হয়তো
ঘটনাটা অনেক আজব লাগছে। আজ নিয়ে 6 দিন দরজাটা খোলা। হয়তো বড় কোনো বিষয় না তবুও, এরকম বিশেষত দেখা যায়না। আমি নিজেও তেমন বাইরে যাই না, তাই এখানেই খটকাটা লাগছে। গত ২ মাসে যতবার বাইরে গেছি, সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় দেখি দরজাটা হাট করে খোলা থাকে। এটা কিভাবে সম্ভব? আজকে একটু কৌতূহল হলো, হালকা ঘুরে গেলাম তলাটা থেকে, উঁকি দিয়ে মনে হলো বাসাটা একদম মৃত, যেন কোনোদিন কোনো প্রাণ ছিল না ওর মধ্যে। কেমন একটা অদ্ভুত আভা আসছিল ভেতর থেকে, নিজেকে আটকাতে পারলাম না, ঢুকে পড়লাম।
চৌকাঠের ভেতর পা রাখতেই হঠাৎ নিঃশাস আটকে গেল। টাল হারিয়ে ফেললাম নিজের, কোনোরকমে দেয়াল ধরে নিজেকে সামলালাম। আজব! দরজা-জানালা সব খোলা তবুও ফ্ল্যাটটা কেমন গুমোট হয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন কত বছর এর মধ্যে বাতাস আটকে আছে। একটা অদ্ভুত ভেপসা গরমে ঘাড় ভিজে যাচ্ছিল। আর কি এগোনো ঠিক হবে? নৈতিকতা আর কৌতূহল মনের ভেতরে এক যুদ্ধ ঘোষণা করল। ভেতরে পা বাড়ালাম। ভেতরে মনে হচ্ছে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে ফেলা হয়েছে, ঘামছি আমি, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তবুও এগোচ্ছি।
ঘরের মাঝখানে আসতে যেন বছর কেটে গেল। টেবিলটা ফাঁকা। সুধু একটামাত্র নোটপ্যাড আর রং পেন্সিল পরে আছে। গোটা গোটা অক্ষরে প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা 'হয়তো'। প্যাডটা তুলে নিলাম, বাকি সব পেজ ফাঁকা। কী করছি আমি এখানে? ঢুকলাম কেন? এমন সব প্রশ্ন এখনো মাথায় ঘুরছে। কিন্তু আজ কেন যেন আমার মস্তিষ্ক আর শরীর নিজের নিজের মর্জি চালাচ্ছে। কেউ কারোর কথা শুনছে না।
প্যাডটা জায়গামতো রেখে দিলাম। পাশেই ফ্রিজ, সেটার ওপরেও একটা স্টিকি লাগানো। পড়ার জন্য এগোতেই পিছে থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো, "আপনি?"
মাতাল লাগছে নিজেকে। পা টলছে। থমকে গেলাম। আপনি ডাকটা ভিন্ন শোনালো। 'আপনি কে আর এখানে কী করছেন' রকমের আপনি না, অনেকটা 'আপনি এখন এলেন আপনার অপেক্ষায় ছিলাম' রকমের আপনি মনে হলো শুনে। একবারে পিছে ঘুড়লাম, হালকা টলে গেল শরীর। আজব তো! দরজাটা খেয়াল করলাম না কিভাবে? টেবিলটার যেই পাশে দাঁড়িয়ে আছি তার ঠিক উল্টোপাশে একটা খোলা দরজা, সেটার কাছে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে মায়াবী চোখে তাকিয়ে আছে।
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বোকামত হাসলাম। বোকামত? হয়তো! নিজেকে কেমন বোকা বোকা লাগছে আজকে। বুকের কাছে জামা ভিজে গেছে। হাপাচ্ছি। "সরি"। দরজার দিকে এগোলাম। পিছে থেকে আবার সে ডেকে উঠলো, "কোথায় যাও?"
মেয়েটার দিকে তাকালাম। মাথাটা হালকা কাৎ করা, ঠোঁটের কোন হাসি। যেন মজা পাচ্ছে খুব। তার গায়ের জমকালো শাড়িটার চমক চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। "বাড়ি" অনেক কষ্টে বললাম। মেয়েটা কেমন হাসির শব্দ করে বলল, "বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোন বাড়ি যাচ্ছ শুনি?" আমি পাগল না মেয়েটার মাথা গেছে ভাবার চেষ্টা করলাম। মাথা কাজ করছে না, "মানে?" জিগ্যেস করলাম তাকে।
"বসো, আমি তোমার কফি বানিয়ে আনছি" বলে মেয়েটা রান্নাঘরে ঢুকে গেল। কিছুই বুঝতে পারছি না! হতভম্ব হয়ে চেয়ারে বসে পড়লাম। আবার সেই লেখার দিকে চোখ গেল, 'হয়তো'। টেবিলে ট্রে রাখার শব্দে চমকে উঠলাম। মেয়েটা এক হাত দূরে, সামনের চেয়ারে বসলো। দুকাপ কফি, একটা ব্ল্যাক। ব্ল্যাকটা আমার দিকে বারিয়ে দিয়ে বলল, "তোমার ফ্যাভারেট"। ও কিভাবে জানলো?
এখন হয়তো সবথেকে লজিক্যাল প্রশ্ন হতো যে তুমি কে? অথবা, তুমি আমাকে চেনো কিভাবে? কিন্তু আমি জিজ্ঞেস করলাম ঐ লেখাটার বিষয়।
"ও! ওটা? ওটা তো ভূমিকা।"
"কিসের?"
"আমাদের"
তাকিয়ে থাকলাম মেয়েটার দিকে। সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। কফিতে চুমুক দিলাম। বিস্বাদ। আমার ফেভারেট! উঠে পড়লাম।
"কোথায় যাও?"
"আসছি"
আসছি? এটা তো আমার ফেরার জায়গা না! তবে আসবো কেন আবার? বুক ভরে বাতাস নেয়ার চেষ্টা করলাম। হল না। দরজাটা অনেক দূরে মনে হতে লাগলো। হাটতে শুরু করলাম। পথ শেষ হচ্ছে না, অথচ দরজা ১৫-১৬ হাত এর বেশি দূরে না। পিছে তাকালাম। ঠিক চেয়ারটার পাশেই দাঁড়িয়ে। মেয়েটা তাকিয়ে আছে আমার দিকে, ঠোঁটে সেই হাসিটা। হালকা হাসলাম মেয়েটার দিকে তাকিয়ে। অনেক অদ্ভুত মেয়েটা। হঠাৎ দেখলে কেউ সুন্দরী বলবে না। চশমা পরা, শ্যামলা আর মাঝারি। তবুও হঠাৎ তার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে। সবসময় কেমন একটা মিষ্টি হাসি লেগে আছে ঠোঁটে, মুখ উজ্জল, এই গুমোট ফ্ল্যাটে অনেক বেমানান।
পকেট থেকে ফোনটা বের করলাম। কাউকে ফোন করবো না কী করবো বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ সে হাত থেকে ফোনটা আস্তে করে সরিয়ে নিল। "আজকের দিনটা অন্তত ফোন না ইউস করলে হয়না?"
আমি বরাবরই আবেগ বুঝার বিষয়ে সারেসাঙ্ঘাতিক কাঁচা। তবে ওর চোখের দিকে তাকিয়েই কেমন যেন সব পড়ে ফেলছিলাম। যেন কেউ আমার সামনে একটা বই খুলে রেখে দিয়েছে। অভিমান? অভিমকন দেখেছিলাম কি তার চোখে?
কেন? কিসের এই অভিমান? আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। মাথা ঘুরাচ্ছিল। মনে হলো, আমার জন্যই কি তার চোখ ওরকম ভরে আছে? আমি তো ওকে চিনিও না, চিনি নাকি? হাসলাম আমি, ওর মুখটা কেমন বুজে আছে। খারাপ লাগছিল কেন জানি না। মাথা খালি হয়ে যাচ্ছে আমার। তার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম, টলছি! চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে। তার মুখের দিকে হাত বাড়ালাম। "আচ্............"।
5 notes
·
View notes
বিভীষিকা
চেয়েছিলাম কি তোমায় আজই রাতে?
হয়তো না, তবুও
প্রতি বেগুনী সন্ধ্যায় তোমাকে পাশে চায়।
এক অচিন দেশে তোমাকে নিয়ে হারাবো ঠিকই
তবে তার আগে তোমার চুলের মিষ্টি গন্ধটায়
আরও একবার শুয়ে দেখতে চাই এক ঘুমঘুম বিকেলের আকাশ
নবপ্রেমীর মতো থাকিনা সবুজ বিন্দুর অপেক্ষায়
ভাবিনা কখন যে কেপে উঠবে ফোনটা
তবুও তোমাকে প্রতি স্নিগ্ধ বাদলায় ছুঁতে চাই
বৃষ্টির প্রতিটা বিন্দুতে চাই তোমার উত্তাপ।
তাও আমি থাকি এক অজানা আতঙ্কে
ভাবি হয়তো ছেড়ে যাবে একদিন তুমি
তোমায় ছাড়া যে এই জীবন অবাস্তব
কিন্তু তোমায় বাঁধতেও ভয় করে
বল, পারবে কি তুমি ছুটে চলতে আমার হাত ধরে
উপেক্ষা করে এই বিশ্ববহুল কলরব?
1 note
·
View note
হ্যারি
প্রথম দেখাতেই প্রেম সাগরে ডুব দিইনি
তবে পাগলামিটা শুরু থেকেই ছিল।
প্রতি মুহূর্ত চশমার ফাঁক দিয়ে
তোমার চোখ দেখা আমার অভ্যাস হয়ে দারিয়েছিল
প্রতি মুহূর্ত তোমার বেস্ততায়
নিজেকে ঢুকাতে পারার আসা আমার বুক কুঁড়ে খাচ্ছিল
কিন্তু আমার বইয়ের ছেঁড়া মলাট,
রুক্ষ পোশাকের খসখসানি
প্রতি মুহূর্ত আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিত
আমার দিব্যবহারিত জিবনের ভয়াবহতা।
হারিয়ে জেতাম এক অলীক কল্পনায়
প্রতিদিন, প্রতি শ্বাসে
খুঁজতাম নিজেকে তোমার
প্রখ্যাত অস্তিতের পাশে।
এই নারকীয় বাস্তবে
তুমিই ছিলে আমার একটুকরো সর্গ
হাহাকার করে উঠতাম
এই দমবন্ধ জীবনের মাঝে, হগওার্টসের দেয়ালের আবদ্ধে
তুমি কি সত্তিই পারবেনা হ্যারি?
পারবেনা এক মুহূর্ত আমাকে টেনে নিতে কাছে?
বলবে না কি?
জিনি, তোমাকেই চাই আমি
সারাজীবন আমার পাশে?
2 notes
·
View notes
আক্ষেপের আবদ্ধতায়
চাপা পরেছিল এক উস্রিঙ্খল ঝড়ের আলিঙ্গনে
শেষ নিশ্বাস হয়েছিল ত্যাগ বিষণ্ণ আয়োজনে
কর্কশ দুর্যোগের আহবান যেন
মিলিয়ে ছিল ধূলিকণার কুয়াশায়
তুমিই বলো, ছিলাম কি আমি
ভেসে কোন অসম্ভবনীও বাসনায়?
গুরিবিদ্ধ আমি আজ হোঁচট খাচ্ছি প্রতি পদে
নিজের শবের পাশে থেকে হেসে ফেলি নীরবে
হিসেব মেলেনি কভু, পাতা শেষ হয়ে আসে
ছটফট করে উঠি এক মিষ্টি আদ্রতায়
না জানি কোন এক অজানা পিপাশায়।
অপেক্ষায় চেয়ে থাকি আমি নীল সেই দিগন্তে
বুঝিনি কখনও আবার দেখা হবে এভাবে
শীতলটায় কুঁকড়ে এসেছিলো চর্মসারা
অশ্রুফোঁটায় গেঁথে যাচ্ছিলাম ঘোরকাল উষ্ণতায়।
ফিরে এসো, আছি তোমার অপেক্ষায়
দুজনে মিলে আরও একবার, নতুন করে ভোর সাজাই।
1 note
·
View note
ভূমিনীড়ের দীর্ঘশ্বাস
শান্তির বাণী আওড়ে আজ
বিশৃঙ্খলাই আমার সর্বচ্চ দাবীদার
আসীমচিত্তের কেন্দ্রে ভ্রমণ হয়েছিল শুরু
লোহিতস্নানে শেষ দেখলাম পৃষ্ঠাদির।
ছদ্মবেশী হয়েছি আজ
মারণাস্ত্রের মুখে কোন এক
কেটে যাওয়া ভাস্যের
হারানো সুখে হারানো সেই
পরিচয়পত্রকে কেন্দ্র করে
ছুটেছি আমি আজ লক্ষ মেইল পথ
কখনও সময়ের কাঁটা, কখনও মর্তলোকের কথা
ছিন্ন করেছে আমায় প্রতিটা পদক্ষেপে।
0 notes
আবছায়া
মধ্যরাতের রাখাল হয়ে আজ ছুটেছি আমি
এক অচিন কুয়াশার জঞ্জালের দিকে
যেন এক দিক হারানো ছারপোকা হয়ে ছুটে চলি
দূর আবছা সেই কোন এক মশালের উষ্ণতায়।
তোমার এই চেনা পুরানো মিথ্যের বান্ডিলে
হারাতে মিনতির হাত জড়ো হয় মুখের সামনে
এই ক্ষীণ শব্দদূত কি পারবে তবে
আজ বন্দি করে রাখতে আমাকে?
সেকালের গভীরটা আজ ঠাট্টার ছলে হারিয়ে গেছে।
যতই না পৃষ্ঠা উলটিয়ে দেখি
মায়াজালের গভীর এই গুপ্ত কুঠুরিতে যেন
নিজের ছিবড়েই দুমুঠোয় তুলে ধরতে থাকি
হারিয়েছি পথ হাজার বছরের সময়ে
হাতরেও ঠাহর হয়না ইটমাত্র
তুমি কি ভাবো কাতরে মরছি আমি?
এটা আমারি তৈরি এক নারকীয় সর্গ।
0 notes
It’s so relieving at night when everyone in my house is asleep and I wander around the place like a creeper in a graveyard but then everyone wakes up with the rising sun and it all gets weird again
1 note
·
View note