিম লীগের। অথচ এই মুসলিম লীগের হাত ধরেই জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানের। আজকের লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করবো মওদূদীর মুসলিম লীগ বিরোধিতা সম্পর্কিত কিছু কথা।
"এই জাতি প্রথম থেকেই একটি জমিয়ত বা সংঘ। এ সংঘের ভিতর কোন পৃথক সংঘ পৃথক নামে গঠন করা, মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষ নিদর্শন কিংবা বিশেষ কোনো নাম বা নীতি দ্বারা প্রভেদ সৃষ্টি করা এবং মুসলমানদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের মধ্যে দল-উপদলগত কোন্দল সৃষ্টি করা মুলত মুসলমানদের সুদৃঢ় করা নয়, এতে তাদের আরো দুর্বল করে দেয়া।" - পয়গামে হক, ১৯৩৮
এই উক্তিতে মওদূদী মুসলিম লীগের বিরোধিতা করে ব্রিটিশরাজ তথা কংগ্রেসকে(কিছুটা) খুশি করতেই বলেছে এই ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম জাতি আগে থেকেই এক আছে তাই তাদের এক করতে নতুন করে কোন ইসলামিক দলের প্রয়োজন নাই। এখানে এও উল্লেখ্য যে সেই সময়েও কিন্তু মওদূদীর জামায়াত-ই-ইসলামের প্রতিষ্ঠা হয় নাই। তার মতে আগে থেকেই সংঘবদ্ধ(!) মুসলিম জাতিকে পুনরায় সংঘবদ্ধ করার মানে তাদের সুদৃঢ় করা নয়, বরং তাদের মধ্যে কোন্দল বা ভেদাভেদ তৈরী করে দেয়া। অথচ এই মওদুদীই পরবর্তীতে জামায়াত তৈরী করেছিল। বেঁচে থাকলে হয়তো প্রশ্ন করতাম "মিঃ মওদুদী জামায়াতের ফলে কি আগে থেকেই সংঘবদ্ধ জাতিকে সুদৃঢ় করা হয়েছে না বিভেদ তৈরী করা হয়েছে?" বেঁচে নেই যখন তখন নিজে থেকেই উত্তর নিয়ে নেই "খামোশ, তু নাস্তিক হ্যায়"
এবার একটু বলা দরকার কেন মুসলিম লীগের তৈরী হয়েছিল বা কিসের প্রয়োজনে মিঃ জিন্নাহ মুসলিম লীগের জন্ম দিয়েছিল। সেসময়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়া মুসলিম জাতিকে নিজেদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য একাট্টা করতেই মূলত মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছিল। এখানে এও উল্লেখ্য যে ১৯৩৬ সালের নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল ব্রিটিশ সরকার আর সেখানে নিরঙ্কুশ বিজয় কংগ্রেস পেলেও যেসব স্থানে মুসলিম লীগ জিতেছিল সেখানেও প্রধান বিরোধীদল হিসেবে কংগ্রেস নির্বাচিত হয়েছিল। এইদিক থেকে কিছুটা হলেও কংগ্রেসের সাথে মুসলিম লীগের একটা দ্বন্দ্ব ছিলো। মওদুদী যদিও সরাসরি কংগ্রেসের সাফাই দিয়েছিলো কিন্তু সে মুসলিম লীগের পক্ষে সাফাই দেয় নাই। এমনকি সেই সময়ের অধিকাংশ আলেম, ওলামা এবং সাধারণ মুসলমান মুসলিম লীগের সমর্থক থাকলেও মওদুদী তাদের কটাক্ষ করেই বলেছিল - 
"সারকথা, এই নামগড়া মুসলিম সমাজে অনুসন্ধান করলে রংবেরং-এর মুসলমান আপনার নজরে পড়বে। এতো ধরনের মুসলমান দেখতে পাবেন যা আপনি গুনে শেষ করতে পারবেন না। এটা একটা চিড়িয়াখানা- যাতে চিল, শকুন, তিতির, ভারই, এবং আরো অনেক প্রাণী রয়েছে। এরা সবই পাখী, কেননা এরা চিড়িয়াখানায় রয়েছে।" - সিয়াসী কাশমকাশ, ৩য় খন্ড, ২৫ পৃষ্ঠা।
মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ যখন মুসলিম জাতীয়তা, তাহজীব-তমুদ্দিন, রাষ্ট্র ইত্যাদি সম্পর্কে বিবৃতি দিতে আরম্ভ করেছিলেন তখনও মওদূদী তাদের বিরোধিতা করে সেসবকে অনৈসলামিক কাজ-কর্ম বলে প্রচার করতো। সে বিশ্বাসই করত না মুসলিম লীগ দ্বারা পাকিস্তানের জন্ম সম্ভব। এইজন্যে সে তার সিয়াসী কাশমকাশ-এর ২য় খন্ডের ২১৬ পৃষ্ঠায় মুসলিম নেতাদের কঠোর সমালোচনা করে লিখেছিলো-
 "মুসলমান নিরেট অজ্ঞ হবে যদি এখনো তারা পরিস্থিতির নাজুকতা যথাযথ উপলব্ধি করতে না পারে। তারা এখনো এই ধোঁকায় পড়ে রয়েছে যে, বাহাড়ম্বর সভা-সমিতি এবং ফাঁপা শোভাযাত্রা তাদের জাতীয় ধ্বংস থেকে রক্ষা করবে। তারা এমন লোকদের নেতৃত্বে আস্থা জ্ঞাপন করছে যাদের সামনে মন্ত্রিত্ব এবং ঐশ্বর্য ছাড়া আর কোন জিনিস নেই। যারা জাতির জন্য এতটুকু ক্ষতি স্বীকার করতে পারবে না, যারা কেবলমাত্র মন্ত্রিসভায় নিজেদের দখল টিকিয়ে রাখার জন্য মুসলমানদের নাম উচ্চস্বরে নিচ্ছে- তাদের ভীরুতা সম্পর্কে শত্রুদের পুরোপুরি বিশ্বাস রয়েছে।"
আবার আরেকস্থানে এমনটিও বলেছে সে-
"... এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্য আপনাদের ইসলামের নাম ব্যবহার করার অধিকার নেই। কেননা ইসলাম সকল প্রকার জাতীয়তাবাদের শত্রু। সেটা ভারতীয় জাতীয়তাবাদই হোক কিংবা নামগড়া মুসলিম জাতীয়তাবাদই হোক।"
যে মুসলিম লীগের লক্ষ্যই ছিলো পাকিস্তানের জন্ম দেয়া সেই মুসলিম লীগের বিরোধিতা করা তাও আবার ধর্মকে ব্যবহার করে সেই বিরোধিতা পাকিস্তানের বিরোধিতার সমান। সে শুধু মুসলিম লীগের বিরোধিতাই করেনি বরং "খোঁড়া পাকিস্তান","না-পাকিস্তান" ইত্যাদিও সে বলেছিলো সেসময়ে মুসলিম বিরোধিতা করতে গিয়ে।
ইসলাম বা মুসলিম শব্দের  ব্যবহার করে রাজনীতি করাতেও তার একটা আপত্তি দেখা যায় তার বিভিন্ন উক্তিতে। সিয়াসী কাশমকাশ, ৩য় খন্ডের ১১০-১১১ পৃষ্ঠার বিভিন্ন মন্তব্যে উঠে এসেছে সেই চ��ত্র-
"কেবলমাত্র মুসলমান শব্দ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যারা অজ্ঞতার পূজারীদের সংস্থাকে একটি সংস্থা মনে করে এবং একথা ভাবে যে, এ ধরণের কোন প্রতিষথান ইসলামের দৃষ্টিতে কল্যাণকর হবে, তাদের স্থুলবুদ্ধি শোকজ্ঞাপনযোগ্য।"
"এ ব্যাপারেও আমার কোন কিছুই বলার নেই যে, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মুসলিম লীগের 'মুসলমান' নাম ধারণ নীতি এই জাতি যারা বাস করে তাদের জন্য কল্যাণকর হবে, না ক্ষতিকর হবে। আমার নিকট যে প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো- এসময় যে জাতিকে মুসলমান নামে ডাকার দরুন পৃথিবীতে ইসলামের প্রতিনিধি মনে করা হয়, তার সবচাইতে বড় প্রতিষ্ঠান ইসলামকে বিশ্ববাসীর মনে কিরুপে পেশ করেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মুসলিম লীগের প্রস্তাবের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে আমার অন্তর কাঁদতে আরম্ভ করে।"
মুসলিম লীগের প্রস্তাব কি ছিলো সেই সময়ে তা তো উপরেই দেয়া হয়েছে। সেই সকল প্রস্তাবের বিরোধিতা করা, ইসলামের নাম ব্যবহার করে রাজনীতি করার বিরোধিতা এসব দেখে আপনার কি মনে হতে পারে জামায়াতে ইসলামের জন্মদাতা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী!!!
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকারী নেতাদের সম্পর্কে আবুল আ'লা মওদূদী বলে-
"এই সংস্থায় যাদের প্রথম সারিতে দেখা যাচ্ছে, ইসলামী জামাতে তাদের সঠিক স্থান সবচেয়ে পেছনের সারিতে। এমনকি কেউ কেউ তো সেখানেও অনুগ্রহেই স্থান পেতে পারে। এ ধরণে লোকদের নেতা বানান, রেলগাড়ির সবচেয়ে পেছনের বগিকে ইঞ্জিনের স্থানে লাগিয়ে দেয়ার সমতূল্য। যে উঁচু স্থানে আপনারা যাওয়ার ইচ্ছে করছেন, এ নামসর্বস্ব ইঞ্জিন আপনাদের গাড়িকে এক ইঞ্চিও নিয়ে যেতে পারবে না। অবশ্য গাড়ি তার আপন গতিতে নিচের দিকে চলে আসবে। আপনারা কিছুকাল পর্যন্ত এ ভুল ধারণায় পড়ে থাকবেন যে, মাশাল্লাহ! আমাদের 'ইঞ্জিন' গাড়িকে খুব উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সে আপনাদের উপরের পরিবর্তে নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।" সিয়াসী কাশমকাশ, ৩য় খন্ড, ১০৬-১০৭ পৃষ্ঠা।
ইসলামের লেবাশ পরে ভন্ডামী করা এই মওদূদী যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় তখন আশ্চর্যজনকভাবে পাকিস্তানে গিয়ে বসবাসের জন্য আগের সকল কিছু ভুলে গিয়ে পরিষ্কারভাবে ঘোষণা দেয় যে সে পাকিস্তানের বিরোধিতা করে নাই, করেছে মুসলিম লীগের। ঠিক একইভাবে এইদেশীয় জামাতীরাও বলে তারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করে নাই তারা ভারতের বিরোধিতা করেছিল।
তথ্য সুত্রঃ- জামাতের আসল চেহারা - মওলানা আবদুল আউয়াল
1 note · View note
sumitchowdhury · 11 years
Text
মওদূদী কথন - ১
মওদূদীর জন্ম হয়েছিল ১৯০৩ সালে। অল্প বয়সেই তার পিতা মারা যাওয়াতে তাকে জীবিকার সন্ধানে, দু'বেলা খাবারের সন্ধানে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে হয়। তার মূল কর্মজীবন শুরু হয় ১৯১৮ সালে উর্দু সাময়িকী এবং সংবাদপত্র দিয়ে। দীর্ঘদিন পত্রিকায় কাজ করে একসময় সে কাজ ছেড়ে দিয়ে হায়দারাবাদে চলে যায় মওদুদী। হায়দারাবাদের নিজামের অনুবাদ বিভাগে কাজ করত তার এক ভাই, সেই ভাইয়ের সুবাদে কিছু অনুবাদের কাজ করে ৫০০০ টাকা পেলে সেই অর্থ দিয়ে খুলে বসে "তরজমানুল কোরআন" আর এই পত্রিকা দিয়েই শুরু হয় তার পা চাটামি, ধর্মীয় লেবাশের তলে।
একজন লেখক যার নাম রইস আহমদ জাফরী তার 'দিদা ও শানীদ' গ্রন্থে মওদুদী সম্পর্কে লিখেছিলেন- "১৯৩৭ সালের এক হিমেল সন্ধ্যায় বোম্বাইয়ে খেলাফত হাউসের অতিথি শালায় একজন নবাগুকে দেখতে পেলাম। .... দাড়ি-গোঁফ কামানো এবং ইংলিশ কাটিং-এর চুল। সুদর্শন ও ডাগর ডাগর চোখওয়ালা।"
মওদুদী যখন "তরজমানুল কোরআন" বের করে তখন সে হায়দারাবাদের নিজামের রাজতন্ত্রে বসবাস করত। তার পত্রিকার একটা বিশাল অংশ সেই রাজতন্ত্রের ধর্ম সংক্রান্ত বিভাগ ক্রয় করে নিতো, কেননা মওদূদী সেখানে রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বৈধতা ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ করে তুলত। এমনকি সে ঘোষণা করেছিল - "জনগনের সরকার, জনগনের দ্বারা, জনগনের জন্য - মুসলমান হিসাবে আমি এ নীতির সমর্থক নই।" [সিয়াসী কাশমকাশ, মাওলানা মওদুদী, ৩য় খন্ড, ৬২ পৃঃ]
একইসাথে ব্রিটিশদের পা চাটতে গিয়ে মওদুদী, সিয়াসী কাশমকাশ, ৩য় খন্ডের ১০৮ পৃষ্ঠায় বলেছে- "বিশ্বের অন্যান্য জাতির মত আমাদের স্বাধীনতার অর্থও কি এই যে, বিজাতির শাসনমুক্ত হওয়া? স্বজাতির শাসন কিংবা স্বদেশীর শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া কি আমাদের লক্ষ্যের জন্য প্রয়োজন?"
আবার একই গ্রন্থের প্রথম খন্ডের ৫৬ পৃষ্ঠাতে সে দাবী করেছিলো- ""যে আজাদী জাতীয়বাদীদের লক্ষ্য তার সমর্থনে সংগ্রাম করার কোনো অর্থ নেই। ...... তাদের সমর্থক মুসলমানরা কোন অবস্থায়ই মীর জাফর মীর সাদেক থেকে ভিন্নতর নয়।"
একই গ্রন্থে কংগ্রেসের বিরোধিতা করে ১০৫ পৃষ্ঠায় লিখেছিল- "... অনুরুপ এই আন্দোলন আমাদের জাতীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এর সাথে শরিক হওয়ার অর্থ আমাদের নিজেদের জাতীয়তা ও তাহজিব-তমদ্দুন নিশ্চিহ্ন করায় অংশগ্রহন করা।"
অথচ এই মওদুদী আশ্চর্যজনকভাবে কংগ্রেসের পক্ষেই গান দেওয়া শুরু করে তাও আবার "ইসলামিক ব্যাখা(!!)" দিয়ে যখন উপমহাদেশের আলেমরা কংগ্রেসকে সমর্থন জানায়। মাওলানা মাওদুদী আউর জামায়াতে ইসলাম নামক গ্রন্থের ১৮ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে- "খেলাফত ও সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হলে আমি এ দুটো আন্দোলনের পক্ষে কাজ করি। সে সময় আমি গান্ধীজির জীবন চরিত লিখি। আমার এক বন্ধু পুলিশ সুপারকে জানিয়ে দেয়। ছাপা অবস্থায় বইটি বাজেয়াপ্ত হয়। .... জব্বলপুরের মুসলমানদেরকে কংগ্রেসে উৎসাহদানকারীদের নিধ্যে আমিও একজন ছিলাম।...... এখন দেশের জন্য দুটো পথ রয়েছে। প্রথমটি হলো, নিজেদের আবেগ - অনুভুতির বশবর্তী হয়ে কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করা এবং যেদিকে ইচ্ছা পা বাড়ানো। দ্বিতীয়টি হলো, কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত মেনে চলা। এক মুহুর্তের জন্যও এর বিরোধিতার মনোভাব পোষণ না করা। প্রথম পথ অনুসরণের পরিণতি আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। দ্বিতীয় পথ যদিও আমাদের আবেগ - অনুভুতি বিরোধী, তবু এটাই হচ্ছে ঐক্য ও সংহতির পথ।"
এখানে তার ইসলামিক ব্যাখাটি হচ্ছে "প্রথম পথ অনুসরণের পরিণতি আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।" লাইনেই আছে। কেননা তার আগের কথাবার্তা এবং চালচলনে সর্বদাই কোন কিছুকে ধর্মীয় দৃষ্টি থেকে জায়েজ করতে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য এই দুই শব্দের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়।
পরিশেষে নিজ থেকে আর কিছুই বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা উপরিউক্ত তথ্যাদি থেকেই মওদুদীর চরিত্র কিরুপ তা স্পষ্টতই প্রমাণিত হয়। আগামী পর্বে পাকিস্তান জন্মের বিরোধিতা পরে আবার পাকিস্তানেরই পা চাটার তথ্য তুলে ধরা হবে।
[তথ্যসুত্রঃ- জামাতের আসল চেহারা - মওলানা আবদুল আউয়াল]
1 note · View note
sumitchowdhury · 11 years
Text
সুখী মানুষদের রঙ্গ-তামাশা
পৃথিবীর সুখী মানুষদের তালিকায় আমাদের ঠাঁই হয়ে যাওয়াটা খুব একটা অসমীচীন নয়। কেননা আমরাই এমন সকল কাজ করতে পারি যা দেখে না হেসে থাকার জো নেই।
উজানের বিপরীতে চলা আমাদের একটা অভ্যাস। এই যেমন ধরেন আমাদের কথা-বার্তার ধরন এমন যেন বিয়ের পর বাসর রাতে স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করলাম সকালে উঠে দেখলাম বিছানায় বাচ্চা থাকাটাই দরকার। অনেক ক্ষেত্রে না থাকাটাকেই আমরা উচিতই মনে করি না। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে একটা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা প্রয়োজন।
আবার ঠিক যখন তার উল্টোটা দরকার তখন ঠিকই তার বিপরীতে চলি। অর্থাৎ জিনিসটা দরকার এখনই কিন্তু আমরা বলি "বৎস ধীরে, ধৈর্য্য ধারণ করো"। 
উদাহারণ হিসেবে বলা যায় যুদ্ধাপরাধ বিচার। ৪২ টা বছর ধরে অপেক্ষমান পদে পদে মার খাওয়া জাতি যখন রায় পেলো তখন সেখানে অপেক্ষা করে রায় বাস্তবায়নে বিচার প্রক্রিয়া তৈরীকারীদের সহযোগিতা না করে বরং উল্টো তাদের অবস্থানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে শুরু করে দিলো। ৪২ বছর অপেক্ষা করতে পেরেছে কিন্তু ফাঁসিটা বাস্তবায়ন করতে আরো কয়েকটি বছর অপেক্ষার তর সইছে না যেন তাদের। যার ফলে ধুম করে বলে দিলো "রাজাকারের পাহারাদার - আওয়ামীলীগের সরকার।"
অথচ বলতেই ভুলে যাই এই সরকারই কিন্তু তাদের প্রথম সংসদ অধিবেশনে যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিল পাশ করিয়েছিলো।
আবার সজীব ওয়াজেদ জয় যখন বলেছেন ইন্টারনেটের মূল্য হ্রাস করবেন আগামীবার নির্বাচিত হলে তখনও থেমে নেই তাদের কথার বাহার। কেউ বলছে নাকে মুলো ঝুলিয়ে আর কত, কেউবা ছদ্মবেশের আড়ালে থেকে বলছে এখনই কেন কমানো হচ্ছে না, কমালে তো ভোট বেড়ে যাবে নগদেই। 
তো এই শ্রেণীর লোকদের বলতে হয়, "স্যার সরকার যখন কুইক রেন্টালের দায়ে ফেঁসেছিল তখন খুব খুব করে গলাবাজি করেছেন এই নিয়ে, কিন্তু এই রমযান জুড়ে, এই ঈদে যখন (অন্যান্য বারের তুলনায়) অনেকটা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের মধ্যে ছিলেন তখন কিন্তু একবারের জন্যও গলাবাজি করেন নাই। বোধহয় আগে গলাবাজির জন্য আপনার গলা বসে গিয়েছিল!!! না হলে কেন বললেন না সরকারের এই সাফল্যের জন্য ভোট বাড়া উচিত?"
এরপরেও কি বলবেন সুখী মানুষদের তালিকায় আমাদের রাখা উচিত নয়? এই সমস্ত মুখোশধারীদের কাজ-কর্ম দেখে যেসকল বিনোদন পাই তাতে কি কম সুখলাভ হচ্ছে? কি নির্মল বিনোদন এই সকল লোকদের থেকে পাচ্ছি যখন নিজেরাই বুঝতে পারছি "আরে এতো ছুপা সুশীল, পুরাই ড. ইউনুস, অস্থির বিনুদুন!!!" আর মনে মনে বলছি "ল্যাঞ্জা ইজ ভেরী ডিফিকাল্ট থিং টু হাইড"
তো সবশেষে এসে একটা পাইকারী জোকস, বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জাতির জন্য শ্রেষ্ঠ জোকস হলো- বাঁশেরকেল্লার পথচলা...লক্ষ্য একটাই “সত্যকে উন্মোচন করা”।
0 notes
sumitchowdhury · 11 years
Text
জামায়াত-ই-ইসলামী আসল ইসলাম আবমাননাকারী
বাংলাদেশকে একটি সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র বানিয়ে ইসলামের সমুন্নত ভাব-মর্যাদা বিনষ্ট করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এ মুহুর্তে তাই দেশের হক্কানী আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ জনগণকে প্রতিটি পদক্ষেপেই সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। ইসলামের শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের রুপরেখা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই পাকিস্তান,আফগানিস্তান,ইরাকের মত বাংলাদেশের মসজিদসমূহে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা শুরু করেছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ। দেশের হক্কানী আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ জনগণের সচেতনতার কারণে বারবার চেষ্টা করেও ষড়যন্ত্রকারীরা এদেশে তাদের মিশন বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। এখন ভ্রান্ত আকিদার মওদুদী দর্শনের অনুসারীদের মাধ্যমে তারা তাদের মিশন বাস্তবায়নে কাজ করছে।
মওদুদী দর্শন ও ইসলাম এক নয়। এটি অনেক আগেই হক্কানী আলেম-ওলামাদের কাছে খোলাসা হয়েছে। এ উপমহাদেশের সর্বস্তরের হক্কানী আলেম ও পীর-মাশায়েখ তাই মওদুদী দর্শনে বিশ্বাসী জামায়াতে ইসলামীকে ‘ফিতনা’ সৃষ্টিকারী ও ‘গোমরাহ’ বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
তাঁরা বলেন, “মওদুদী নতুন ধর্ম জন্ম দেয়ার উদ্দেশ্যে স্ব-কল্পিত ভ্রান্ত মতবাদসমূহ প্রবর্তন করেই ক্ষান্ত হননি বরং মূল সত্য ইসলাম ধর্মের প্রধান বাহক শ্রেষ্ঠ মানব মহানবী (সা) হতে শুরু করে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ, তাবেতাবেঈ, আইম্মায়ে মুজতাহিদীনসহ সবশ্রেণীর দীনের ধারক-বাহক সম্পর্কে লাগামহীন সমালোচনার ক্ষেত্র বানিয়েছে।” (মিস্টার মওদুদীর নতুন ইসলাম, লেখকঃ হযরত মাওলানা মুফতী মানছুরুল হক সাহেব (দা.) পৃষ্ঠা-১৪)
ইসলাম সম্পর্কে মওদুদীর বিভিন্ন বইয়ে বিরুপ মন্তব্যঃ
মওদুদী বলেন, “নবীগণ মাসুম নন। প্রত্যেক নবীর দ্বারাই কিছু না কিছু গুনাহ সংঘটিত হয়েছে।” (তাফহীমাত ২/৪৩);
“কোন কোন নবী দ্বীনের চাহিদার উপর অটল থাকতে পারেননি। বরং তাঁরা আপন মানবীয় দূর্বলতার কাছে হার মেনেছেন।” (তাফহীমুল কুরআন ২/৩৩৪);
“নবী হোক বা সাহাবা হোক কারো সম্মানার্থে তার দোষ বর্ণণা না করাকে জরুরী মনে করা আমার দৃষ্টিতে মূর্তিপুজারই শামিল।” (তরজমানুল কুরআন,সংখ্যা ৩৫, পৃষ্ঠা ৩২৭);
“হযরত ইউনুস (আ) ঠিকমত নবুয়তের দায়িত্ব পালন করেন নি।” (তাফহীমুল কুরআন ২/৯৯) এবং “হযরত ইব্রাহীম (আ) ক্ষণিকের জন্য শিরকের গোনায় নিমজ্জিত ছিলেন।” (তাফহীমুল কুরআন ১/৫৫৮)
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) সম্পর্কে মওদুদী আরো বলেন।
“মহানবী (সা) মানবিক দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দূর্বলতার বশবর্তী হয়ে গোনাহ করেছিলেন।” (তরজমানুল কুরআন, সংখ্যা ৮৫, পৃ. ২৩০)
“আরবের মধ্যে উপযুক্ত লোকদের নেতৃত্ব পেয়েছিলেন বলেই তো রাসূলুল্লাহ (সা) সফলকাম হয়েছিলেন। অন্যথায় তিনি কি এই সফলতা লাভ করতে পারতেন?” (তাহরীকে জামায়াতে ইসলামী কী আখলাকী বুনয়াদ, পৃষ্ঠা-১৭);
সাহাবায়ে কেরাম (রা) সম্পর্কে মওদূদী নলেন, “সাহাবাদেরকে সত্যের মাপকাঠিতে জানবে না।” (দস্তুরে জামায়াতে ইসলামী পৃ.-৭)
তিনি বলেন, “সাহাবাদের অনুসরণ করবে না।” (ঐ পৃ.-৭)
তিনি বলেন, “সাহাবায়ে কেরামের অনেকে মনগড়া হাদীস বর্ণনা করেছেন।” (তরজুমানুল কুরআন, সংখ্যা ৩৫)
হযরত আবু বকর সিদ্দিকি (রা) সম্পর্কে তিনি বলেন, “হযরত আবু বকর (রা) দূর্বলমনা ও খেলাফতের দায়িত্ব পালনে অযোগ্য ছিলেন।” (তাজদীদ ও এহইয়ায়ে দ্বীন, পৃ. ২২);
হযরত ওমর (রা) সম্পর্কে বলেন, “নবী করীম (সা)-এর ওফাতের সময় ব্যক্তি সম্মানের কুমনোবৃত্তি হযরত ওমর (রা)-কে পরাভূত করেছিল।” (তরজমানুল কুরআন ১৩৫৭ হি. সংখ্যা);
হযরত উসমান (রা) সম্পর্কে বলেন, “হযরত উসমান (রা)-এর মধ্যে স্বজনপ্রীতির বদগুন বিদ্যমান ছিলো।” (খেলাফত অ মুলুকিয়াত পৃ. ১২২);
হযরত আলী (রা) সম্পর্কে বলেন, “হযরত আলী খেলাফতের যামানায় এমন কিছু কাজ করেছেন,যাকে অন্যায় বলা ছাড়া আর কিছু বলার উপায় নাই।” (ঐ পৃ. ১৪৬)
পবিত্র কুরআনের তাফসীর সম্পর্কে মওদুদীর মন্তব্যঃ “কুরআন শরীফের মনগড়া ব্যাখ্যা করা জায়েয।” (তরজমানুল কুরআন ১৩৫৫ হি.)
তিনি বলেন, “তাফসীরের পুরাতন ভান্ডার হতে ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজন নেই।” (তানকীহাত, পৃ.১৪৪)
মওদুদী বলেন, “কুরআনুল করীম হেদায়েতের জন্য যথেষ্ঠ, কিন্তু নাজাত বা মুক্তির জন্য নয়।”
তিনি বলেন, “কুরআনের এক তৃতীয়াংশ আয়াত প্রচ্ছন্ন হয়ে গেছে।”
মহানবী (সা)-এর সুন্নাহ অনুসরণ সম্পর্কে মওদুদী বলেন, “নবী করীম (সা)-এর আদত-আখলাককে সুন্নত বলা এবং তা অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে সাংঘাতিক ধরণের বিদআত ও ধর্ম বিকৃতির নামান্তর।” (রাসায়েল মাসায়েল ১/২৪৮)
এ জন্যই হক্কানী উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ‘মওদুদী ফেৎনা কাদিয়ানী ফেতনার চেয়েও ভয়াবহ।’ আর এ কারণেই ইসলামের শত্রুরা ইসলাম ধ্বংসের জন্য মওদুদী দর্শনে বিশ্বাসী জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরকে তাদের অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। তারা নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে মানুষের ঈমান আকীদা বিনষ্টের জন্য মাঠে নেমেছে। তারা ইসলামকে ব্যবহার করে টাকার পাহাড় গড়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে দেশের সরলমনা আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীকে প্রতারিত করছে। দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর তাফসীর সম্পর্কে হক্কানী আলেম সমাজের অভিমত হচ্ছেঃ- “তারা (জামায়াতে ইসলামী) সুপরিকল্পিত ভাবে এমন কিছু লোককে মুফাসসিরে কুরআন বানালো,যাদের কন্ঠ ও বাকচাতুর্যতাই একমাত্র সম্বল।।..তারা সুললিত কন্ঠে তফসীরের সুরে মওদুদী মতবাদ প্রচারে ট্রেনিংপ্রাপ্ত। উক্ত সাজানো মুফাসসিরের মধ্যে মৌলভী দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর নাম সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য।” (মৌং দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ভ্রান্ত তাফসীরের স্বরুপ উন্মোচন পৃ.৪)।
গুজব থেকে সতর্ক থাকুন!
আদালতে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির দেশ জুড়ে যে তান্ডব চালাচ্ছে তার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে যে,যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার বানচাল করে দেশে মওদুদীবাদ প্রতিষ্ঠা করা। তাদের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তারা ইসলাম বিরোধী দেশী-বিদেশী চক্রের ক্রীড়নক হয়ে দেশের শান্তি,শৃংখলা ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টের চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে তারা সাঈদীকে অতিমানব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নানা ধরণের গুজব ছড়িয়ে সরল ধর্মপ্রাণ জনগণের ঈমান আকীদাকে নষ্ট করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। সম্প্রতি তারা গুজব ছড়িয়ে যে, সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে। এ সংবাদ তারা মাইকে প্রচার করে জনগণকে উস্কে দিয়েছে পুলিশ ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলা চালানোর জন্য। আজ পর্যন্ত কোন নবী রাসুল ও শুহাদা��ে চাঁদে দেখা যায় নি। “যেদিন মহানবী (সা)-এর পুত্র ইব্রাহীম (রা) ইন্তিকাল করেন,সেদিন সূর্যগ্রহন হয়েছিল। লোকেরা বলতে লাগলো, ইব্রাহীম (রা)-এর মৃত্যুর কারণেই সূর্য গ্রহন হয়েছিল।
তখন নবী করীম (সা) বললেন, ‘কারো মৃত্যুর কারণে অথবা জন্মের কারণে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না।” (বোখারী শরীফ,হাদীস নং ৯৮৬)
যেখানে মহানবী (সা)-এর পুত্রের মৃত্যুশোকে চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ হয় না, সেখানে সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর তিনি কুরআন হাতে চাঁদে চলে গেলেন,এটা গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। যারা মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে,গুজব ছড়িয়ে সরলমনা ধর্মপ্রাণ জনগণের ঈমান-আকীদা বিনষ্ট করছে তাদের তওবা করে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া উচিত।
সম্মানিত ওলামায়ে-কেরাম ও ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাই-বোনেরা! জামায়াতে ইসলামী নবী-রাসুল,সাহাবায়ে কেরাম,তাবে-তাবেঈন,হক্কানী আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখগণের দ্বীনী দাওয়াতী উসূল পরিবর্তন করেছে। আলেম-ওলামাগণের সাথে জামায়াতের বিরোধ হল ধর্মীয় বিরোধ। আলেম-ওলামাগণ তাদেরকে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট বলে অভিহিত করেছেন। হক্কানী আলেম-ওলামাগণের মতে এরা কাদিয়ানীদের থেকেও জঘণ্য। দ্বীনী দাওয়াতের উসূল পরিবর্তন ও ইসলামকে মনগড়াভাবে ব্যাখ্যা করে ধর্মপ্রাণ জনগণকে বিভ্রান্ত করায় তাদের প্রতিহত করা আলীয়া-কওমী সকল সিলসিলার পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামাগণের ঈমানী দায়িত্ব। তাই আসুন,আমরা ইসলাম,দেশ ও জাতির স্বার্থে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মকান্ড প্রতিহত করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন!
প্রচারেঃ সম্মিলিত আলীয়া-কওমী-পীর-মাশায়েখ পরিষদ
উপরে মওদুদীর বর্ণিত কথাগুলো পড়ে বারবার একটাই কথা সামনে আসছে,মওদুদীর মত লোক যেই অবমাননা ইসলামের করেছে সে তুলনায় ব্লগাররা নিতান্তই চুনোপুটি,নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি দাবী করবার আগে মওদুদীবাদী সকল জামায়াত-শিবিরের ফাঁসি দাবী কি খুব অযৌক্তিক হবে?
0 notes
sumitchowdhury · 11 years
Text
ইসলামী আকিদা বনাম জামায়াতী আকিদা
জামায়াতে ইসলাম মূলত ইসলামেরই প্রধান শত্রু। যতটা না নাস্তিক্যবাদীরা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে তার চাইতেও বেশী করে জামায়াত-ই-ইসলাম।
  ইসলামী আকীদা
কুরআন সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে অবশ্যই আমাদের প্রিয় নবী ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন। পবিত্র কুরআনে اليوم أكملت لكم دينكم বলে প্রিয় নবীর মাধ্যমে ইসলামকে পরিপূর্ণতা দান করেছেন আল্লাহ তা’আলা। তাই তিনি যদি ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক না হন, তাহলে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক কে? অতিমানব অর্থ অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি। সুতরাং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিমানব ছিলেন এবং মানবীয় দুর্বলতা থেকেও সম্পূর্ণ মুক্ত, পুতঃপবিত্র ছিলেন, বিধায় আজ তাঁর প্রদর্শিত দ্বীণ আমরা সঠিকভাবে পেয়েছি। তিনি খোদার ধন ভান্ডারের মালিকও ছিলেন। পবিত্র হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
اِنِّى أُوْتِيْتُ مَفاتيح خَزَائِنِ الْأَرْضِ
“প্রিয় নবী স্বয়ং বলেছেন, আমাকে জমিনের খণিসমূহের চাবি দেওয়া হয়েছে বা ধন-ভান্ডারের মালিক বানানো হয়েছে। (বোখারী শরীফ, ২য় খন্ড, পৃষ্টা: ১০৪২। )
হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে এ ধরনের আরও একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও তাঁকে অদৃশ্যের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে:
عِلْمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِر عَلى غَيْبِه أَحَدًا – اِلَّا من ارْتَضى مِنْ رَسول
“অদৃশ্যের জ্ঞাতা, আল্লাহ আপন অদৃশ্যের উপর কাউকে ক্ষমতাবান করেন না আপন মনোনীত রাসূল ব্যতীত।” ( সূরা আল জিন । আয়াত : ২৬।)
এ আয়াতে প্রিয় নবীসহ আপন রাসূলদেরকে ইলমে গায়েব দেওয়ার বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে।
আর তিনি স্বয়ং আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে কল্যাণদাতা হিসাবেই প্রেরিত হয়েছেন। পবিত্র কুরআন শরীফে এরশাদ হয়েছে,
وَمَآ أَرْسَلْناكَ اِلَّا رَحْمَةَ لِّلْعالَمِيْنَ
“হে নবী! আমি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত (কল্যাণ) স্বরূপ প্রেরন করেছি।” (সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭ । )
অন্ধকারে নিমজ্জিত সমাজকে সত্য ন্যায়ের আলোতে আলোকিত করে, অসভ্য জাতিকে সভ্য করে, জাহান্নামীদেরকে জান্নাতের পথ প্রদর্শন করে তিনি কি কল্যাণ করেন নি? জামায়াতে ইসলামীর একটি সংস্থা ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ যদি কল্যাণ করতে পারে তাহলে প্রিয় নবীর শানে কেন এত বড় বেয়াদবী?
আর মওদূদীর আরেকটি ভ্রান্ত আকীদা হচ্ছে প্রিয়নবী কোন কিছু হালাল ‍কিংবা হারাম করতে পারেন না। অথচ পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য দলীল রয়েছে শরীয়তের বিধানাবলীতে পরিবর্তণ, পরিবর্ধণ এবং কোন কিছুকে হালাল কিংবা হারাম করার ক্ষমতাও মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবকে দান করেছেন। যেমন-
قالتلوا الْذِيْنَ لَايُؤْمِنُوْنَ بِا للهِ وَلَا بِاليَوْمِ الْآخِرِ وَ لَا يُحَرِّمُونَ مَا حرم اللهُ وَ رَسُوْلُه
যুদ্ধ কর তাদের সাথে যারা ঈমান আনে না আল্লাহ উপর কিয়ামত দিবসের উপর এবং হারাম মানে না ওই বস্তুকে, যাকে হারাম করেছেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল।” (সূরা আ্ত তাওবা, আয়াত: ২৯। )
এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় আল্লাহ পাকের পরে তাঁর প্রিয় হাবীবও কোন কিছুকে হালাল কিংবা হারাম করতে পারেন এটাকে খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতা বলা হয়। হাদীসে পাকে অসংখ্য প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে যে, প্রিয় নবী অনেক কিছুকে হালাল অথবা হারাম ঘোষণা করেছেন যেমন পবিত্র মক্কা শরীফের ন্যায় মদীনা শরীফকেও প্রিয় নবী নিজে হারাম বা পবিত্র ঘোষণা করেছেন। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করনে-
اِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَرَّمَ هَذَا الحرام
“নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা ���লাইহি ওয়া সাল্লাম এই হারাম শরীফ (মদীনাকে) হারামরূপে গণ্য করেছেন।”
অন্য হাদীস শরীফে রয়েছে-
اِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَرَّمَ مَا بَيْنَ لَابتى الْمَدِيْنَةِ
“প্রখ্যাত সাহাবী হযরত রাফে বিন খদীজ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র মদীনা মুনাওয়ারাকে পবিত্র হারামরূপে গণ্য করেছেন”। (সহীহ মুসলিম শরীফ ও তাহাভী শরীফ। )
অতএব প্রমাণিত হলো, কোন কিছুকে হালাল, হারাম করার ক্ষমতা প্রিয় নবীর রয়েছে, এটা তাঁর খোদাপ্রদত্ত অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দলীলসমূহ: কুরআন শরীফ, বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তাহাভী শরীফ।
মওদূদীর আকীদা
১. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নন।
২. রাসূল না অতিমানব, না মানবীয় দুর্বলতা থেকে মুক্ত। তিনি যেমন খোদার ধন-ভান্ডারের মালিক নন, তেমনি খোদার অদৃশ্যের জ্ঞানেরও অধিকারী নন বলে সর্বজ্ঞ নন।
৩. তিনি পরের কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধন তো দূরে নিজেরও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে অক্ষম।
৪. তিনি কোন কিছু হালাল বা হারাম করতে পারেন না।
লন্ডনের ভাষণ, পৃষ্টা: ৩-১৯, কৃত: আবুল আলা মওদূদী, অনুবাদ: আখতার ফারূক, জুলকরনাঈন প্রেস, ৩৮, বানিয়া নগর, ঢাকা।
0 notes
sumitchowdhury · 11 years
Text
বাংলাস্তান
শহীদ- কি ব্যাপার গাজী তুমারে এতো উদাসীন আর ত্যাক্ত লাগতাছে কেনো?
গাজী- হুজুর বড়ই যন্ত্রণায় আছি।
শহীদ- কি নিয়া এতো বেচেইন তুমি? স্ত্রীর সাথে কি কুনু সমেইস্যা?
গাজী- না হুজুর....
শহীদ- তাইলে কি হইছে তুমার? তুমি না জেহাদী! এইরাম দিল খারাপ করে থাকলে তো হবে না।
গাজী- হুজুর সেদিন মিশনে যদি আমারে দিতেন, তাইলে কইলাম আইজ এই দিন দেখা লাগত না।
শহীদ- (উনার অদ্বিতীয় সানগ্লাসটা একটু ঠিক করে নিয়ে) কুন মিশনের কথা কইতাছো গাজী?
গাজী- হুজুর একুইশে আগস্টের কথা, সেইদিন যদি আমারে দিতেন আইজকা নাস্তিকগুলান এই দেশের মসনদে থাকতে পারতো না। এই দেশটা বাংলাদেশ নামে থাকতো না, এইটা হইতো বাংলাস্তান।
শহীদ- কি ব্যাপার!!! তুমি পাক-ই-স্তান না বইলা বাংলাস্তান কইতাছো ক্যান?
গাজী- হুজুর ম্যালাদিন উর্দুতে বাত নেহি করতে করতে ভুল গেয়া হেয় উর্দু। অউর সব লুক বাংলা কো পসন্দ করনে লাগা। জামানা বাদাল গেয়া হুজুর এর লাইগ্যা বাংলাস্তান বোলনা পরতা হেয়।
শহীদ- হুম বুঝলাম...(কিছু বলতে যাবে তার আগেই কথা ধরলো গাজী)
গাজী- হুজুর সেইদিন যদি মিশনে আমি যাইতাম তাইলে আইজ গাজী না হইয়া শহীদ হইতাম। নাস্তিক কতল কইরা আইজ সকলের আঁখো মে হিরো হইতাম, বেহস্ত পাইতাম।
শহীদ- তাইলে তুমার ইস্ত্রীদের কি হইতো!!!
গাজী- (মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে) হুজুর কি যে কন.... বেহেস্তে কত হুর আছে শহীদগো লাইগ্যা।
শহীদ- ঠিক আছে আগেরবার করো নাই এইবার না হয় করবা। এইবার তুমারেই দায়িত্ব দিতে কমুনে।
গাজী- হুজুর আপনের ঐ কালা সানগেলাসের ভিতর দিয়া আমারে কি আসলেই দ্যাখতে পাইতেছেন?
শহীদ- (রাগান্বিত স্বরে)হোয়াট দ্য ফাকিং হেল ইউ আর টকিং এবাউট??? এই চশমা নিয়া সেই কখন থেইক্যা তুমি আউ ফাউ কথা বইলা যাইতাসো মানেটা কি?
গাজী- গুস্তাখি মাফ করবেন হুজুর (ভীত কন্ঠে)... আসলে চ্যাংড়া পুলাপাইন ফেসবুকে নানান কথা লিখে তো তাই বেচেইন হইয়া কি কইতে কি কইয়া ফালাইছি... (আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই শহীদ বলা শুরু করলো)
শহীদ- "ফেসবুক"!!!! এটা আবার কি? কে লিখেছে এই বই?
গাজী- (খানিকটা হাস্যোজ্জ্বল মুখে) হুজুর এইটা বই না হুজুর, এইটা ফেসবুক। এখানে ব্যবাকে লিকে। যার যা মুঞ্চায় তাই লিকে!
শহীদ- মানে? জিনিসটা কি?
গাজী- খাড়ান হুজুর আপনেরে নগদে দেখাইয়া দেই। (এই বলে ল্যাপটপটা অন করে ফেসবুকে লগিন করে দেখালো ফেসবুক জিনিসটা কি)
শহীদ- (বড় বড় বিস্ফারিত চোখে  কালোচশমা দিয়ে ফেসবুক দেখতে লাগল) বাহ এই বানশেরকেল্লার লেখাগুলোতো বড়ই আনন্দদায়ক!!! মনের গুপন কথাগুলো ভালোই লিখে তারা।
গাজী- হ হুজুর পুরাই মনের কথা আর জেহাদী জোশের কথা।
শহীদ- তুমি তো মেয়া ভালো জিনিশের সাথেই আছ.. এইসব জিনিশ দেখলে দিলতো খুশ থাকবার কথা... তা না তুমি উদাসীন হইয়া বইসা আছো।
গাজী- হুজুর খালি এইসব দেখলেন!!! আসেন তাইলে অন্যকিছু দেখাই (এইবলে সে খুলে ধরলো অমি রহমান পিয়ালের ওয়াল, খুলে ধরলো রাসেল রহমানের ওয়াল, খুলে ধরলো তাপস সরকারের ওয়াল, খুলে ধরলো আরো কয়েকটি মুক্তিযুদ্ধের পেইজ... এইসব দেখে রাগে কটমট করতে করতে)
শহীদ- ধুর মিয়া কি বালছাল দেখো এইসব!!! এইসব বাকশালীদের বন্ধে কি করি নাই? কাদের লাগাই নাই? তারপরেও এরা বাঁইচা রইলো কেমনে?
গাজী- হুজুর এদের জন্যেই তো বেচেইন হইয়া রইছি....(আরো কিছু বলবে তার আগেই)
শহীদ- এসব বাকশালী, নাস্তিকদের লেখা দেখা বন্ধ করো। আমি একটা ইম্পোর্টেন্ট ব্যাপারে বাতচিত করতে আসছি। আর দুইদিন পরেই সেই ২১ শে আগস্ট, তুমি যখন নিজ থেকেই চাইতেছো এবার দায়িত্বটা তোমারেই দেয়ার কথা ভাবতেছি। তুমি কি পারবা করতে?
গাজী- কি কইলেন হুজুর!!! এবার দায়িত্ব পামু আমি!!! (আনন্দে তার দুইচোখ বেয়ে অশ্রুধারা বইতে লাগলো)
শহীদ- হ্যাঁ তুমিই পাবে। পারবা করতে? তোমারেই এবার দেয়া হবে দায়িত্ব। ওরা যখন শোক পালন করবে সেই সময়েই তুমি শহীদের মর্যাদা লাভের চেষ্টা করবা। তোমার সাথে আরো তিনজন থাকবে তাদের সাথে সব ঠিকঠাক হয়েছে এবার তোমার পালা। তুমিই নেতৃত্ব দিবা তাদের।
গাজী- (উৎফুল্ল কন্ঠে) পারুম মানে হুজুর আলবৎ পারুম। এইবার কইরা দেখামুই।
শহীদ- ঠিক আছে, (এই বলে হাতে একটা নকশা দিয়ে) ধরো এইডা হইলো ব্লু প্রিন্ট কিভাবে করবা, কেমনে করবা সব দেয়া আছে। সময়মতো জিনিসপত্রও হাতে আইসা পড়বে। ভালো থাইকো আমার যাওনের সময় হইছে। আমি উপরে বইসা সব দেখুম্নে।
এই বলে চলে গেলো শহীদ। সবকিছু প্ল্���ানিং হয়ে গেছে আগামীকালকেই হামলা হবে, জেহাদ হবে, বাংলাস্তান কায়েমে আরেকধাপ এগিয়ে যাবে তারা। এইসকল ভাবতে ভাবতেই উল্লসিত হয়ে একবার ফেসবুকে ঢুকলো সবাইকে বিদায় জানাতে। গাজী জানেনা আর ঢুকতে পারবে কিনা, তাই শেষবারের জন্য ফেসবুকে লগিন করলো। পাতা লোড হতেই দেখলো অনেকেই কভার ফটো কালো করে আছে, ২১ শে আগস্ট স্মরণে নানান ধরনের লেখায় ভরে গেছে তার ওয়াল। অনেক অনেক ভিডিও শেয়ার করেছে অনেকে। কারো কারো লেখা পড়ে মনে দুঃখ জাগছে। হঠাৎ তার মনে হলো না এইসব দেখা নিষেধ, সেইদিনই তো শহীদ হুজুর না করে গেলো এসবের জন্য। হঠাৎ একটি ভিডিও দেখে তার খুব দেখতে মন চাইলো, ক্লিক করতেই মানুষের হাহাকার-কান্না এসবে ভারী হয়ে গেলো তার কান। ধুমধাম বোমার শব্দে মানুষ মারা পড়ছে, কেউ কাতরাচ্ছে, কেউ ছটফট ছটফট করছে, রক্তাক্ত আর বীভৎস দেহে আহাজারি করছে সকলে। এইসব দেখে সহ্য হচ্ছিলো না তাই একটানে ল্যাপটপএর ডালা নামিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
.........একটা বাচ্চা মেয়ে হাসছে, কি সুন্দর তার হাসি। পুরো রাস্তা ফাঁকা আর ফাঁকা রাস্তায় বাচ্চাটি একা হাসছে আর খুশিতে ঘুরছে। গাজীর দিকে চোখ পড়তেই আরো খুশি হয়ে হেসে দৌঁড়াচ্ছে বাচ্চাটি, ছুটে আসছে গাজীর দিকেই। বাচ্চাটি আধো আধো কন্ঠে বলছে "আব্বু, আব্বু"। গাজী হাত বাড়িয়ে মেয়েটিকে কোলে নিতে যাবে এমসময়ে কোথা থেকে যেন একটা গ্রেনেড এসে পড়লো বাচ্চাটির সামনে, মুহুর্তেই ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো বাচ্চাটির দেহ। থোপ থোপ রক্ত পড়ে আছে, পড়ে আছে ছিন্নভিন্ন দেহ..... আচমকাই শোয়া থেকে উঠে বসলো গাজী। ঘেমে একাকার হয়ে গেছে পুরো শরীর। শুনতে পেলো ফজরের আযান দিচ্ছে। মুখ হাত ধুয়ে অজু সেরে নামায আদায় করলো। এরপর প্রস্তুত হতে থাকলো গাজী কিন্তু বারবার মনে পড়ছে তার স্বপ্নের কথা। নিজ মনে মনেই বললো "ধুর কি ছাইপাশ ভাবতাছি..."
বাকী তিনজনের সাথে যোগাযোগ করে পৌঁছে গেলো যথাস্থানে। আর অল্পকিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে অনুষ্ঠান এরপর সেখানে আসবে প্রধানমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উঠা মাত্রই কাজ সারতে হবে। একবার উপরের দিকে তাকালো শহীদ হুজুরকে দেখা যায় কিনা কিন্তু না মেঘে ঢাকা আকাশ ছাড়া কিছুই নেই। তারপর নিচে চোখ ফেরাতেই দেখতো স্বপ্নে দেখা বাচ্চাটির মতো একটি মেয়ে হুইল চেয়ারে বসে থাকা এক পুরুষের কোলে বসে আসছিলো। আরে এই লোকটাতো সেই লোক যাকে সে ফেসবুকের ভিডিওতে রক্তাক্ত অবস্থায় হাজারি করতে দেখেছিলো। মাথা ঘুরতে থাকে গাজীর আচমকাই কোথায় যেন হারিয়ে যায়। বাচ্চাটি মেয়েটি তার সামনে চলে গেলেও পেছন ফিরে তার দিকে তাকাচ্ছিলো। না সে আর সহ্য করতে পারছে না, মনে হচ্ছে বাচ্চাটি যেন তার দিকেই ছুটে আসবে দু'হাত বাড়িয়ে। আব্বু আব্বু বলে ডাকবে আর তখনই বাকী তিনজনের কেউ একজন গ্রেনেড ছুঁড়ে মারবে আর তাতেই বাচ্চাটির দেহ ছিন্নভিন্ন হবে।
আচমকাই গগনবিদারী চিৎকার শুরু করলো গাজী "না....." আর সাথে সাথেই তাকে ঘিরে ফেললো প্রশাসনের লোক। প্রশাসনের লোক দেখেই বলতে লাগলো তার কাছে বোমা আছে, আছে আরো তিনজনের কাছে। বলে দিলো বাকি তিনজনের  অবস্থান।
উপর থেকে এইসব দেখে শহীদ হুজুর নিজের সেই অদ্বিতীয় কালো সানগ্লাসটি খুলে নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে ফেললো।
[ভয়াল,রক্তাক্ত একুশে আগস্ট স্মরণে]
https://www.facebook.com/photo.php?v=4515961676474&saved
1 note · View note
sumitchowdhury · 11 years
Text
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (পর্ব-১)
বাঙালি জাতির জনক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক নজরে....
জন্মঃ- ১৭ মার্চ বুধবার ১৯২০
স্থানঃ- টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যুঃ- ১৫ আগস্ট শুক্রবার ১৯৭৫ (স্বপরিবারে)
স্থানঃ- ৩২ নং ধানমন্ডি, ঢাকা, বাংলাদেশ
  পিতাঃ শেখ লুৎফর রহমান
মাতাঃ- সায়রা খাতুন
  চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। সাত বছর বয়সে ১৯২৭ সালে গিমাডাঙা প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হন এবং নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত সেখানেই পড়াশোনা করেন। পরবর্তী চার বছর চোখের জটিল রোগের কারণে পড়াশোনা করতে পারেন নি। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউটে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং গোপালগঞ্জ মিশনারী স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৩৯ সালে নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে স্কুল পরিদর্শনে শেরে-ই-বাংলা এলে তার পথরোধ করেন শেখ মুজিব, স্কুলের ছাদের সংস্কারের দাবীতে। মূলত সেই থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন শুরু। ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দিয়ে ঐ বছরের জন্য নির্বাচিতও হয়েছিলেন। ১৯৪২ সালে এন্ট্রাস পাশ করার পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে আইন পড়ার জন্য ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই তাঁর সক্রিয় রাজনীতি শুরু হয়। ১৯৪৩ সালে বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দান করলে একই বছর বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের মহাসচিব নির্বাচিত হন। ভারত-পাকিস্তান ভাগ হলে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।
  ১৯৪৮ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারী খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে তাতে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন শেখ মুজিব। ঐ বছর ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের একটি সভা হলে তাতে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নীতিমালা নিয়ে যাতে আলোচনা করা হয় সেইজন্য তিনি প্রস্তাব পেশ করেন। সেখান থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় এবং ১১ মার্চ ধর্মঘট পালনকালে সচিবালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার হন শেখ মুজিব সহ কয়েকজন ছাত্রনেতা কিন্তু প্রবল চাপের মুখে পড়ে ১৫ মার্চেই তাদের সকলকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার। মুক্তি উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় একটি র‍্যালির সভাপতিত্ব করেন তিনি। সেই র‍্যালিতে পুলিশি বাধার প্রতিবাদে ১৭ মার্চ ধর্মঘট ডাকেন তিনি। ১৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের জন্য একটি আন্দোলন শুরু করেন তিনি এবং একই বছর ১১ সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার হলে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত করা হয়।
  ১৯৪৯ সালে ২১ জানুয়ারি মুক্তি পেলে তি��ি আবারো সেই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই জন্য তাঁকে জরিমানাও করেন। এই আন্দোলনের সফলতার জন্য তিনি এপ্রিল মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন ধর্মঘট শুরু করলে তাঁকে আবারো গ্রেফতার করা হয় এবং আবারো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
  ২৩ জুন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং মওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিমলীগ গঠন করলে শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ত্যাগ করে এই দলে যোগদান করেন এবং তাঁকে যুগ্ম সচিব নির্বাচিত করা হয়। ঐ মাসেই জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন, মুক্তি লাভ করেই তিনি খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। এই বছরে সেপ্টেম্বরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে সাময়িকভাবে আটক করা হয় তাঁকে। লিয়াকত আলি খানের সাথে সাক্ষাত কর চাইলে অক্টোবরের শেষের দিকে মওলানা ভাসানী সহ তাকে আটক করা হয়।
  ১৯৫০ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে লিয়াকত আলি খানের আগমন উপলক্ষ্যে দূর্ভিক্ষবিরোধী মিছিলের নেতৃত্বদানের কারণে তাঁকে আবারো গ্রেফতার করা হয়। সেবার টানা দুইবছরের জন্য জেলে বন্দী রাখা হয় তাকে। ১৯৫২ সালে খাজা নাজিমুদ্দীন ২৬ জানুয়ারী উর্দ্দুকে আবারো রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে তিনি জেলে বসেই এর প্রতিবাদ করেন এবং রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পরিচালনায় মূখ্য ভুমিকা রাখেন। ১৪ ফেব্রুয়ারী থেকে তিনি জেলে অনশন শুরু করেন এবং ১৩ দিনের দিন ২৬ ফেব্রুয়ারী তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
  ১৯৫৩ সালে ৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে দলের সেক্রেটারী জেনারেল (মহাসচিব) নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে গোপালগঞ্জে মুসলিম লীগের শক্তিশালী প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামানকে ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয়লাভ করেন তিনি। ১৫ মে তাঁকে কৃষি ও বন মন্ত্রী করা হয়, কিন্তু ২৯ মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে দিলে ৩০ মে করাচিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি লাভ করেন তিনি।
  ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ মুসলিম আওয়ামীলীগের এক সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে পুনঃরায় মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। একই বছর সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ দুর্ভিক্ষবিরোধী একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন তিনি ঐদিন কারফিউ থাকলে মিছিলে গুলিবর্ষণ হয় আর তাতে তিনজন নিহত হন। সেপ্টেম্বর ১৬ তারিখে কোয়ালিশন সরকারে যোগ দিলে তাকে একযোগে শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতিরোধ এবং গ্রামীণ সহায়তা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় কিন্তু তিনি দলের জন্য সম্পূর্ণ সময় ব্যয় করার তাগিদে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে তিনি মন্ত্রী সভা থেকে পদত্যাগ করেন।
  ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর দেশে সামরিক আইন জারি হলে ১১ অক্টোবর শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয় ভিত্তিহীন কয়েকটি মামলায়। ১৪ মাস পরে মুক্তি দিলেও পুনরায় জেলগেট থেকেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। পরে উচ্চ আদালতের রায়ে ১৯৬১ সালে মুক্তি লাভ করেন তিনি। এরপর তিনি গোপনে ছাত্র নেতাদের নিয়ে গঠন করেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ।
  ১৯৬২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী জননিরাপত্তা আইনে তাঁকে আবারো গ্রেফতার করা হয় এবং ১৮ জুন তিনি মুক্তি লাভ করেন। মুক্তি পেয়েই ২৫ জুন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে আইয়ুব খান আরোপিত বিভিন্ন ইস্যুর বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমে পড়েন।  ১৯৬৪ সালে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পূর্বে তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয় এবং এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। অবশ্য উচ্চ আদালতের রায়ে পুরো এক বছর মেয়াদের কারাভোগ তাঁকে করতে হয়নি।
  ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তিনি “আমাদের বাঁচার দাবী” শীর্ষক ঐতিহাসিক “ছয় দফা” দাবী পেশ করলে তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ঘোষণা করা হয়। এতে তিনি সম্মেলন ত্যাগ করে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন এবং ছয় দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে সারা বাংলা চষে বেড়ান। এই সময়ে তাঁকে আটবারের বেশী কারাবরণ করতে হয়।
  সেনাবাহিনীর কাছে দুইবছরর বন্দী থাকার পর ১৯৬৮ সালে পুনরায় মামলা দেয়া হয় যায় নাম ছিলো “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান গং” যা কিনা আমরা ঐতিহাসিক “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা” হিসেবেই চিনি। সেখানে উল্লেখ করা হয় ভারতের সাথে মিলে শেখ মুজিবুর রহমান গং আগরতলাতে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এই মামলা হবার সাথে সাথে সারা পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে বিক্ষোভের ঝড় উঠে। ১৯৬৯ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগারো দফার কঠোর আন্দোলন যা কিনা আমরা উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নামেই জানি সেই আন্দোলনের ফলে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিব সহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
  ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে এক সভায় “তাজউদ্দিন আহমেদ” শেখ মুজিবুর রহমানকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করেন। সেই থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু নামেই বাংলার জনগনের কাছে বেশ সমাদৃত হতে থাকেন।
  ১৯৬৯ এর ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন যে এখন থেকে “পূর্ব পাকিস্তান”কে “বাংলাদেশ” নামে অভিহিত করা হবে, এই মর্মে তিনি বলেনঃ-
" একটা সময় ছিল যখন এই মাটি আর মানচিত্র থেকে "বাংলা" শব্দটি মুছে ফেলার সব ধরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। "বাংলা" শব্দটির অস্তিত্ব শুধু বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত না। আমি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আজ ঘোষণা করছি যে, এখন থেকে এই দেশকে 'পূর্ব পাকিস্তানের' বদলে 'বাংলাদেশ' ডাকা হবে"।
  (চলবে....)
(সংগৃহীত এবং সম্পাদিত)
0 notes
sumitchowdhury · 11 years
Text
মুজিব-হত্যায় মাওপন্থীদের ভূমিকা-২ - আবদুল মতিন
১৯৭৫ সালের ১লা জানুয়ারী পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির মাওপন্থী সভাপতি সিরাজ সিকদার চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হন। ২রা জানুয়ারী ঢাকায় পুলিশের হেফাজতে থাকাকালে তিনি নিহত হন। ৩রা জানুয়ারী পুলিশ সূত্রে বলা হয়, গাড়িতে করে তাঁকে সাভারের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে পালাবার সময় পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। সিরাজ সিকদারের সমর্থকরা এবং বিভিন্ন বিরোধী দল তাঁর মৃত্যুর জন্য বঙ্গবন্ধু-সরকারকে দায়ী করে।
সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে ১৯৬৯ সালে সর্বহারা পার্টি গঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ''শ্রেণীহীন স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা'' প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সিরাজ সিকদার আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর পার্টির সদস্যদের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যা, ব্যাঙ্ক লুঠ, থানা ও ফাঁড়ি লুঠ, পাট ও খাদ্যশস্যের গুদামে অগ্নি-সংযোগ ইত্যাদি অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
সিরাজ সিকদার মৃত্যুর প্রাক্কালে তাঁর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একমাত্র সদস্য ছিলেন তিনি নিজে। ১৯৭১ সালের পার্টি কংগ্রেসে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচজন সদস্যের মধ্যে দু'জন উপদলীয় কার্য্যকলাপের অপরাধে পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন, একজন গ্রেপ্তার হন এবং অযোগ্যতার জন্য অন্যজনের পদাবনতি ঘটে। তার ফলে তিনি একাই ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ১৯৭৪ সালে প্রায়-কংগ্রেস সমমানের গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের অধিবেশনে কেন্দ্রীয় কমিটিকে বর্ধিত না করে, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সভাপতিকে সাহায্যদানের জন্য ছ'-সদস্যবিশিষ্ট একটি গ্রুপ গঠন করা হয়। এই সাহায্যকারী গ্রুপ দু'ভাগে বিভক্ত ছিল। তিনজন ছিলেন সামরিক সাহায্যকারী এবং বাকি তিনজন ছিলেন রাজনৈতিক সাহায্যকারী। তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ করা কিংবা উপেক্ষা করা সভাপতির ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল ছিল। সর্বহারা পার্টি সম্পর্কিত একটি দলিল থেকে উল্লিখিত তথ্য পাওয়া যায়। [''সিরাজ শিকদারের হত্যার নেপথ্য কাহিনী'' শীর্ষক একটি দলিল ১৯৮১ সালের ১৫ই ফ্রেব্রুয়ারী লন্ডনের সাপ্তাহিক ''জাগরণ''-এ প্রকাশিত হয়। দলিল রচয়িতা কে এ কবীর (সম্ভবত ছদ্মনাম) সর্বহারা পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন বলে মনে হয়। এই দলিলে উল্লিখিত কয়েকটি নামের শুধুমাত্র আদ্যাক্ষর ব্যবহার করা হয়।]
উক্ত দলিলে আরও বলা হয়, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়েও সিরাজ সিকদার কিছুটা উন্নাসিক হয়ে উঠেছিলেন। নীচু স্তরের কর্মীদের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আরোপের ব্যাপারে তিনি অনেক সময় স্বৈরাচারীর মতো ব্যবহার করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতার অভিযোগও ছিল। উন্নাসিকতার জন্য তিনি প্রায়ই উঁচু স্তরের অনেকের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করেছিলেন। এই জটিলতার জন্য উঁচু স্তরের কর্মীদের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ১৯৭৩-৭৪ সালে আরো কিছু সচেতন কর্মী সর্বহারা পার্টিতে যোগ দেওয়ার ফলে অসন্তুষ্ট কর্মীদের দল ভারী হয়। এই সচেতন কর্মীদের অসন্তোষের প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সিরাজ সিকার তাত্ত্বিক মানের চেয়েও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সামরিক মানকে প্রাধান্য দিতেন। মোট কথা, যে-সব কর্মী দলকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র এবং টাকা-পয়সা জোগাড় করে দিতে পারতেন, তাঁরা সিরাজ সিকদারের উপর সহজেই প্রভাব বিস্তার করতে পারতেন।
১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি লে. কর্নেল জিয়াউদ্দিনের সর্বহার পার্টিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারটি সিরাজ সিকদার সামরিক কারণেই খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। উল্লিখিত দলিলে বলা হয়, পার্টির সাংগঠনিক নীতি ভঙ্গ করে ১৯৭৫ সালের ১লা জানুয়ারী দিনের বেলা চট্টগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অনুষ্ঠানকালে সিরাজ সিকদার গ্রেপ্তার হন। কেউ কেউ সন্দেহ করে, পার্টির একজন প্রভাবশালী সদস্যের বিশ্বাসঘাতকরার ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। তারা মনে করে, পার্টির নীচু স্তরে শৃঙ্খলা আরোপের ব্যাপারে কড়াকড়ি এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য দায়ী।
সামরিক সাহায্যকারী গ্রুপের ১ নম্বর সদস্য ম....কে অনেকেই সিরাজ সিকদারের চরম পরিণতির জন্য দায়ী বলে মনে করে। ১৯৬৯ সালে সে পার্টিতে যোগ দেয়। দ্রুত নিষ্পত্তির লড়াইয়ের সফল প্রকল্পের প্রণেতা হিসেবে সে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সিরাজ সিকদারের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠে। শীঘ্রই সে পার্টির উঁচু স্তরে উঠে আসে। অল্প বয়স এবং পদের জন্য সে অহঙ্কারী ছিল। এই কারণে তার অধীনস্থ ও সমসাময়িক কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক প্রায়শঃ সে নষ্ট করে ফেলতো। তাই পার্টির মধ্যে তার বন্ধুর চেয়ে শত্রুভাবাপন্নদের সংখ্যাই ছিল বেশি।
ম....এর উশৃঙ্খলতা এবং কর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতির কারণে সিরাজ সিকদার ১৯৭৪-এর মাঝামাঝি ম....এর সামনে জিয়াউদ্দিনকে ১ নম্বর সামরিক সদস্যের পদ গ্রহণ করার কথা বলেছিলেন। উচ্চাভিলাষী ম....এর এটা সহ্য না করার কথা। উচ্চ স্তরের অনেক কর্মীই জিয়াউদ্দিনের ব্যক্তিত্ব এবং ব্যাপক তাত্ত্বিক জ্ঞানের জন্য ম....এর মতোই ঈর্ষান্বিত ছিল। পক্ষান্তরে পার্টিতে তখন মারমুখি হটকারী ''ফাইটার''-দের বিরুদ্ধে একটি তাত্ত্বিক গ্রুপ জিয়াউদ্দিনকে ঘিরে শক্তিশালী হচ্ছিল।
১লা জানুয়ারী বৈঠক থেকে ম....ই মাঝখানে উঠে গিয়েছিল। এই বৈঠকে কোনো পূর্ব-পরিকল্পনা ছাড়াই সিরাজ সিকদারকে প্ররোচিত করে ম .... ময়মনসিংহ অঞ্চলের দায়িত্ব নেয়। তৎকালীন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টিতে ময়মনসিংহ অঞ্চল ছিল সামরিক এবং আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী।
সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর পর ম .... এর উচ্চাভিলাষী প্রবণতা প্রকট হয়। সাহায্যকারী গ্রুপের দু'জনকে না জানিয়ে এবং অন্য তিনজনকে ভয় দেখিয়ে সে পার্টি সংবিধান উপেক্ষা করে বিপ্লবী পরিষদ গঠন করে এবং নিজে পরিষদের প্রধানের পদ দখল করে। পার্টির অভ্যন্তরে এই নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে সে বিরুদ্ধবাদীদের নির্মমভাবে হত্যা করতে শুরু করে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক সাহায্যকারী গ্রুপের ১ নম্বর সদস্য র.... (ঢাকা), ময়মনসিংহ অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঝি ...., কুমিল্লার বি .... এবং সিলেটের ম .... অল্প সময়ের মধ্যে নিহত হয়। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার একটি গ্রাম এক রাতে তার উপস্থিতিতে ৮ জন কর্মীকে হত্যা করা হয় বলে গ্রামবাসীরা জানায়। এরপরও যখন সে দেখলো, পার্টিতে তার বিরুদ্ধে জনমত প্রবল হয়ে উঠেছে, তখন সে মরিয়া হয়ে পার্টির শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করেও শেষ রক্ষার চেষ্টা করেছিল। সে জানতো পার্টি ভেঙে যাবে। এই ভাঙন প্রক্রিয়াতে তার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য ছিল টাকার প্রয়োজন। অতএব সে একটি ব্যাঙ্ক ও থানা লুঠ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। নদী-পথে ফেরার সময় সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ধরা পড়ার পরেও তার উচ্চাভিলাষের ইতি হয়নি। জেলে থাকা কালে সে সর্বহারা পার্টির একটা তৃতীয় ধারার জন্ম দেয়।
১লা জানুয়ারীর বৈঠক থেকে ম .... এর মাঝখানে উঠে যাওয়া, প্ররোচিত করে ময়মনসিং-এর দায়িত্ব নেওয়া, সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর পর তার উচ্চাভিলাষী তৎপরতা এবং নির্বিচারে হত্যা-যজ্ঞের মাঝে একটি যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়। উল্লিখিত কারণে ম .... এর পক্ষে আত্মঘাতী কিছু করা অসম্ভব ছিল না।
সিরাজ সিকদারের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে একটি গোপন চিঠির ভূমিকার কথাও বলা হয়েছে। তাঁর গ্রেপ্তারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনৈক ঊধ্বর্তন পুলিশ অফিসার বিভিন্ন জায়গায় গল্পচ্ছলে এরকম একটা চিঠির ধারণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, স্বাক্ষরবিহীন এই চিঠির প্রেরক পার্টির ভেতরের লোক। চিঠির হস্তাক্ষর মেয়েলী ধাঁচের। এই চিঠিতে নাকি সিরাজ সিকদারের গোপন ''শেল্টার'' এবং বৈঠকের জায়গার আশপাশের রাস্তার উল্লেখ ছিল। তা' ছাড়া সিরাজ সিকদারের শারীরিক বর্ণনাও চিঠিতে ছিল। এমন কি তাঁর সামনের দাঁতের মাঝখানে ফাঁক, হাতের ''এ্যাটাশে কেস্'' এবং পোশাক-পরিচ্ছদের ধরনেরও উল্লেখ করা হয়েছিল। চিঠির শেষ দিকে সিরাজ সিকদারের নাম উল্লেখ না করে প্রেরক জানিয়েছে, এই লোক একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁকে পাওয়ার সময়ও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল।
একজন প্রভাবশালী আমলা দাবি করেছেন, চিঠিখানা তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। সিরাজ সিকদারের সঙ্গে চট্টগ্রামের গোপন ''শেল্টার''-এ অবস্থানকারী কয়েকজন এবং তার বাইরের স্বল্প-সংখ্যক কর্মীই শুধু ১লা জানুয়ারীর গোপন বৈঠকের খবর জানতেন। এই ''শেল্টার'' তখন কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। চারজন মহিলাও এই ''শেল্টার''-এ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিরাজ সিকদারের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী জাহানারা হাকিম এবং তাঁর সদ্যবিবাহিত তিন নম্বর স্ত্রী ও অন্য দু'জন মহিলা-কর্মী। এই দুই কর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অনুবাদ, ''কপি'' এবং ''ফাইল'' সংরক্ষণের কাজ করতেন। এছাড়া বৈঠকের সময়-সূচী ও স্থানের কথা জানতেন ম ...., খ .... এবং ই .... ।
উল্লিখিত চিঠির অস্তিত্ব যদি বাস্তবতই থেকে থাকে, তা' হলে ''শেল্টার''-এ বসবাসরত ৪জন মহিলার মধ্যে একজন লিখেছেন বলে ধরে নিতে হবে। কিন্তু এ সম্বন্ধে সন্দেহ করার উপযুক্ত কারণ এবং নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। (''সিরাজ সিকদার হত্যার নেপথ্য কাহিনী'', সাপ্তাহিক ''জাগরণ'', লন্ডন, ১৫ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৮১)
১৯৭২ সালের ২৭শে জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আসেন। ৩০শে জুলাই তাঁর দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়। অতঃপর তিনি স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য সুইস সরকারের আমন্ত্রণে জেনেভায় যান। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে তিনি ১৪ই সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে যান। দেশ থেকে তাঁর অুনস্থিতির সুযোগ নিয়ে ঢাকা ব্রিগেডের কমান্ডার লে. কর্নেল জিয়াউদ্দিন মাওপন্থী এনায়েতউল্লাহ্‌ খানের সাপ্তাহিক ''হলিডে'' পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে মুজিব সরকারের সমালোচনা করেন। তাঁর মূল বক্তব্য ছিল : ''এ-দেশের মানুষের জন্য স্বাধীনতা এক মস্ত জ্বালায় পরিণত হয়েছে। .... সাধারণতঃ একটা স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনার জোয়ারে দেশ একেবারে শুন্য অবস্থা থেকে নিজেকে গড়ে তোলে। বাংলাদেশে হয়েছে পুরো উল্টোটা। .... এ জাতির অতল গভীরে ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।''
এই নিবন্ধে উগ্র ভারত-বিরোধী জিয়াউদ্দিন আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে এক গোপন চুক্তি করে জাতীয় সংগ্রামের সাথে বিশ্বাসঘাতকা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তিনি বলেন : ''আমরা তাঁকে ছাড়াই যুদ্ধে জয় লাভ করেছি। প্রয়োজন হলে আবারও আমরা যুদ্ধ করবো তাঁকে ছাড়াই।'' [''We fought without him (Sheikh Mujib) and won. If need be, we will fight again without him. Nothing can beat us. We can be destroyed, but not defeated.'' (Lt. Col. Ziauddin, Weekly Holiday, 12 August, 1972.)]
দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু জিয়াউদ্দিনকে তলব করেন। সামরিক বিধি ভঙ্গ করে রাজনৈতিক নিবন্ধ লেখার জন্য তাঁকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়। জিয়াউদ্দিন ক্ষমা প্রার্থনা করতে অস্বীকার করায় তাঁকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়। ২৫ (সাপ্তাহিক ''খবরের কাগজ'', ঢাকা, ২৫শে মে, ১৯৮৯)
১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি জিয়াউদ্দিন সর্বহারা পার্টিতে যোগ দেন। সিরাজ সিকদার তাঁর পার্টিকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করে জিয়াউদ্দিনকে পার্বত্য এলাকার দায়িত্ব নিয়োজিত করেন। তিনি আশা করেছিলেন, এর ফলে পার্টির সামরিক মান দ্রুত বাড়বে। কিন্তু পরে সম্ভবতঃ সিরাজ সিকদার আশাহত হয়েছিলেন। কারণ জিয়াউদ্দিন অস্ত্রের চেয়ে তত্ত্ব এবং বইপত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করতে বেশি পছন্দ করতেন।
সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর পর জিয়াউদ্দিন সর্বহারা পার্টির অস্থায়ী কার্যকরী পরিষদ গঠন করেন। তাঁর আমলে পার্টির নাম বদল করে বাংলাদেশ সর্বহারা পার্টি রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব সর্বহারা পার্টিকে স্বীকার করতেই হয়। ১৯৮৯ সালের এপ্রিল মাসে জিয়াউদ্দিন সর্বহারা পার্টির সংস্রব ত্যাগ করেন। (সাপ্তাহিক ''জাগরণ'', লন্ডন, ১৫ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৮১ এবং সাপ্তাহিক ''খবরের কাগজ'', ঢাকা, ২৫শে মে, ১৯৮৯)
জুলফিকার আলী ভূট্টোর কাছে লেখা মাওপন্থী আবদুল হকের চিঠি এবং স্ট্যানলী ঔলপার্টর মন্তব্য থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, ইস্ট পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) বঙ্গবন্ধু-হত্যা যড়যন্ত্রে জড়িত ছিল। তা' হলে নিশ্চিতই বলা যায়, মাওপন্থী একটি দলের সঙ্গে পাকিস্তানও মুজিব-হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল। এ যাবৎ প্রাপ্ত তথ্য থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, ফারুক, রশীদ ও খোন্দকার মোস্তাক মুজিব-হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তা' হলে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাদের সঙ্গে মাওপন্থীদের যোগাযোগ ছিল কিনা? ওয়াকেবহাল মহল মনে করেন, সন্ত্রাসের মাধ্যমে মাওপন্থীরা প্রতিবিপ্লবের উপযোগী পরিস্থিতি সৃষ্টির ব্যাপারে ব্যস্ত থাকাকালে সামরিক বাহিনীর উচ্চাকাঙ্ক্ষী দলটি তাদের লক্ষ্য অর্জন করে। লন্ডন, ৬ই জুলাই, ১৯৯৮ (২৫) ১৯৭৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বার ''বিজয় দিবস''-কে ''কালো দিবস'' আখ্যা দিয়ে সর্বহারা পার্টি ঢাকায় হরতাল আহ্বান করে। মওলানা ভাসানী পল্টন ময়দানের প্রকাশ্য জনসভা থেকে সেই হরতালের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। (''অনিরুদ্ধ'', দৈনিক ''সংবাদ,'' ১৩ই নভেম্বার, ১৯৯৮)
সর্বহারা পার্টির নেতা ও কর্মীরা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ২৫ বছর পরেও বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের নামে দেশের গ্রামাঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৮৮ সালের ২৩শে জুলাই বিকেলবেলা স্পেশাল ব্রাঞ্চের একটি দল সর্বহারা পার্টির নেতা সিদ্দিকুর রহমানকে ঢাকার শ্যাওড়াপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। সিদ্দিকুর রহমান ৩টি হত্যাসহ ১৭টি মামলার পলাতক আসামী। ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি মামলার রায়ে তাকে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সে পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির শৈলকুপা এলাকার এরিয়া কমাণ্ডার বলে পুলিশ জানিয়েছে। (দৈনিক ''সংবাদ,'' ২৪শে জুলাই, ১৯৯৮)
  মূল লেখার প্রকাশকালঃ- July 18, 2013 at 3:42pm
সংগৃহীত এবং সম্পাদিত
0 notes
sumitchowdhury · 11 years
Text
মুজিব-হত্যায় মাওপন্থীদের ভূমিকা - আবদুল মতিন
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তি, বিশেষ করে পাকিস্তান-সমর্থনপুষ্ট মাওপন্থীরা, আওয়ামী লীগ সরকার-বিরোধি অপপ্রচার ও নাশকতামূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রতিবিপ্লবের উপযোগী পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে। সামরিক বাহিনীর উচ্চাভিলাষী একটি উপদল তার সুযোগ গ্রহণ করে। ১৫ই অগাস্ট তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ষড়যন্ত্রকারীরা পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী খোন্দকার মোস্তাককে শিখণ্ডী হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে।
মাওপন্থীদের নাশকতামূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু সচেতন ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারী এবং ২৬শে মার্চ তারিখে প্রদত্ত দু'টি পৃথক ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-বিরোধীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে দেশপ্রেমিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, এক দল লোক পাকিস্তান থেকে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে নিরপরাধ লোককে হত্যা করছে; এমন কি পাঁচজন সংসদ সদস্যকে তারা হত্যা করেছে। তিন-চার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকেও তারা হত্যা করেছে। এদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। তারা বলেছিল, এই সরকারকে অস্ত্র দিয়ে উৎখাত করতে হবে। মুখে বলেছে তারা, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, কিন্তু গোপনে তারা অস্ত্র জোগাড় করেছে। কেউ কেউ এখনও গোপনে বিদেশীদের কাছ থেকে পয়সা এনে বাংলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এদের কেউ কেউ বাংলাদেশের নাম পর্যন্ত বলতে লজ্জাবোধ করে। তারা মানুষ হত্যা থেকে আরম্ভ করে রেল-লাইন ও ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরী ধ্বংস করে এবং জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে দেশে এমন অবস্থা সৃষ্টি করেছে, যার সুযোগ নিচ্ছে বিদেশী এজেন্টরা। [১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারী জাতীয় সংসদে দ্বিতীয় বিপ্লব, জাতীয় ঐক্য গঠন ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং ২৬শে মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী সম্পর্কে প্রদত্ত ভাষণ। (বাংলাদেশের সমাজবিপ্লবে বঙ্গবন্ধুর দর্শন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ১৯৭৯, পৃ. ২০৪-২২৫)]
১৯৭৪ সালের ২৮শে ডিসেম্বর রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে অরাজনৈতিকতাজনিত সঙ্কট মোকাবিলার জন্য সারাদেশে বঙ্গবন্ধু-সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় : ''অবাধ গণতন্ত্রসম্মত সুযোগের যে ভাবে অপব্যবহার হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক তৎপরতার পরিবর্তে যে ভাবে নৈরাজ্য ও অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে জাতীয় বিপর্যয় অনিবার্য করে তোলার জন্য সমাজ-বিরোধীরা যে ভাবে অশুভ তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে, নাশকতা, অন্তর্ঘাত ও সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ এবং নির্বিচারে গুপ্ত-হত্যা চালিয়ে যে ভাবে জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা, ভীতি ও ত্রাসের সঞ্চার করা হয়েছে, জনগণের নির্বাচিত ও আস্থাভাজন কোনো সরকারই তার মোকাবিলায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না। সুপরিকল্পিত এই নৈরাজ্য, অরাজকতা ও সঙ্কট থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য এই কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো বিকল্প পথ খোলা ছিল না।'' (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা'', ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া, ''আজকের কাগজ'', ২৭শে এপ্রিল, ১৯৯২)
প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে যারা ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছিলো, তাদের মধ্যে ছিল সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টি, আব্দুল হকের পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি, মোহাম্মদ তোয়াহার সাম্যবাদী দল (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) এবং জলিল-রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭২ সাল থেকেই প্রতিবিপ্লবের হুমকি দিচ্ছিলেন। ২৪শে অগাস্ট (১৯৭২) ঢাকার ''দৈনিক বাংলা''-য় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবিপ্লব আসন্ন। ন'মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামো ভেঙে পড়ার ফলে নিত্যপ্রয়োজীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারণে জনসাধারণের মধ্যে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, তার সুযোগ গ্রহণ করে মওলানা ভাসানী মুজিব সরকারকে প্রতিবিপ্লবের হুমকি দেন। ওয়াকেবহাল মহল মনে করেন, মাওপন্থী, ধর্মান্ধ মোল্লা ও পাকিস্তানপন্থীদের উস্‌কে দিয়ে তিনি বাংলাদেশে প্রতিবিপ্লব ঘটাবার আয়োজন করছিলেন। (History of the Freedom Movement in Bangladesh, Jyoti Sen Gupta, p. 475.)
১৯৭২ সালের ৩রা সেপ্টেম্বার পুরানো পল্টনের এক জনসভায় মওলানা ভাসানী বলেন, জনগণের ইচ্ছায় সরকার পরিচালিত হবে; জনগণকে বাদ দিয়ে সরকার চলতে পারে না। তিনি দাবি করেন : ''সর্বদলীয় সরকার চাই; অন্ন-বস্ত্র দাও, না হলে গদি ছাড়।'' তিনি আরও বলেন, জনসাধারণের দুঃখ-দৈন্য দূর করার ব্যাপারে মুজিব সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এ-সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি গণপরিষদ ও মন্ত্রীসভা ভেঙে দিয়ে জাতীয় 'কনভেনশান' ডেকে জাতীয় সরকার গঠন করার আহ্বান জানান। সভা শেষে এক ভূখা-মি��িল নিয়ে তিনি গণভবনে গিয়ে একটি ১৮-দফা স্মারকলিপি পেশ করেন। (''গণকণ্ঠ'', ঢাকা, ৪ঠা সেপ্টেম্বার, ১৯৭২)
১৯৭১ সালে ''মুজিবনগর''-এ অবস্থানকালে মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ সরকারের বৈধতা স্বীকার করে মুক্তিযু্দ্ধের সমর্থনকারী বিভিন্ন দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিদের বলেছিলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পরাজিত দলের নেতাদের নিয়ে সর্বদলীয় মন্ত্রীসভা গঠন করা সম্ভব নয়। (''আজকের কাগজ'', ঢাকা, ২১শে এপ্রিল, ১৯৯২)
১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বার মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের বৈধতার ভিত্তি অপরিবর্তিত থাকা সত্ত্বেও মওলানা ভাসানী সর্বদলীয় সরকার গঠনের দাবি উত্থাপন করেন।
  মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে খোন্দকার মোস্তাক ও মুজিব-হত্যাকারী সামরিক অফিসারদের যোগাযোগ সম্পর্কে বহু তথ্য ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফ্‌সুল্টজ্‌-এর আলোড়ন সৃষ্টিকারী বই ''বাংলাদেশ : দি আনফিনিস্‌ড্‌ রেভলিউশান''-এর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।
১৯৯৩ সালে প্রকাশিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বইতে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে বাংলাদেশের মাওপন্থীদের সরাসরি যোগাযোগ এবং মুজিব-বিরোধী কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য অর্থ, অস্ত্র ও বেতারযন্ত্র সরবরাহ সম্পর্কে একটি প্রামাণ্য দলিলের কথা উল্লেখ করা হয়। জুলফিকার আলী ভুট্টোর জীবনীকার মার্কিন অধ্যাপক স্ট্যানলী ঔলপার্ট ''জুলফি ভুট্টো অব পাকিস্তান : হিজ লাইফ এ্যান্ড টাইমস'' বইতে লিখেছেন, দু'বছর যাবৎ ভুট্টো কয়েকটি মুজিব-বিরোধী দলকে তাঁর গোপন ''স্বেচ্ছাধীন তহবিল'' থেকে অর্থ-সাহায্য অব্যাহত রাখেন। বাংলাদেশের রাজনীতির জনাকীর্ণ বর্ণালীর উভয় দিকে অবস্থানকারী দলগুলির মধ্যে ইসলামিক মৌলবাদী ও মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট বাঙালীরা এসময় একজোট হয়ে মুজিব সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়। পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট)-এর জেনারেল সেক্রেটারী আব্দুল হক ''গভীর বেদনা ও নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা'' প্রকাশ করে ''প্রিয় প্রধানমন্ত্রী'' ভুট্টোকে ১৯৭৪ সালের ১৬ই ডিসেম্বার তারিখে লিখিত এক চিঠিতে ''জনগণের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সম্পর্কচ্যুত মুজিবের পুতুল-সরকার''-এর বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ''অর্থ, অস্ত্রশস্ত্র এবং বেতারযন্ত্র'' সরবরাহের আবেদন জানান। উক্ত ''সর্বোচ্চ গোপনীয় ও অত্যন্ত জরুরী'' চিঠিখানি ১৯৭৫ সালের ৬ই জানুযায়ী ভুট্টোর হাতে পৌঁছায়। তিনি চিঠির পাশে ''জরুরী'' শব্দটি লিখে এই ''সৎ ব্যাক্তি''-কে ''সাহায্য'' দানের অনুমতি দেন। পত্র লেখকে ভুট্টো ''স্পষ্টতঃ করিৎকর্মা'' বলে মনে করেন। [''Bhutto had been funneling secret 'discretionary' funds to several anti-Mujib parties during the past two years, and before the end of August, 1975 that investment would pay off handsomely. Orthodox Islamic as well Marxist Communist Bangalis on both wings of the cluttered spectrum of Bangladeshi politics now combined in an opposition chorus to Mujib's inept, tottering regime. Abdul Huq, General Secretary of Bangladesh's Marxist-Leninist Communist Party, had written on 16 December, 1974 to 'My dear Prime Minister' Bhotto with 'much pain and anguish' to appeal 'for funds, arms and wireless instruments' to use against the 'puppet Mujib clique...today totally divorced from the people.' That 'TOP SECRET/MOST IMMEDIATE' letter reached Zulfi on 16 January, 1975, when he minuted on its margin 'Important,' authorising 'help' for this 'honest man,' whom Bhutto rated as 'fairly effective'. (Zulfi Bhutto of Pakistan : His Life and Times, Stanley Wolpert, p.248)]
ঢাকা থেকে লিখিত আবদুল হকের চিঠিখানি প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোর বিশেষ উপদেষ্টা ও মন্ত্রী মর্যাদাভোগী মাহমুদ আলীর মাধ্যমে পাঠানো হয়। সরকারী নথিভুক্ত করে চিঠিখানি তিনি ভুট্টোর কাছে পাঠান। [Ref :PS/MS/8-75, Islamabad, 6 January, 1985. The original letter is in Bhutto Family Library and Archives, 70 Clifton, Karachi. (Zulfi Bhutto of Pakistan : His Life and Times, Stanley Wolpert, foot-note No. 3., p. 350)]
উল্লিখিত বইতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বানচাল করার ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত ভুট্টোর আরও একজন এজেন্ট আবদুল মালেক সৌদী আরবে গিয়ে তাঁর সঙ্গে পত্র-মারফত যোগাযোগ করে। ''প্রিয় মি. ভুট্টো'' সম্বোধন করে ২২শে জানুয়ারী (১৯৭৫) তারিখে লিখিত পত্রে সে বাংলাদেশের ''সাড়ে-ছ'কোটি মুসলমানদের মু্ক্তি''-র ব্যাপারে তাঁর কাছে সাহায্যের আবেদন জানায়। পত্রে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের মুসলমানরা ''আপনার নির্দেশ ও নেতৃত্বের অপেক্ষায় রয়েছে।'' [Abdul Malek's letter to Bhutto, from Saudi Arabia, 22 January, 1975. The original letter is in Bhutto Family Library and Archives. (Zulfi Bhutto of Pakistan : His Life and Times, Stanley Wolpert, foot-note No. 4., p. 350)]
সংবিধান পরিবর্তন করে বাংলাদেশের ''ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ'' নাম গ্রহণ এবং ''মুসলিম মনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ''-কে নিয়ে পাকিস্তানের মতো একটি ''এড্‌ভাইসারী কাউন্সিল'' গঠন করার জন্য শেখ মুজিব কিংবা তাঁর উত্তরাধিকারীদের উপর চাপ প্রয়োগ করার উদ্দেশ্যে কূটনৈতিক ও আর্থিক সমর্থন আদায়ের জন্য ভুট্টো মওলানা নিয়াজীকে সৌদী আরব ও আমীরাত-এ পাঠান। (প্রাগুক্ত, পৃ.২৪৮)
১৯৭০ সালের শেষ দিকে মওলানা ভাসানীর ''ন্যাপ''-এর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে মাওপন্থী মোহাম্মদ তোয়াহা ও আবদুল হক পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) নামে একটি দল গঠন করেন। এই গোঁড়া বামপন্থী দলটি বাঙালীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের বিরোধিতা করেন। এই উপলক্ষে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে, মাওপন্থী দলগুলির মধ্যে একমাত্র তোয়াহা ও আবদুল হকের দল ১৯৬৮ সাল থেকে পরবর্তী কালের ক্রমবর্ধমান সঙ্কটে অন্যদের সঙ্গে একজোট হয়ে সংগ্রাম পরিচালনার বিরোধিতা করে। (Explosion in a Sub Continent : India, Pakistan, Bangladesh and Ceylon, Tariq Ali, p. 316.)
মু্ক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর উপ-মহাদেশের সঙ্কটের প্রকৃত রূপ সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। আবদুল হক ও তাঁর সমর্থকরা দাবি করেন, পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ানের সমর্পনপুষ্ট ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীরা এই সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। আবদুল হকের এই তথাকথিত ''থিসিস্‌'' সম্পর্কে তোয়াহা পুরোপুরি একমত হননি বলে প্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার চার মাস পর পার্টি দ্বিধা-বিভক্ত হয়। আবদুল হক তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত উপ-দলের নাম থেকে ''পূর্ব পাকিস্তান'' বাদ দিতে অস্বীকার করেন। তাঁর উপ-দল পাকিস্তানী সামরিক-শাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আভাস দেয়, জনগণের উপর পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনীর পাশবিক আক্রমণ পরিহার করা হলে তারা আসন্ন ভারতীয় আক্রমণ প্রতিহত করার ব্যাপারে সহায়তা করতে রাজী রয়েছে। [''The crackdown by the Pakistan Army and the extent of its brutality made the independene of Bangladesh an irreversible certainty. Nevertheless, within the East Pakistan Communist Party (Marxist-Leninist) deep disgreement persisted over the party's position in this the most wrenching crisis to grip the region. A faction led by Abdul Huw still agrued that the entire confrontation was the product of Indian expansionism backed by the Soviet Union with the sole intent of destroying the territorial integrity of Pakistan.'' (Bangladesh : The Unfinished Revolution, Lawrence Lifschultz, p. 22.)]
তোয়াহার নেতৃত্বে পরিচালিত উপ-দল পূর্ব বাংলা সাম্যবাদী দল (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ান কলকাতা-ভিত্তিক আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান সমর্থক বলে আবদুল হকের দাবির সঙ্গে একমত হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিচালিত জাতীয় মুক্তির আন্দোলনকে সমর্থন করা উচিত হবে কিনা, সে সম্পর্কে তোয়াহা মনস্থির করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তাঁর উপ-দল এমন একটি কৌশল গ্রহণ করে, যার নাম দেওয়া হয়েছিল ''দু'মুখী যুদ্ধ''। তারা নাকি একদিকে পাকিস্তান বাহিনী এবং অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আওয়ামী লীগের অনুগত মুক্তিবাহিনী, নাকি পাকিস্তান বাহিনীকে তোয়াহা তাঁর প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচনা করেন, তা' কখনো কখনো বোঝা কষ্টকর ছিল। [''Toaha's faction ultimately adoped a strategic position they termed a 'two-way war'. On the one hand they fought the Pakistan Army and on the other they fought the forces loyal to the Awami League. At times it was difficult to ascertain whether Toaha regarded the Mukti Bahini forces, which he identified with the Awami League, or the Pakistan Army, to be the main enemy.'' (Bangladesh : The Unfinished Revolution, Lawrence Lifschultz, p. 22.)]
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে তোয়াহার সাম্যবাদী দলের রংপুর শাখা শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ এবং মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে একটি ছাপানো প্রচারপত্র বিলি করে। এই প্রচারপত্রে বাংলাদেশের অধিবাসীদের সাবধান করে দিয়ে বলা হয়, শেখ মুজিব ও তাঁর আওয়ামী লীগ এবং মিসেস গান্ধীর কংগ্রেস পার্টি ''মহাচীনকে আক্রমণের ষড়যন্ত্র'' করছে। এই প্রচারপত্রে বঙ্গবন্ধুকে ''আমেরিকার দালাল'' বলে অভিহিত করা হয়। (History of the Freedom Movement in Bangladesh, Jyoti Sen Gupta, p. 218)
মুক্তি-বাহিনীর গেরিলাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর ব্যপারে পাকস্তানী-বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার সম্ভাবনা সম্পর্কেও তোয়াহা নিজে নোয়াখালীতে নিয়োজিত পা��িস্তানী কর্নেল আসিক হোসেনের সঙ্গে আলোচনা চালান। শেষ পর্যন্ত এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। (Bangladesh : The Unfinished Revolution, Lawrence Lifschultz, p. 22.)
বাংলাদেশে স্বাধীন হওয়ার পর তোয়াহা ''বর্তমান পরিস্থিতি'' সম্পর্কে এক বিবৃতিতে দাবি করেন, ১৯৬৭ সাল থেকে তাঁর পার্টি স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিল। তিনি বলেন, তাঁর পার্টি আইয়ূব-বিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত করে। কিন্তু ইতিহাস অন্য কথা বলে। আইয়ূবের স্বৈরশাসনকালে মাওপন্থীদের কী ভূমিকা ছিল, তা' বাংলাদেশের জনগণের জানা আছে। মাওপন্থীরা শুধু আইয়ূব-বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়নি তা' নয়, বরং তারা ''চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক'' স্থাপনের জন্য আইয়ূব সরকারকে ''সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী'' বলে দাবি করে। (Explosion in a Sub-Continent : India, Pakistan, Bangladesh and Ceylon, Tariq Ali, p. 319)
স্বাধীনতা অর্জনের পরেও তোয়াহা তাঁর পার্টির নামের সঙ্গে ''বাংলাদেশ'' যোগ করতে অস্বীকার করেন। নামের আগে ''পূর্ব বাংলা'' শব্দ দু'টি বাদ দিয়ে তাঁর পার্টি শুধু সাম্যবাদী (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) হিসেবে পরিচিত হয়। অবিলম্বে তিনি ''বৃহত্তর বাংলা'' আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। তোয়াহার ''বৃহত্তর বাংলা'' আন্দোলনের প্রতি মাওপন্থী চীনের সমর্থন ছিল। ১৯৭২ সালের গোড়ার দিকে বেইজিং-এ এক কূটনৈতিক সান্ধ্য-অনুষ্ঠানে জনৈক বাঙালী কূটনীতিবিদ (সম্ভবতঃ খাজা মোহাম্মদ কায়সার) চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন। উক্ত কূটনীতিবিদ তখনও পর্যন্ত পাকিস্তানী দূতাবাসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাঙালী কূটনীতিবিদদের আক্ষেপের উত্তরে জনৈক উচ্চপদস্থ চীনা অফিসার তোয়াহার ''বৃহত্তর বাংলা'' পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, চীন তা' সমর্থন করবে। (Who Killed Mujib?, A.L. Khatib, p. 169)
স্বাধীন বাংলাদেশে আবদুল হকের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী সামরিক-বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়। বাধ্য হয়ে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) আত্মগোপন করে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ চালিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর আমলে বহু সন্ত্রাসমূলক ঘটনার সঙ্গে আবদুল হকের পার্টি জড়িত ছিল। পাকিস্তানের সঙ্গে, বিশেষ করে জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করেন। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সন্ত্রাসবাদী দলের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর সহকর্মীরা পরস্পর-বিরোধী ছোট ছোট উপদলে বিভক্ত হয়ে দক্ষিণ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে তাদের সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার সংবাদ এখনও (১৯৯৮ সালে) ঢাকার সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট মুজিব-হত্যার পর যাঁরা বক্তৃতা, বিবৃতি ও সংবাদপত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সরাসরি কিংবা প্রকারান্তরে সমর্থনসূচক মন্তব্য করেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাম্যবাদী দল (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট)-এর নেতা মোহাম্মদ তোয়াহা। মুজিব-হত্যায় তোয়াহার সাম্যবাদী দলের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল কিনা তা' জানা যায়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশ তাঁর কাম্য ছিল, একথা সহজেই বোঝা যায়। পরবর্তীকালে মুজিব-হত্যা সম্পর্কে মন্তব্য প্রসঙ্গে তোয়াহা বলেন : ''তাঁর মৃত্যুতে আমি ব্যথিত হই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁর এই মৃত্যুকে জনগণ কি ভাবে নিয়েছে? প্রকৃতপক্ষে জনগণ তখন ভেবেছে, এই বুঝি ভারতের হাত থেকে মুক্তি পেলাম।'' [১৯৮৫ সালের ২৩শে নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মিলনায়তনে ''সাতই নভেম্বর ও সমকালীন রাজনীতি'' শীর্ষক এক আলোচনা-সভায় মোহাম্মদ তোয়াহা উল্লিখিত মন্তব্য করেন। (সাপ্তাহিক ''সুরমা,'' লন্ডন, ৯ই-১৫ই ডিসেম্বর, ১৯৮৫)]
১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা-দখলকে তোয়াহা পরোক্ষভাবে সমর্থন করেন। বছর খানেকের মধ্যে মাওপন্থীরা জেনারেল জিয়াকে সমর্থনদানের জন্য এগিয়ে আসে। বাংলাদেশে মাওপন্থীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে বোম্বের ''ইকনামিক এ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলী'' পত্রিকায় ১৯৭৬ সালের ২৪শে এপ্রিল তারিখে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের সমর্থকদের মধ্যে জামাতে ইসলামী থেকে শুরু করে মাওপন্থীদের এক বিস্ময়কর সমাবেশ দেখা যায়। .... এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে জিয়াউর রহমানকে সমর্থন জানিয়ে বৃহত্তম মাওপন্থী দলের নেতা মোহাম্মদ তোয়াহা ঘোষণা করেন।, একটি প্রতিবেশী দেশ (অর্থাৎ ভারতবর্ষ) এবং সোভিয়েত ষড়যন্ত্রকারীরা (বাংলাদেশের) সৈন্যবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ব্যবধানের জুজু আবিষ্কার করে সাধারণ সৈনিক ও জনসাধারণের মধ্যে অসন্তোষ ও বিরোধের বীজ বপনের চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, এই ''ক্রমবর্ধমান শ্রেণী-ব্যবধান''-এর চতুর যুক্তিপ্রয়োগ করে সোভিয়েত ''সামাজিক-সাম্রাজ্যবাদীরা'' এই দেশকে (অর্থাৎ বাংলাদেশ) পুনর্দখল ও শোষণ করার চেষ্টা করছে। [The despatch also said : The slogans today in Bangladesh is ''national resistance,'' and the Right takes it up with as much enthusiasm as the Left, the religious Right is regrouping fast with official support...M.G. Tawab, chief of the Air Force and Deputy Martial Law Administrator says : ''The Bengali Muslims had suffered from crises becauses they had strayed away from the path of the Prophet and indulged in irreligiousness in the name of secularism.'' (''Bangladesh : Palace Revolution Continued,'' G.K. Mathieu, Economic and Political Weekly, Bombay, 24 April, 1976)]
১৯৭৬ সালের অক্টোবর মাসে এক সাক্ষাৎকারে তোয়াহা বলেন, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের সহায়তায় যে-সামাজিক-সাম্রাজ্যবাদ কাজ করছে, তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করাই হবে তাঁর পার্টির প্রধান কর্তব্য। তিনি আরও বলেন, দেশপ্রেমিক ও রাজনৈতিক দলসমূহ, সৈন্যবাহিনী এবং বেসামরিক শাসন-কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে সোভিয়েত ''সামাজিক-সাম্রাজ্যবাদ''-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনার জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মণি সিং), আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতন্ত্রী দল ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিকে (মুজাফ্‌ফরপন্থী) তিনি দেশপ্রেমিক পার্টি বলে স্বীকার করতে রাজী নন। অন্যরা, যারা তখনও রাজনৈতিক দল গঠনের অনুমতি পায়নি (অর্থাৎ মুসলিম লীগ ও জামাতে ইসলামী), তাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে তিনি রাজী আছেন। তাঁর পার্টির কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান সামরিক সরকারকে তিনি মিত্র বলে মনে করেন। (Weekly Holiday, 17 October, 1976)
১৯৮৫ সালের ৭ই নভেম্বর বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) কেন্দ্রীয় কমিটির নামে প্রচারিত একটি প্রেস-বিজ্ঞপ্তিতে তাদের দলীয় সভার কার্য-বিবরণী দেওয়া হয়। এই বিবরণে বলা হয় : ''সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বারের তাৎপর্য সম্পর্কে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট (মুজিব-হত্যা দিবস) ও ৭ই নভেম্বার (জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা দখল দিবস) আমাদের জাতীয় জীবনে দু'টি সুদূরপ্রসারী ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ১৫ই অগাস্ট সরকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের মাতৃভূমি সম্প্রসারণবাদীদের কবলমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনার মুখে এসে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াশীল চক্রান্ত আমাদের মুক্তির পথে একাধিক বাধার সৃষ্টি করেছিল। তার বিরুদ্ধে সাম্যবাদী দল দেশপ্রেমিক নিষ্ঠার সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চালিয়ে এসেছিল। এ দেশের কৃষক-মজুরের সন্তানদের নিয়ে গঠিত সেনাবাহিনী জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে সেদিনের সংগ্রামে গৌরবজনক ভূমিকা পালন করেছিল। আমাদের ��াতীয় মুক্তির লক্ষ্যে ইতিহাসের পাতায় ৭ই নভেম্বার তারই গৌরবোজ্জল স্বাক্ষর রেখেছে।''
এরপর আক্ষেপ করে বলা হয়েছে, তাদের পার্টি এটা (জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম) যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেনি। (''অনিরুদ্ধ'', দৈনিক ''সংবাদ'', ২৩শে ডিসেম্বর, ১৯৯৪)
জিয়া ও এরশাদের স্বৈরাচারী সরকারের প্রতি তোয়াহার সুযোগ-সন্ধানী মনোভাব গণতান্ত্রিক মহলে সন্দেহের উদ্রেক করে। ১৯৭৬ সালের অক্টোবর মাসে জিয়ার সামরিক সরকারকে তিনি গণতন্ত্র উদ্ধারের সংগ্রামে মিত্র বলে ঘোষণা করেন। ১৯৮৬ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি বলেন, এরশাদের সামরিক সরকারকে তিনি অবৈধ বলে মনে করেন না। ১৫ই জানুয়ারী এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত ১৫-দলীয় বিরোধী জোট এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত ৭-দলীয় বিরোধী জোট এ��শাদ সরকারকে বৈধ মনে করে না। এই পরিস্থিতিতে তাঁর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দেশ-বিদেশে এই সরকার স্বীকৃত হয়েছে ; তাই বৈধতার প্রশ্নে না গিয়ে এই সরকারকে ''পছন্দ করি না'' বলাই সম্ভবতঃ যুক্তিযুক্ত হবে। (দৈনিক ''ইত্তেফাক'', ১৬ই জানুয়ারী, ১৯৮৬)
জুলফিকার আলী ভূট্টোর কাছে লেখা আবদুল হকের চিঠি থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ-বিরোধীরা, বিশেষ করে মাওপন্থীরা, মাহমুদ আলীর মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। পঞ্চাশের ও ষাটের দশকে মাহমুদ আলী পূর্ব বঙ্গ-ভিত্তিক পাকিস্তান গণতান্ত্রিক দলের সেক্রেটারী-জেনারেল হিসেবে পূর্ব বাংলার রাজনীতিতে প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করেন। তিনি ধর্ম-নিরপেক্ষ রাজনীতি ও যুক্ত-নির্বাচন প্রথার (Joint electorate) সমর্থক ছিলেন। তাঁর সম্পাদনায় সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ''নও বেলাল'' পত্রিকার মাধ্যমে তিনি ভাষা আন্দোলনকে জোরালো সমর্থন দান করেন। ষাটের দশকের শেষ দিকে তিনি বঙ্গবন্ধু ছ'-দফা-বিরোধী আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করেন।
১৯৭১ সালের অগাস্ট মাসে পাকিস্তান সরকার গণতন্ত্রী দলের নেতা মাহমুদ আলী ও তৎকালীন ''পাকিস্তান অবজারভার''-এর মালিক হামিদুল হক চৌধুরীকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাবার জন্য পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা সফরে পাঠায়। লন্ডন সফরকালে তাঁরা বিখ্যাত রয়াল ল্যাঙ্কাস্টার হোটেলে অবস্থান করেন। পাকিস্তান সরকার তাদের সফরের ব্যয়ভার বহন করে। ভাতাদান সম্পর্কিত সরকারী দলিলের ''ফ্যাক্সিমিলি'' লন্ডনের সাপ্তাহিক পত্রিকা ''জনমত''-এর ৫ই সেপ্টেম্বর (১৯৭১) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
৫ই অক্টোবর (১৯৭১) জাতি সংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিন্দাসূচক দীর্ঘ বক্তৃতাদান কালে পাকিস্তানী প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে মাহমুদ আলী তাঁর দেশের বিরুদ্ধে ভারত অঘোষিত যুদ্ধে নিয়োজিত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। শুধু পাকিস্তানের আত্ম-সংযমের ফলে এই যুদ্ধ ব্যাপকতা লাভ করেনি বলেও তিনি দাবি করেন। (''দি গার্ডিয়ান'', ৬ই অক্টোবর, ১৯৭১)
মাহমুদ আলী ও হামিদুল হক চৌধুরী পূর্ব বঙ্গে পাকিস্তানী হত্যাযজ্ঞে সাহায্যদানের জন্য সংগঠিত ''শান্তি কমিটি''-র সক্রিয়া সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল মূল ''শান্তি কমিটি''-র উদ্যোগে জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম থেকে একটি মিছিলের আয়োজন করা হয়। এই মিছিল পুরানো ঢাকার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চকবাজার মসজিদের সামনে দিয়ে অগ্রসর হয়ে নিউ মার্কেটের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন খাজা খায়েরউদ্দিন (''শান্তি কমিটি''-র আহ্বায়ক), গোলাম আযম, শফিকুল ইসলাম, পীর মোহসেনউদ্দিন (দুদুমিয়া), সৈয়দ আজিজুল হক (নান্না মিয়া), মাহমুদ আলী, আব্দুল জব্বার খদ্দর এবং এ টি সাদী প্রমুখ।
১৪ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত নাগরিক ''শান্তি কমিটি''-র বৈঠকে ২১-সদস্যবিশিষ্ট একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়। মাহমুদ আলী এই কমিটির সদস্য মনোনীত হন। (''একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়'', দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃ. ৩১-৩২, ৩৪, ৪৭-৪৯) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাহমুদ আলী স্বদেশে ফিরে আসতে সাহস পাননি। বাংলাদেশের ব্যাপারে ভূট্টোর পরামর্শদাতা হিসেবে তিনি স্থায়ীভাবে পাকিস্তানে বসবাসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অনতিবিলম্বে তাঁকে প্রবাসী পাকিস্তানীদের (কার্যতঃ প্রবাসী বাঙালীদের) প্রতি নজর রাখার দায়িত্ব দিয়ে স্টেট-মন্ত্রী পদে নিয়োগ করা হয়। হামিদুল হক চৌধুরীও পাকিস্তানে বসবাস করতে বাধ্য হন। মুজিব-হত্যার পর জেনারেল জিয়ার অনুগ্রহে তিনি দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন।
১৯৭৫ সালে মুজিব-হত্যার তিন সপ্তাহ পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে একত্রীকরণ সম্পর্কে ভূট্টোর বিশেষ পরামর্শদাতা হিসেবে মাহমুদ আলীকে ইসলামাবাদ থেকে লন্ডনে পাঠানো হয়। তাঁরা আশা করেছিলেন, বিদেশ থেকে যথেষ্ট সমর্থন পাওয়া গেলে উভয় দেশের মধ্যে একটি ''কনফেডারেশান'' গঠন করা সম্ভব হবে। কিন্তু তাঁদের আশা পূর্ণ হয়নি, তা' বলাই বাহুল্য। (Zulfi Bhutto of Pakistan : His Life and Times, Stanley Wolpert, p. 256) এ-প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, মাহমুদ আলীর আদি নিবাস তৎকালীন সিলেট জেলায় এবং বিলেত-প্রবাসী বাঙালীদের অধিকাংশ সিলেট থেকে এসেছেন। অতএব, বাংলাদেশ-বিরোধী আন্দোলনে প্রবাসী বাঙালীদের সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে মাহমুদ আলীর দু'টি প্রস্তাব পাকিস্তান সরকার গ্রহণ করে। প্রথম প্রস্তাব অনুযায়ী তথাকথিত পূর্ব পাকিস্তান ''প্রবাসী সরকার'' গঠন করা হয়। পাকিস্তানপন্থী প্রবাসী বাঙালী ব্যারিস্টার আব্বাস আলী উল্লিখিত ভুয়ো সরকারের ''উজিরে আজম'' পদে নিয়োজিত হন। বলা বাহুল্য, এই প্রহসনে মাহমুদ আলীর অনুগ্রহভাজন ব্যক্তিরাই অংশ গ্রহণ করে। দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুযায়ী রেডিও পাকিস্তান থেকে প্রবাসী বাঙালীদের উদ্দেশ্যে সিলটী কথ্য-ভাষায় একটি নিয়মিত অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়।
উল্লিখিত পরিকল্পনা দু'টি ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও মাহমুদ আলী ও তাঁর অনুগ্রহভাজন ব্যক্তিরা হাল ছেড়ে দেয়নি। পরবর্তীকালে তারা যুক্তরাজ্যে ''পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান পুনরায় একত্রীকরণ আন্দোলন'' নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলার ব্যর্থ চেষ্টা করে। ১৯৮৮ সালের অগাস্ট মাসে এই ভুঁইফোড় আন্দোলনের পক্ষে প্রচারিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় : ''১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তান এলাকায় হিন্দুস্তানী আগ্রাসনবাদী এবং সম্প্রসারণবাদীরা 'বাংলাদেশ' নামের এক করদ-মিত্র বা আশ্রিত-রাজ্য স্থাপন করে।'' উল্লিখিত বক্তব্য থেকে তথাকথিত আন্দোলনের সমর্থকরা মাওপন্থী ও ভারত-বিদ্বেষী বলে সহজেই চেনা যায়। একমাত্র তারাই ভারতকে ''আগ্রাসনবাদী ও সম্প্রদারণবাদী'' হিসেবে চিহ্নিত করে।
স্বাধীনতা অর্জন করার কয়েক মাসের মধ্যেই আওয়ামী লীগের একটি অতি-বিপ্লবী গ্রুপ বঙ্গবন্ধুকে কৃত্রিম সমর্থনদানের আভাস দিয়ে নতুন সঙ্কট সৃষ্টি করে। তৎকালীন ছাত্র লীগের নেতা আ স ম আবদুর রব গণপরিষদ ভেঙে দিয়ে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে দেশ-প্রেমিক পার্টির সদস্যদের নিয়ে একটি সরকার গঠনের দাবি উত্থাপন করেন। তিনি সমাজতন্ত্রের বুলি আওড়ান এবং সংবিধানে পূর্ণ ���মাজতন্ত্রের গ্যারান্টি দাবি করেন। কিছুকাল পর এক জনসভায় তিনি বলেন : ''মুজিব, আপনি অস্ত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আপনি অস্ত্র ধরতে জানেন? আমরা অস্ত্র ব্যবহারের শিক্ষা পেয়েছি।'' (Who Killed Mujib, A.L. Khatib, p. 156-7.)
১৯৭২ সালের ৩০শে অক্টোবর ছাত্র লীগের রব-সিরাজ গ্রুপের উদ্যোগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠিত হয়। মেজর এম এ জলিল পার্টির সভাপতি এবং আ স ম আবদুর রব সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। (প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৬-৭) ১৯৭৩ সালে জাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক গোপনে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে দেখা করে মুজিব সরকার-বিরোধী আন্দোলে তাঁকে নেতৃত্বদানের অনুরোধ জানান। মওলানা সাহেব তাঁকে বলেছিলেন : ''মুজিব বেঈমান, মীরজাফর, ওকে উৎখাত করতে হবে।'' ১৯৮৮ সালের নভেম্বর মাসে রব এই তথ্য প্রকাশ করেন। তখন তিনি জাতীয় সংসদে তথাকথিত বিরোধী দলের নেতা। (সাপ্তাহিক ''দেশবার্তা,'' লন্ডন, ২৫শে নভেম্বার-২রা ডিসেম্বার, ১৯৮৮)
১৯৭৪ সালের জানুয়ারী মাসে তাঁরা দেশে বিক্ষোভ ও জনসভা অনুষ্ঠান করেন। ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে তাঁরা পল্টন ময়দানে একটি জনসভায় গরম গরম বক্তৃতা দেন। এর ফলে উত্তেজিত জনতা মিন্টু রোডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলীর সরকারী বাসভবন আক্রমণ করে। পাহারাদার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্যের ফলে ৬জন (অন্য একটি হিসেব অনুযায়ী ৮জন) নিহত এবং আরো কয়েকজন আহত হয়। এই উপলক্ষে মেজর জলিল ও আবদুর রবসহ মোট ১৭জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। (Who killed Mujib, A.L. Khatib, pp. 158-159)
১৯৮১ সালের ২৭শে জানুয়ারী ঢাকায় জাতীয় কৃষক লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে আবদুর রব বলেন : ''আমরা ১৯৭২ সালে আবেগ আর বিক্ষোভ নিয়ে সংগঠিত হয়েছিলাম। আমরা শুধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে জনগণের কাছে বক্তব্য রেখেছি। আমরা বলেছিলাম, শেখ মুজিবকে উৎখাত করতে পারলে সমাজের পরিবর্তন হবে, সমস্যার সমাধান হবে, দেশে বিপ্লব সংঘটিত হবে। আমাদের ডাকে কর্মীরা জেলে গেল, গুলি খেল .... কিন্তু বিপ্লব দেখলাম না। কেন এমন হলো, তা' আজ তাকিয়ে দেখার সময় এসেছে।'' (''সাপ্তাহিক জাগরণ'', লন্ডন, ১৫ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৮১)
তিনি আরও বলেন : ''কর্মীদের মধ্যে হতাশা আসার আরও কারণ রয়েছে। আমরা আন্দোলন করেছি ; কিন্তু শত্রু কে, মিত্র কে, তা' সঠিকভাবে চিহ্নিত করিনি। কোনো কোনো সময় শত্রুকে সাথে নিয়েই আন্দোলন করেছে, যার ফলে আমরা আন্দোলনকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারিনি।'' (প্রাগুক্ত, ১৫ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৮১) সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সরকারের ভিত্তিমূল দুর্বল করে জাসদ প্রকারান্তরে মাওপন্থীদের সহায়তা করে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী সামরিক গ্রুপও এর সুযোগ গ্রহণ করে, এ সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই।
    (সংগৃহীত এবং সম্পাদিত)
0 notes
sumitchowdhury · 11 years
Text
মেধাবী সামলা !!!
বেশ খানিকটা পেছন থেকেই শুরু করি। সময়টা ১৯৪৭ সাল, ব্রিটিশরা এই ভারতীয় উপমহাদেশ ত্যাগ করবার আগে, উপমহাদেশকে দ্বিজাতি ত্বত্ত্বের ভিত্তিতে দুইভাগে ভাগ করে। মূলত সেই ভাগটির মাধ্যমে তারা এই উপমহাদেশে রোপন করে দেয় সাম্প্রদায়িকতার বীজ। হিন্দু, মুসলিম এই দুই জাতির ভিত্তিতে ভারত আর পাকিস্তান নামে দুইটি রাষ্ট্রের জন্ম হলেও বিপাকে পড়ে যায় পূর্ব পাকিস্তানের (তৎকালীন) মানুষেরা। স্বাধীনতার স্বাদ ভারত আর পাকিস্তানে পূর্ণ মাত্রায় উপভোগ্য হলেও নতুন করে পরাধীনতার কবলে পড়ে পূর্ব পাকিস্তান(তৎকালীন) এর জনসাধারণ। সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে থাকে তারা। ক্রমান্বয়ে আঘাত আসে মাতৃভাষার উপর আর তখনই ফুঁসে ওঠে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (তৎকালীন) মানুষেরা। বুকের রক্ত ঢেলে প্রমাণ করে মাতৃভাষার জন্য তাদের ভালোবাসার পরিমাণ।
এভাবে ফুঁসে উঠতে থাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানীরা(তৎকালীন)। বায়ান্ন এর পরে ছেষট্টি, উনসত্তর, সত্তর এর আন্দোলনের পর একাত্তরে এসে সন্মুখ যুদ্ধে উপনীত হয় বাঙালীরা। মাতৃভুমিকে পাক হানাদারের কাছ থেকে মুক্ত করার দীক্ষা নিয়ে নেমে পড়ে মরণপণ যুদ্ধে। আশা শুধু একটাই হায়েনাদের হাত থেকে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করা। তাদের দীক্ষার জোর কি পরিমাণ তা কিন্তু আমরা ভারী অস্ত্রশস্ত্রের বিরুদ্ধে থ্রি নট থ্রি দিয়ে যুদ্ধ করার মানসিকতা দেখলেই বুঝতে পারি। মনে-প্রাণে প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে জীবন বাজি রেখে নেমে পড়লেন এই দেশের সূর্য সন্তানেরা। নেমে পড়েছিলেন আমাদের মা-বোনেরাও। অবশেষে দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এলো স্বাধীনতা আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।
পরাজয় কিন্তু তখনও মেনে নেয়নি পাক হায়েনারা। মেনে নেয়নি তাদের দোসরেরা। যার ফল আমরা দেখতে পাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করার মাধ্যমে পরবর্তীতে এইদেশে পাক হায়েনা আর তার দোসরদের পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে। যারা এইদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলো, যারা এই দেশের মুক্তিযুদ্ধকে ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা পাক ভারত যুদ্ধ ইত্যাদি ফতোয়া দিয়েছিল, যারা এইদেশের স্বাধীনতাকে এখনো পর্যন্ত অস্বীকার করে সেই তাদেরকে এই স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়, নাগরিকত্ব এবং রাজনৈতিক অধিকার প্রদানের মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলো পাক হায়েনাদের দোসরেরা। সেই থেকে শুরু হয়েছিলো ছাত্র হত্যার রাজনীতি। আমরা ৯০ দশকের শুরুর দিককার ইতিহাসের পাতা উল্টালেই দেখতে পাবো জামায়াত-শিবিরের হাতে কিভাবে এইদেশের ছাত্র সমাজ খুন হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি খুন, জখম হয়েছিল সেইসময়ের ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ। মাত্র কয়েকবছরের মাথায় কিভাবে শিবিরের হাতে এতো অস্ত্র-শস্ত্র চলে আসে এই প্রশ্নটি কি কখনো এসেছিলো নিজের মাঝে? অন্যকে প্রশ্ন করবার চাইতে নিজেকে প্রশ্ন করাটাই শ্রেয়। যতবার নিজেকে প্রশ্ন করবেন ততবারই একটি উত্তর পাবেন আর যার মধ্যে অধিকাংশ সময়ে সঠিক উত্তরটাই পাবেন।
  জামায়াত-শিবিরকে এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের কর্ম কৌশলের কারণে। দেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে ব্যবহার করে বারবার ক্ষমতার শীর্ষে উঠে এসেছে তারা। দেশের প্রত্যেক স্থানে তারা ঢুকিয়ে দিয়েছে তাদের বিষ। কি সামরিক খাত আর কি শিক্ষা খাত অথবা ব্যাংকিং খাত কিনবা চিকিৎসা খাত প্রতিটিতে যেমনভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে তেমনি খুন, জখমের রাজনীতিতেও সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্রটি তারা তখনই ব্যবহার করে যখনই তাদের সেটির দরকার পড়ে, আর সবচাইতে বড় কথা আমাদের দেশের লোকেরাও দেরীতে হলেও সেই “ধর্মবড়ি” সেবন করে নেয়।
এই জামায়াত-শিবিরের কিন্তু জুড়ি নেই যেকোন একটি উদ্যোগকে বিতর্কিত করতে। এর চরম উদাহারণ কিন্তু আমরা দেখতে পাই আমাদের “গণজাগরন মঞ্চ”-এর দিকে তাকালে। ধর্মকে ব্যবহার করে আর অশ্লীলতার ফতোয়া দিয়ে সর্বোপরি গোয়েবলসি তত্ত্বের সুনিপুন ব্যবহার করে তারা বিতর্কিত করেছিলো তরুণ প্রজন্মের এই মঞ্চকে। তেমনি একইভাবে তারা বিতর্কিত করেছিলো ২০০৮ সালে সাধারন শিক্ষার্থীদের সংগঠনকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবী জানিয়ে। সেইসময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানার ব্যবহার করে তারা নেমেছিলো মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রথা বাতিলের দাবীতে আর এর কারণ একটাই তারা জীবনেও নিজেদের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা পোষ্য হিসেবে দাবী করতে পারবে না। তাদের যেই সূতিকাগার সেটিতো মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের চরমভাবেই অস্বীকার করে। আর তাদের এইসকল ফাঁদে পা দিয়ে দিগ্বিদিকজ্ঞানশুন্য হয়ে পড়ে আমাদের প্রজন্ম।
  ঠিক একইরকমভাবে তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে দিলো বর্তমান প্রজন্মের একটি বিরাট অংশ। যাদের মাথায় ঢুকে বসেছে সমাজতান্ত্রিকতার ভুত। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা কিছু গিরগিটি যারা অর্থের লোভে বিকিয়ে যায় যেখানে সেখানে সেই তাদেরকেই হাত করে রাতারাতি মেধাবী বানিয়ে ছেড়ে দিলো শাহবাগে। তাদের যুক্তিগুলো বড়ই অদ্ভুত আর বেশি পরিমাণে অকৃতজ্ঞ।
  ইতো��ধ্যে অনলাইনে ব্যাপকহারেই প্র��াণিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রথা বাতিলের দাবীতে সোচ্চার তথাকথিত মেধাবী নেতাদের স্বরুপ। দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জামায়াত-শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত।
  স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী হিসেবে খ্যাত বিভিন্ন ফেসবুক পেইজের দিকে তাকালেই স্পষ্টতই দেখা যাবে প্রতিনিয়ত কিভাবে অপমানিত করা হচ্ছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের। চরম ঘৃণিতভাবে এবং মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তারা বিতর্কিত করে তুলছে এই দেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধকে আর তাদের সাথে পরোক্ষভাবে যোগ দিয়েছে যত্রতত্র বিকে যাওয়া তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীগণ। এই এরাই একসময়ে জামায়াত-শিবির তথা যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে শাহবাগে দাঁড়িয়ে শ্লোগান দিয়েছিল দিনরাত এক করে অথচ আজ সেই তারাই দাঁড়িয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পক্ষে। মীরজাফরের চরিত্র কেমন ছিলো তা কি এদের দেখেই বোঝা যায় না!
    মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল কিনবা সংস্কারের দাবীতে আজ যারা উন্মাদ হয়ে গলাবাজি করছে তারা কি আদৌ জানে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাস্তবে ঠিক কতটুকু পূরণ হয়? এক জরিপে দেখা যায় বর্তমান সরকারের আমলে এসে মোট কোটার শতকরা ৬০ ভাগের কিছু কম বেশি পুরণ হচ্ছে। অনলাইনের বদৌলতে প্রায়ই একটা জিনিস দেখে মর্মাহত হয়ে যাই আমরা আর সেটি হলো দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের অনাহারী জীবন-যাপন। আজ মুক্তিযোদ্ধা কোটাপ্রথা বাতিলের দাবীতে গগনবিদারী চিৎকার করছে যারা তাদের সুন্দর একটা যুক্তি হলো মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিলেন সকলের সমান অধিকার বাস্তবায়নের জন্য, সেই তাদেরকেই প্রশ্ন করি সকলের সমান অধিকার কি আদৌ বাস্তবায়িত হয়েছে? যদি হয়ে থাকে তাহলে কেন চিকিৎসার অভাবে বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা, কেন অনাহারে তাঁরা দিন কাটাচ্ছেন, কেন তাঁদেরকে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে হচ্ছে?
  জীবনবাজি রেখে যাঁরা ছিনিয়ে আনলেন আমাদের জন্য স্বাধীনতা সেই তাঁদের সামান্যতম এই ভাগটুকুতে আজ তোমাদের শকুনি দৃষ্টি পড়ে গেলো?
  তথাকথিত মেধাবীরা সংবিধান শেখাতে আসে, তারা সংবিধানের ২৯ (১) ও (২) অনুচ্ছেদ দেখিয়ে বলে- “প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে” ও  “কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।” অথচ তারা সুকৌশলে সংবিধানের   ২৮ (৪) ধারা এড়িয়ে যায়।  ‘২৮ (৪)-এ  বলা আছে. “নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।”
    কোটাপ্রথা বিরোধীদের দাবী জেলা কোটা বাতিল করতে হবে। আসলেই তো এই প্রথা কেন রাখতে হবে, এই প্রথার দরকারটাই বা কি? এই প্রথা থাকলে অজো পাঁড়া গাঁয়ের করিম যে কিনা আধাবেলা খেয়ে না খেয়ে চাঁদের আলোতে পড়ে সুযোগ পেয়ে যাবে আর পিছিয়ে পড়বে শহুরে বিলাসী? যে কিনা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে দু’চারটে প্রাইভেট টিউটর রেখেছিল। এ ব্যবস্থা তো মানা যায় না, একজন একটাকাও খরচা না করে টিকে যাবে আরেকজন লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করেও টিকতে পারবে না!
  কোটাপ্রথা বিরোধীদের দাবী উপজাতি কোটা বাতিল করতে হবে। এই কোটা থাকলে পাহাড়ী আর সমতলের লোকদের মাঝে বৈষম্য হচ্ছে। শারীরিকভাবে খাটো হয়েও টিকে যাচ্ছে উপজাতিরা আর শারীরিকভাবে ঠিক থেকেও টিকতে পারছে না সমতলীরা সুতরাং এ প্রথা বাতিল করতে হবে!
  কোটাপ্রথা বিরোধীদের দাবী নারী কোটাও বাতিল করতে হবে। কেননা নারীরা যদি একটু বাড়তি সুবিধা পেয়ে এগিয়ে যায় তাহলে পুরুষ হিসেবে তো তাদের একটা অপমান হয়ে যায়। নারীতো থাকবে ঘরে, করবে স্বামীর অর্থের হিসাব কি দরকার তাদের বাইরে গিয়ে তেঁতুল হবার!
  এদের আরেকটি দাবী প্রতিবন্ধী কোটা বাতিল করবার। এ বিষয় নিয়ে কিছুই বলার নেই। কেননা যারা প্রতিবন্ধীদের কোটার বিরুদ্ধে তারা আদৌ সুস্থ মানসিকতার মানুষ কিনা এটা নিয়ে ব্যাপক পরিমাণে সন্দেহ রয়েছে।
সবশেষে এসে এইটুকুই বলব আজব এক দেশের বাসিন্দা আমরা, এমন এক দেশে বসবাস করি যেইদেশে শিক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হয়ে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আন্দোলনে নামে। এদের ভাব ভঙ্গিমা এমন যেন এইবারেই কোটা প্রথা চালু হয়েছে এর আগে ছিলোই না। এইবার চালু হয়েছে বলে তাদের সেই অপরিসীম মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে না। তাই আক্ষেপের সুরেই বলতে হয় “ভিক্ষা লাগবে না, মেধাবী সামলা!!!”
0 notes
sumitchowdhury · 11 years
Text
ইয়াবা নাকি!!!
ইয়াবা হইতেছে দুইটা প্রোডাক্টের মিশ্রন
১. মেটা
২. ফেটামাইন
প্রধান উপাদান মেটার ফলাফল যা হবে স্বাভাবিক ভাবেই ইয়াবার ফলাফলও তাই হবে। আবারো বলছি বাংলাদেশে ইয়াবার প্রসার ঘটানো হয়েছে সৌন্দর্যতা আর যৌবন বাড়ানোর নেশা হিসেবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো এটি গ্রহণের পর কেউ ধরতেই পারবে না যে সে নেশা করেছে। অন্যান্য নেশা নেয়া হলে মানুষে ঝিমিয়ে পড়ে বা চোখ লাল হয় কিন্তু ইয়াবা নিলে সম্পূর্ণ উল্টোটাই হয়। আর এই তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে এইদেশে ইয়াবার প্রসার ঘটানো হয়। যার ফলে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অভিজাত শ্রেণীর উঠতি বয়সের ছেলে মেয়ে সহ মাঝ বয়েসী সৌখিন আন্টিরাও ইয়াবার দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
ইয়াবা সেবীদের জন্য সবচেয়ে সুখবর হচ্ছে এখন আর বার্মাইয়া ইয়াবা চট্টগ্রামের পটিয়ার পর খুব একটা পাওয়া যায় না। আপনারা ঢাকাতে বসে এতো এতো দাম দিয়ে যাই নিচ্ছেন তা নিজের দেশের প্রোডাক্ট। এসব বানানো থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ পড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা আর উৎপাদনকারীরা বিক্রি করে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। আর আপনি সেসব রঙ আর সিল দেখে সিটি, জিপি, আর৭ ইত্যাদি ভেবে দাম দিয়ে কিনে নিচ্ছেন। অথচ ইয়াবার প্রভাবেই ভুলে গেলেন "চকচক করলেই সোনা হয় না"।
সে অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে হেরোইন এর অবস্থা খারাপ। এই অবস্থা খারাপ মানে ভালো মানের হেরোইন আসে না। যা আসে সেসব হলো ঝুট মাল। একসময় নাকি এইদেশে বাদামী রঙের হেরোইন পাওয়া যেত কিন্তু এখন যা পাওয়া যায় তার পুরোটাই কালো এবং দেখতে "আলমের ১নং দাঁতের মাজন"-এর মতো। বাদামী রঙের হেরোইন পাওয়া যেতো এরশাদ কাগুর আমলে এখন কাগুও ক্ষমতায় নাই তাই সব ভেজাল।
ঠিক একইরকম ভাবে একসময় যেই ইয়াবা আপনারা সেবন করতেন এখন আর সেই ইয়াবা নাই। যারা নিয়মিত ইয়াবা সেবন করেন অথবা খোঁজ খবর রাখেন আপনারা জেনে থাকবেন সবচেয়ে নিচুস্তরের ইয়াবাটি হলো "ডগ" এখন আপনারা যা পাচ্ছেন সেটি ডগের চাইতেও খারাপ। এর কারণ হলো এইদেশে যে বা যারা এসব বানাচ্ছে তারা কোনভাবেই অভিজ্ঞ নয় বানানোতে আর শিক্ষিতও নয়। এই কথা এতো জোর দিয়ে বলতে পারছি এই জন্যেই যে এইদেশে ইয়াবা বা মেটা উৎপাদনের কোন প্রতিষ্ঠান আগে ছিলো না আর থাকলেও হয়তো আমি জানিনা আর যারা বানাচ্ছে তারা শিক্ষিত না এইজন্যেই বলছি যে ইয়াবা বা মেটা বানাতে যে পরিমান জ্ঞান আর যন্ত্রপাতির দরকার তা তাদের নেই। হয়তো তারা বার্মার কারো কাছ থেকে কিছুটা শিখেছে আর তাই দিয়ে নিজেরাই বানাতে বসে গিয়েছে। সবচেয়ে বড় যে তথ্যটি শুনেছি সেটি হলো এই ইয়াবা বানানোর পর একমাস রৌদ্রের তাপে শুকাতে হয় কিন্তু আমাদের দেশে একদিনেই শুকিয়ে ফেলা হয়।
এখন সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি কি করবেন সেটা আপনিই সিদ্ধান্ত নেবেন, কেননা জীবন আপনার।
এই লিংকটি হলো মেটার উপরেঃ- http://www.youtube.com/watch?v=nl8DYQP4KjQ
1 note · View note
sumitchowdhury · 11 years
Photo
Tumblr media
facebook cover photo for brazil fans
0 notes
sumitchowdhury · 11 years
Text
গয়নার বাক্স এবং কিছু অপাদ্য বচন।
আমাদের দেশীয় সিনেমাগুলোতে শুধুমাত্র তখনই ভারতের অবদান দেখানো হয় যখন সেটি হয় মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা। কিন্তু ভারতীয় বাংলা তথা হিন্দি সিনেমাতেও প্রায়ই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা তুলে ধরে তারা। সেখানে কিন্তু তারা ফুটিয়ে তুলে না যতটা তারা করেছিল। অথচ আমরা তাদের সেই কৃতিত্বটুকু দিতে প্রায়ই কার্পণ্যবোধ করি।
অনেকেই কলকাতাকে পছন্দ করেন না কিপটা হিসেবে আখ্যায়িত করে। অথচ হলফ করে বলতে পারি আপনারা সেই তাদেরকেই চিনেন যারা এইদেশ থেকে সব হারিয়ে তথা মারিয়ে ঐপারে চলে যায়। তখন তাদের ভিতর একটা ক্ষোভ থাকে আর সেই ক্ষোভ আর সর্বোপরি অভাব থেকেই তাদের কিপটামির সুত্রপাত। কিন্তু আমি কলকাতার যতজনের সাথে এই পর্যন্ত মিশেছি তাদের শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি ছিলো উদার মনা আর বন্ধুবৎসল।
আমার বন্ধু তালিকাতে অনেক কলকাতার বন্ধু আছে। যদিও তারা বাংলাদেশী কিন্তু বিভিন্ন কারণেই আজ তারা সেখানে থাকে কিন্তু তাদের মাঝে আমি কখনো দেখিনি আপনারা যা দেখেন। আমার পায়ের অপারেশন হলো একে একে দুইবার। নিজের মামা অপারেশন করালেও পয়সা নিতে ভুলেন নাই অথচ আমার সেই বন্ধুগুলো তাদের সব বাদ দিয়ে আমার পিছনেই লেগে ছিলো। বাবা-মা যেতে পারেন নাই অপারেশনের সময়, শুধু হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আর বাকীটা করেছিল আমার সেই বন্ধুরা।
স্পষ্ট মনে আছে সেদিন ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে অথচ আমার বন্ধু তার প্রেমিকার সাথে খানিকটা সময় দিয়ে ছুটে এসেছিল আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে বলে। মনে আছে চলাফেরা করতে পারতাম না বলে নিজে পায়ে হেঁটে বাথরুমে যেতে পারতাম না অথচ তারা আমাকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে বাথরুম করিয়েছে। রান্না করে খাবার খাইয়েছে এমনকি পরনের কাপড়ও ধুয়ে দিয়েছে। কোনদিনও তাদের মুখে একবারের জন্যেও বিরক্তি তো দূরে থাক খানিকটা অভিযোগের কিছুই দেখি নাই।
এতো গেলো বন্ধুদের কথা এবার একটু পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের দিকে তাকাই। হ্যাঁ উপরে যে মামাটির কথা বলছিলাম তিনি অতটা আপন না হলেও কিছুটা রক্তের সম্পর্কতো আছেই অথচ তিনি প্রায়ই কুন্ঠাবোধ করতেন পরিচয় দিতে। যাক সে কথা সেসব আউড়ে লাভ নেই। এরপর বলব কাকির কথা। যে কাকাকে আমার বাবা ছোট বেলায় কোলে পিঠে করে মানুষ করেছিল সেই কাকার বৌ। কাকী খুব বেশি কষ্ট করে এখনো পর্যন্ত টিকে আছেন সেখানে। তারপরেও সেই অভাবের মাঝে তাদের কাছে গিয়ে যখন পড়েছিলাম একবেলার জন্যেও কাকী কিনবা ভাই বুঝতে দেয় নাই। এমনকি একদিন কাজ করতে গিয়েছিলাম কেন সেইটা নিয়ে তাদের সেকি রাগ।
আরেকজন হলেন আমার ঠাকুরমা। খুব ছোট্টকালেই বাবা-মা'র সাথেই নাকি কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। আর ঠাকুরদাদা যুদ্ধের আগে করে সেখানে চলে গিয়েছিল। সেই ঠাকুরমা'কে দেখেছি কতটুকু ভালোবাসেন এইদেশটাকে। যেদিন প্রথম ঠাকুরমা'কে দেখেছিলাম তিনি কতটা আপনভেবে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন তা তখন বুঝতে না পারলেও পরে বুঝেছি রক্তের টান কি জিনিস। এরপর এইদেশটাকে নিয়ে উনার কত হাজার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। কেমন বাচ্চা মানুষের মত প্রশ্ন করছিলেন এই দেশের আকাশটা কেমন দেখতে, এখানের রাস্তাঘাট কেমন দেখতে, হাট-বাজার কেমন দেখতে ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রশ্ন যেন শেষ হতেই চায় না উনার। প্রায়ই বলতেন উনাকে যেনো দেশে একবারের জন্যে হলেও নিয়ে আসি। কিন্তু তিনি থাকেন গুজরাটে আর চাইলেই তো আনা যায় না, তাই এই আনবো সেই আনবো করে করে কাটিয়ে দিচ্ছিলাম। হঠাৎ একদিন ফোন আসলো যে উনি নাকি দেশে এসেছেন আর নারায়ণগঞ্জে উঠেছেন একজনের বাড়িতে। আমি তো ঐ রাতেই দৌঁড়ে গাড়িতে চেপে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছে গেলাম। ওমা সকালে ভোর না হতেই দেখি বুড়ি সেজেগুজে বসে আছেন চট্টগ্রামে চলে আসতে। তাকে বললাম রাতের গাড়ীতে উঠবো কিন্তু বুড়ি কিছু শুনতেই নারাজ! তার এক কথা এখনই যেতে হবে চট্টগ্রাম। বুড়ির এমনভাব পারলেই যেনো বিমানে চাপে। এদিকে বুড়ি আসার সময়েই পা মচকে এসেছিলো অথচ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বুড়ি দিব্যি চট্টগ্রাম এসে পৌঁছালো। তারপর আর পায় কে, যেই আসছে তাকে দেখতে তার সাথেই চলে যাচ্ছে। একদিন আমাকে নিয়েই চলে গেলেন পাবনা আশ্রম দেখতে। প্রায় দুইমাস ঘুরলো বুড়ি এরপর যেদিন গাড়ীতে উঠবে তখনও দেখছিলাম বুড়ির চোখের কোণে জল। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই বলল বিয়ে করে রেখে দে তোর কাছে। পরে কথা দিতে হলো তাকে আবারো আনবো দেশ ঘুরাতে কিন্তু এখনো সেই কথাটি রাখতে পারি নাই।
এই যে এতোগুলো স্মৃতিচারণ আর কথা লিখলাম তার কারণ কি জানেন? কারণ হলো একটু আগেই দেখলাম Goynar Baksho সিনেমাটি। সেখানে বাদ যায়নি এদেশের কথা, বাদ পড়েনি একাত্তরের কথা, বাদ পড়েনি এই জাতির পিতার ছবিখানা। সহজ কথা সিনেমাটি এককথায় অসাধারণ লেগেছে। প্রথমে খুব হাসলেও যখন আমার এইদেশটার কথা উঠে আসতে লাগলো চোখ দিয়ে পানি আসতে লাগলো খুশিতে। যখন গেয়ে উঠলো "আমার সোনার বাংলা" তখন কতটা যে আনন্দ লেগেছে তা কিভাবে বুঝাবো জানিনা। তবে কয়টা কথা না বলে গেলেই নয়, নিন্দুকেরা সবসময়েই নিদা করবে এটা স্বাভাবিক। পারে তো না নিজে কিছু করতে সবসময় ব্যস্ত অন্যের আঁটি ছিঁড়তে। যখন "ক্ষ" ব্যান্ড সোনার বাংলা গানটি গেয়েছিল তখনও তারা সরব ছিলো জানি এখনো হয়ত বলবে সিনেমাতে ওভাবে দেখিয়ে অপমানক অরা হয়েছে। তাদের জন্য একটাই কথা "ধুর শালা  পাকি জারজ বেজন্মা, পাকিস্তানে যাইয়া মর"।
0 notes
sumitchowdhury · 11 years
Text
উদারতা নাকি গুষ্ঠি উদ্ধার
যুদ্ধাপরাধী তথা জামায়াত -শিবিরের বিরুদ্ধে যেই কথা বলবে তাকে সমর্থন জানানো আর তার দায় নেওয়া দুটো এক জিনিস নয়। এই অনলাইনে প্রচুর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অনলাইন এক্টিভিস্ট রয়েছেন তাদের সকলের সাথে নিশ্চয়ই সবার পরিচিতি নাই। তাই বলে কি অন্যের কাজকে সমর্থন জানাবো না?
এই কথাগুলো বলার কারণ এই জন্য যে, শাহবাগে গণজাগরন মঞ্চ ২ এর পক্ষে যারা দাড়িয়েছে তাদের সাথে শুধুমাত্র সংহতি প্রকাশ করেছে মূল গণজাগরন মঞ্চ। যেহেতু তারাও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে নিজেদের দাবী করছে সুতরাং তাদের উপেক্ষা করে নিজেদের বিতর্কিত করতে চায়নি মূল গণজাগরন মঞ্চ।
আজ যদি মূল গণজাগরন মঞ্চ তাদের অস্বীকৃতি জানাতো তাহলে তারা সেইট���কে পূঁজি করে অনলাইনসহ সমস্ত মিডিয়াতে এই খবর প্রকাশ করে বেড়াত যে গণজাগরন মঞ্চ দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে, তারা আওয়ামীর দালালী করছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনিতেই গোল্ডফিস মেমোরিওয়ালা এই আমরা ভুলেই যাই যে এই যুদ্ধাপরাধ বিচার আওয়ামীলীগই শুরু করেছে তাও আবার তাদের প্রথম সংসদ অধিবেশনে পাশ করিয়ে। এই আওয়ামীলীগ যাই করুক না কেন অন্তত এতটুকু কৃতজ্ঞতাবোধ তাদের জানানো দরকার যে তারা এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অনেকগুলো বছর বাদে। তার উপরে দেড় মাসেরও অধিক সময় ধরে শাহবাগসহ স��রা দেশেই অবস্থান করতে দিয়েছে। এখানে কেউ যদি মনে করে জনগনের বিশাল অংশগ্রহনকে ঠেকাতে সরকার ব্যর্থ হবে তাই কিছু করে নাই তাদের বলব হেফাজতের সমাবেশের কথা একটু স্মরণ করে দেখতে। হেফাজত কিছু জিনিসপাতি হলেও সঙ্গে এনেছিল কিন্তু আমরা খালি হাতেই গিয়েছিলাম।
আমরা অন্যকে কৃতজ্ঞতা জানানোর চাইতে বিষোদগার করতে ওস্তাদ এক জাতি। তাই যদি না হতাম তাহলে নিশ্চয়ই এদেশে এতোদিন সময় লাগতো না বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠিত করতে জনতার একমাত্র নেতা তথা জাতির পিতা হিসেবে। অন্যদের বিষোদগার করবার আগে নিজেকে একবার প্রশ্ন করে দেখুন, আজ যদি কেউ আপনার অবদান অস্বীকার করে আপনার বিষোদগার করতে থাকে তখন আপনার নিজের কেমন লাগবে? আওয়ামী সরকার চাইলেই পারতো প্রথম সংসদ অধিবেশনে যুদ্ধাপরাধ বিচার আইন পাশ না করিয়ে অন্য কিছু করতে, তাদের সুবিধা সম্বলিত বিল পাশ করাতে কিন্তু তারা সেটি করে নাই।
তো যে কথাটি বলছিলাম, আজ যারা গণজাগরন পার্ট-২ করছে তারা কারা এটা নিশ্চয়ই নতুন করে বলার অবকাশ নেই। এরা তারাই যাদের রক্তে মিশে আছে সিরাজ শিকদারের রক্ত। এরা তারাই যারা বিপ্লবের মাঝে প্রতিবিপ্লব ঘটায়। সিরাজ শিকদারের কথা নতুন করে কি বলব! সেই পুরানো অপদ্য বচন। যুদ্ধবিদ্ধস্থ একটি দেশে যে নতুন করে জ্বালাও-পোড়াও করতে পারে সে কতটুকু দেশপ্রেমিক তা নিশ্চয়ই আপনাদের বোঝাতে হবে না নতুন করে। সিরাজ শিকদাড় এতো বড় দেশপ্রেমিক যে কিনা যুদ্ধের ময়দানে থেকে কাম-বাসনামুক্ত হতে পারে নাই, নাহলে কি করে সে তৎকালীন এন.এস.আইয়ের প্রধানের বউকে নিয়ে পালালো? কি করে বিবাহিত হওয়া স্বত্ত্বেও গ্রামের এক দরিদ্র কৃষকের মেয়েকে বিয়ে করল? এই যদি হয় কারো আদর্শ তাহলে সে কি মাপের কর্মী হবে তাও নিশ্চয়ই আপনাদের শিখিয়ে বা বুঝিয়ে দিতে হবে না।
যেই গণজাগরন মঞ্চ সারাদেশে সাধারন মানুষের উত্তাল জাগরন সৃষ্টি করেছিল সেই গণজাগরণ মঞ্চকেই বিতর্কিত করতেই এই গণজাগরণ পার্ট-২। আজ যদি মূল গণজাগরন মঞ্চ থেকে তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ না করতো তাহলে এটিই তাদের জন্য চরম এক অস্ত্র হতো কিন্তু ভীষণ আফসোস তথা পরিতাপের বিষয় তাদের সেই অস্ত্র তথা আশাকে সুকৌশলেই ভেঙ্গে দিলো গণজাগরন মূল মঞ্চ। এখন এই গণজাগরন মঞ্চ-২ এর একমাত্র লক্ষ্য হলো বর্তমান সরকার। কেননা তারা ভালো করেই জানে যখন তাদের এই মঞ্চে লোক সমাগম হবে না তখন প্রশাসন থেকে তাদের উঠে যেতে চাপ দেয়া হবে আর ঠিক ঐ মুহুর্তকে কাজে লাগিয়ে তারা বিপ্লব ঘটিয়ে বসবে। তারা প্রতিবাদ করবে, শ্লোগান দিবে, হাতাহাতি করবে, মারামারি করবে এরপর মাথা ফাটিয়ে হাসপাতালে যাবে। মুহুর্তেই তারা তাদের মিডিয়াকে কাজে লাগাবে। সারাদেশে এই ফ্যাসিবাদী, বাকশালী সরকারের চিত্র উন্মোচন করবে! তারা তখন এটাই প্রমান করে ছাড়বে এই সরকার আসলেই মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ী আর ঐ সিরাজ শিকদাড়ই প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী।
স্বাধীনতার ৪২ (বেয়াল্লিশ) বছর পর যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। মনে রাখতে সময়টা নেহায়েত কম নয়। একজন ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠিত হতে এই সময়গুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ঠ। সেখানে জামায়াত-শিবির যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই সময়ে ঠিক একইরকম ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাজাকারগুলো। তারা জানতো একদিন তাদের এইরকম বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে তাই তারা যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েও রেখেছে অনেক আগেই। তাদের প্রস্তুতি কিরকম সেটা যদি দেখাতে বলেন তাহলে প্রথমেই বলব তাদের হাতে একটি রাজনৈতিক সংগঠন আছে, তাদের হাতে একটি ব্যাংক আছে, আছে অনেকগুলো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আর এইগুলোকে তারা কিভাবে কাজে লাগিয়েছে তাদের নিজেদের সুবিধার্থে তা মীর কাশেম আলীর "ক্যাসিডি এন্ড কোং" নামক ল-ফার্মকে দেওয়া অর্থের সুবিশাল পরিমান দেখলেই বুঝতে পারি। এছাড়াও দেশে-বিদেশে তাদের নানারকম অপপ্রচার, নামী-দামী লবিস্ট নিয়োগ ইত্যাদি বেশ ভালোই আন্তর্জাতিক চাপ তৈরী করেছে। এছাড়া আল-জাজিরা নামক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমটির ভুমিকা কেমন তা নিশ্চয়ই ভালো করেই জানেন।
তাই আবারো বলবো সংহতি জানানো আর তার দায় নেওয়া দুটো একই জিনিস না। গণজাগরন মূল মঞ্চকে এমনিতেই লোকাল পাতি চুতিয়ারা বিতর্কিত করেই রেখেছে তার উপরে রেখেছে ন্যাশনাল চুতিয়ারা। এখন সিদ্ধান্ত আপনার গণজাগরন মঞ্চ সংহতি জানিয়েছে সেটিকে কি উদারতা হিসেবে দেখবেন নাকি সেটির গুষ্ঠি উদ্ধার করবেন।
0 notes
sumitchowdhury · 11 years
Photo
Tumblr media
“Hope is stronger than fear  a little hope is a factor but a lot of hope is danger”
0 notes
sumitchowdhury · 11 years
Quote
Hope is stronger than fear a little hope is a factor but a lot of hope is danger
0 notes
sumitchowdhury · 11 years
Text
ধর্মোন্মাদনা বনাম ধর্ম চেতনা
আমরা আল্লাহর চাইতে হুজুরদের বেশী শ্রদ্ধা আর ভয় করি। এইজন্যেই করি যেন উনারা আল্লাহর কাছে ভালো করে আমাদের জন্য দোয়া চেয়ে নেন। অথচ স্বয়ং আল্লাহরই স্পষ্টভাবে নিষেধ থাকা স্বত্ত্বেও আমরা সেটিকে অগ্রাহ্য করে চলেছি।
আমরা ঈশ্বরের চাইতে ব্রাহ্মণদের বেশী শ্রদ্ধা আর ভয় করি। এই জন্যে যেন উনারা ভগবানের পুজোটা ভালভাবে করেন। অথচ ধর্মগ্রন্থে স্পষ্টভাবেই লেখা আছে পুজো নেওয়াটা সম্পূর্ণ ভগবানের ইচ্ছা সেখানে কারোই কোন হাত নেই।
এই কথাগুলো সমভাবে ভান্তে এবং পাদ্রীদের বেলাতেও প্রযোজ্য।
আল্লাহ বলেন আর ঈশ্বর বলেন তাঁদের সকলেরই একটা কথা তাঁরা ভক্তি আর শ্রদ্ধা খুঁজেন। অথচ আমরা এসবের বদলে উনাদের সাথে এক্সচেঞ্জ অফারে ব্যস্ত থাকি। ইয়া মাবুদ আমারে এইটা দিলে আমি এত ওয়াক্ত নামায পড়বো, রোজা রাখব। অথবা ভগবান এইবারের সিজনে উঠতে পারলে প্রত্যেক সপ্তাহে নিরামিষ খাবো, রোজ পুজো দেবো ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
ধার্মিকরা এতো বেশিই ধর্ম মানতে মানতে অন্ধ হয়ে গেছে যে তারা উপরওয়ালার নির্দেশনা ভুলে যায়। যারা পান্ডিত্য অর্জন করে ফেলেন তারা উপরওয়ালার সোল এজেন্ট খুলে বসে পড়েন। এদের এক কথায় খোদার উপর খোদাকারী বললেও কোনই ভুল হবে না। যদি তাই না হয় তাহলে কেন তারা বলে ভোট ওরে দিলে সেটা গুনা হবে, পাপ হবে? উপরওয়ালা কি রাজনীতি করেন?
অথচ এইসব কথা যখন কেউ বলে তখন তারা হয়ে নাস্তিক। তখন তারা হয় মুরতাদ। তখন তাদের জন্য মৃত্যুপরোয়ানা জারী হয়। অথচ ধর্মে স্পষ্টতই বলা আছে তারাই অধার্মিক যারা উগ্র, যারা ধর্মোন্মাদ। আমাদের দেশে জামায়াত কিনবা সম্প্রতিকালের হেফাজতের কর্মসুচি দেখলেই সহজেই অনুমান করতে পারি ধর্মোন্মাদনা কি এবং কাকে বলে।
ইসলাম ধর্ম মতে ওয়াদা বরখেলাফকারীকে কি বলে? তার জন্য কি শাস্তির বিধান আছে? এইগুলোর সাথে মিলিয়ে নিন হেফাজতী মোল্লারা যেদিন শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলেছিল কাফনের কাপড় গায়ে দিয়ে এসেছি দাবী আদায় না হলে শাহাদাৎ বরণ করবো তবুও বাড়ী ফিরে যাবো না। সারাদিন গগনবিদারী চিৎকার মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে থেমে গেলো কি করে? এই বুঝি তাদের ধর্ম চেতনা?
এই কথাগুলো বলার কারণ হলো আমরা ধর্মোন্মাদ হয়ে গেছি সকলেই কম বেশি। কেউ গালি দিচ্ছি ধর্মকে আবার কেউ ধর্ম ধর্ম করে অন্যদের মাথা খারাপ করে তুলছি। এই যে আপনারা যারা শিক্ষিত আছেন আপনারা অন্তত বোঝার চেষ্টা করুন। আমাদের এই দেশে শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আমাদের দেশে স্কুল, কলেজের চাইতে মাদ্রাসার সংখ্যা বেশি। সুতরাং এখানে আপনি যদি ধর্মেরই পিন্ডি চটকাতে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই সেটি দেশের পক্ষে মঙ্গল হবে না! আগে এদেরকে স্কুল, কলেজমুখী করতে হবে তাদের বোঝাতে হবে ধর্ম শান্তির জন্য, উন্মাদনার জন্য নয়। এখানেও এও বলে রাখা ভালো উগ্র আস্তিক এবং উগ্র নাস্তিক উভয়েই সমানভাবেই ধর্মোন্মাদ। শুধুমাত্র এরা মুদ্রার এই পিঠ আর ওই পিঠ। আমাদের সামনে এই মুহুর্তে সবচেয়ে চমৎকার উদাহারন হলো ইরান। নিশ্চয়ই আমরা ইরানের চাইতে বেশি ধার্মিক নই। একইভাবে তাদের চাইতেও বেশি শিক্ষিত নই তারপরেও দেখুন সেখানে উগ্রপন্থী ধর্মীয় নেতা নির্বাচিত না হয়ে সংস্কারপন্থী নেতা নির্বাচিত হয়েছেন।
শেষে এসে এইটুকুই বলবো ধর্ম ধারণ করার জিনিস এটি নিয়ে উন্মাদনা করা কোন ধর্মেই নির্দেশনা নেই। ধর্মকে পুঁজি না করে বরং সেটির প্রকৃত স্বাদ মানুষের মাঝে পৌঁছে দিন। ধর্ম কে মানবে আর কে মানবে না সেটা একজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যক্তি স্বাধীনতা সেখানে কেউ যদি জোর করে ধর্ম পালন করতে চাপিয়ে দেয় তখন ধর্ম আর শান্তির জন্য থাকেনা বরং এটি শোষণের হাতিয়ার হয়ে দাঁডায়।
(*** এই লেখাটি লেখার পুরো সময় জুড়ে লন্ডনি মুফতী হারামজাদার খোমা মনে পড়ছে আর থাবরাইতে ইচ্ছা করছে।)
2 notes · View notes